এসির তাপমাত্রা সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ
Published: 13th, April 2025 GMT
দেশের সব অফিস আদালত ও প্রতিষ্ঠানে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার ওপর রাখতে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে পরিপত্র জারি করে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এই পরিপত্র পরিপালন করে এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের অভীষ্ট তাপমাত্রা নির্ধারণ রেখে সরকারের জারি করা পরিপত্র পরিপালন করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে জারি করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের অভীষ্ট তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নির্ধারণের পরামর্শ পাওয়া গেছে।
রমজান, গ্রীষ্মকাল ও সেচ মৌসুম একই সময়ে শুরু হবে। সেজন্য এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। শীতাতপ থার্মোস্ট্যাট নির্ধারিত তাপমাত্রায় ব্যবহারের মাধ্যমে এ চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে সকল সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের তাপমাত্রা ২৫° সেলসিয়াস বা তার উপরে নির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হলো।
ঢাকা/এনএফ/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র ত র পর র পর প
এছাড়াও পড়ুন:
স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ মঙ্গলবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে তরুণ ছাত্র, জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকেরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করব। এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আবার নতুন করে শপথ নেব। এবং এটা আমরা প্রতিবছর করব, যাতে স্বৈরাচার আর যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মাসব্যাপী এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল, তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, জনতার এক জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল—ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থাণের স্বপ্ন ছিল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ—এই মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার যে অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি, এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তাৎক্ষণিক তার যে লক্ষ্য ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন—নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।’
স্বৈরাচার যেন আর কখনো ফিরে আসতে না পারে, সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এই সময়টা উদ্যাপন করব, যাতে পরবর্তী সময়ে আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়। আমরা প্রতিবছর এটা করব, যাতে স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলেই তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তার বিনাশ করতে পারি।’
সেটার জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।’
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে জুলাই গণ–অভ্যুত্থাণে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের—যাঁরা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।’
জুলাইকে ঐক্যের মাসে পরিণত করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। দেশবাসীর উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা আজ মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুই স্মরণ নয় বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সব শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আমরা চাই, এই জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য—জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এই সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি আপনাদের আহ্বান জানাই—আসুন, এই জুলাই মাসকে পরিণত করি গণজাগরণের মাসে; ঐক্যের মাসে।’
জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য সর্বমুখী হোক, অটুট হোক আমাদের এই অনুষ্ঠানমালার লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বক্তব্য রাখেন।