অ্যাকশন-কমেডি ঘরানার সিনেমা নির্মাণে সিদ্ধহস্ত কোরীয় নির্মাতা। গত কয়েক বছরে এই ধারার বেশ কয়েকটি সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছিল। তেমনই একটি সিনেমা ‘হিটম্যান: এজেন্ট জুন’। এবার এসেছে ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার সিকুয়েল ‘হিটম্যান ২’। গত ২২ জানুয়ারি মুক্তির পরই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে ছবিটি। খবর ভ্যারাইটির

মুক্তির পর থেকেই কোরীয় বক্স অফিসের শীর্ষে ছিল ‘হিটম্যান ২’। এখন ছবিটি শীর্ষস্থান হারালেও এর মধ্যেই যথেষ্ট ব্যবসা করেছে। ২৯ জানুয়ারি মুক্তির অষ্টম দিনে ছবিটি দেখেন ১০ লাখ দর্শক, বছরের প্রথম কোরীয় সিনেমা হিসেবে এ রেকর্ড গড়ল ‘হিটম্যান ২’। ২ ফেব্রুয়ারি মুক্তির ১৩তম দিনে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ লাখ।
প্রথম কিস্তির মতো এ ছবিও নির্মাণ করেছেন চোই উন-সুব। ‘হিটম্যান ২’তে অভিনয় করেছেন কোন সাং-উ, জুন জুন-হো, হাওয়ং উ-সিউল-হে।

ছবির গল্প জুনকে (কোন সাং-উ) নিয়ে। সে কার্টুনশিল্পী। এবারের পর্বে দেখা যাবে শিল্পী হিসেবে সে বেশ যশখ্যাতি পেয়েছে। কিন্তু মুশকিল হয় তাঁর কার্টুন অনুসরণ করে সন্ত্রাসী হামলার পর।

‘হিটম্যান ২’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের আগে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, আগস্টের পর থেকেই বাড়ছে

প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে কোনো একক মাসে দেশে এত প্রবাসী আয় আসেনি। প্রবাসী আয়ের রেকর্ডের এই হিসাব গত বুধবার পর্যন্ত। এরপরের কয়েক দিনের প্রবাসী আয়ের হিসাব যুক্ত হলে মার্চ শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মার্চের শুরু থেকে প্রবাসী আয়ের যে ধারা, সেটিকে বিবেচনায় নিলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় মাস শেষে চূড়ান্ত হিসাবে তা ৩০০ কোটি বা ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। সেটি হলে দেশের ইতিহাসে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার। মার্চে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার করে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসার বাধাগুলো দূর করতে হবে। সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ঈদ সমাগত। এই ঈদ সামনে রেখে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় দেশে পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকে বেছে নিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। তার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ, ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক চলতি ও আর্থিক হিসাবেরও উন্নতি হয়েছে।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলছেন, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী আয়ের গতিধারা অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রবাসী আয় বেশি আসায় রিজার্ভের পতনের ধারা ঠেকানো গেছে। তবে রিজার্ভ এখনো স্বস্তির জায়গায় নেই। প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। ঈদের পরও যেন বর্তমান ধারা ঠিক থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসার বাধাগুলো দূর করতে হবে।

মার্চ মাসের প্রবাসী আয়ের প্রবাহ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার। চার দিন পর অর্থাৎ ১৯ মার্চ ব্যাংকিং চ্যানেল তথা বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আবার ১ থেকে ২২ মার্চ তথা মাসের প্রথম ২২ দিনে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৩ কোটি ডলার, যা ২৪ মার্চ বেড়ে ২৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আর ২৬ দিনে আয় বেড়ে হয় ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি ও দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনেই ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার করে এসেছিল। পরের চার দিনে প্রবাসীরা অর্থ পাঠানো আরও বাড়িয়ে দেন।

চলতি মার্চের প্রথম ২৬ দিনে যে প্রবাসী আয় এসেছে, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩৩ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ৮২ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চের প্রথম ২৬ দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬১ কোটি ডলার।

আগস্টের পর প্রবাসী আয় বেড়েছে

দেশে গত বছরের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সাত মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।

সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

গত ৬৯ মাসের চিত্র

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যভান্ডার ঘেঁটে গত ৫ বছর ৯ মাসের মাসওয়ারি প্রবাসী আয়ের চিত্র পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছে, চলতি মার্চ মাসেই সর্বোচ্চ ২৯৪ কোটি ডলার এসেছে। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৬৩ কোটি ডলার এসেছিল। ২০১৯-২০ সালের পর মোট ২৪ মাস ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে প্রবাসী আয়ের ডলার কেনা এখন অনেকটা কমেছে। এর ফলে ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যেই রয়েছে। এতে পণ্য আমদানিতেও ডলারের দাম কম পড়ছে। ফলে আমদানি খাদ্যপণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি। আগে একসময় প্রতি ডলারের দাম ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

প্রবাসে কর্মী যাওয়া বেড়েছে কি

সরকারি সংস্থা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে বিদেশে সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন ২০২৩ সালে। ওই বছর দেশ থেকে ১৩ লাখের বেশি কর্মী কাজের সন্ধানে বিদেশে গেছেন। এই ২০ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মী বিদেশে গেছেন ২০২২ সালে। ওই বছর ১১ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন কর্মসংস্থানের আশায়। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০ লাখের বেশি কর্মী গেছেন গত বছর। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বিদেশে কর্মী গেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিদেশে যেসব কর্মী গেছেন, তাঁদের বড় অংশই এখন দেশে আয় পাঠাতে শুরু করেছে। এ কারণে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

হুন্ডি ও অর্থ পাচার বন্ধের প্রভাব কী

গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থ পাচার ও হুন্ডি কমেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, এ কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতাও কমে গেছে। জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ের উৎস দেশের ক্ষেত্রে আমরা বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পারছি। মধ্যপ্রাচ্যের বদলে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আয় প্রেরণকারী শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে। উৎস দেশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের এই পরিবর্তনের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তবে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের ক্ষেত্রে আমরা কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীলতা দেখতে পাচ্ছি, এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। সাধারণত ঈদের আগে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পায়। তার সঙ্গে এখন অর্থ পাচার ও হুন্ডির চাহিদা কিছুটা কম থাকায় বৈধ পথে আয় আসা বেড়ে থাকতে পারে।’

রিজার্ভ ও লেনদেন ভারসাম্যে প্রভাব

এদিকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভ পরিস্থিতির মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। যদিও এ সময়ে আমদানি বেড়েছে। বাড়তি এই আমদানির জন্য ডলার জোগান দেওয়ার পরও গত মঙ্গলবার দিন শেষে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের ওপরে রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক চলতি ও আর্থিক হিসাবের উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৬ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারি শেষে সেটি ১৪২ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে চলতি হিসাবে ৪০৭ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সেই ঘাটতি কমে ১২৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ