প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার সুপারিশ
Published: 5th, May 2025 GMT
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, সবার জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ, রেফারাল ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে। এটা স্বাস্থ্যের বর্তমান বাজেট দিয়ে সম্ভব। তাই, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এছাড়াও দেশের যে কোনো হাসপাতালে অস্বচ্ছল ২০ শতাংশ রোগী যেন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার কমিশনপ্রধান এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশসমূহ:
স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটির জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতি
স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি বিভাগে লাইন প্রমোশনের জন্য পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে 'সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস'-এ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ
নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ও সরেজমিনে তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন
সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার পরিবর্তে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ এবং দালালদের দৌরাত্ম্য অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বার্থে ভারসাম্য রেখে 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন' প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরিগুলোর মান গ্রহণের জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।
ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি
সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, আইএইচটি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সদর জেনারেল হাসপাতালসমূহে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা
গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব প্রদান এবং সরকার সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করার সুপারিশ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর র প রস ত ব র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনছে সরকার
দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ নানা ধরনের কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এসব রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলেও প্রায় ৭০ শতাংশ তা নিতে পারছেন না। এই সংকট নিরসনে এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনতে যাচ্ছে সরকার। কিডনি প্রতিস্থাপনেও বড় বাধা আইনি জটিলতা ও দাতা সংকট। এজন্য আইন সংশোধনেও কাজ চলছে। কিডনির চিকিৎসা সহজকরণ ও ব্যয় কমাতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
শনিবার রাজধানীর মিরপুর-২ এ অবস্থিত বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে শুরু হয়েছে তিন দিনের ‘বালাদেশ-কোরিয়া ফ্রেন্ডশিপ সম্মেলন-২০২৫’, যা চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত। সেখানে ‘কিডনি প্রতিস্থাপন’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নিয়ে এসব তথ্য জানান বক্তারা।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, কিডনি রোগীর চিকিৎসায় এক হাজার ডায়ালাইসিস মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে যে হারে কিডনি রোগী বাড়ছে, তাতে হাজার যন্ত্র স্থাপনের পরেও সব রোগীর ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। এজন্য সরকারি সংস্থার উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে কিডনি রোগের সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এছাড়া দেশে কতজন কিডনি রোগী আছে জানতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিডনি রোগী নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (এনআইকেডিউ)।
তিনি আরও বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনে আইনি জটিলতা রয়েছে। এটি সংশোধন করা হচ্ছে, আপনারা চাইলে এ বিষয়ে মতামত দিতে পারেন।
বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য দেশে অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। সেটি গড়ে উঠলে শুধু কিডনি নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ হবে। কিডনি ডায়ালাইসিসের ২৫০ সেন্টার রয়েছে দেশে, এর ৮০ শতাংশ মেশিন ঢাকায়। সরকারি যে ডায়ালাইসিস মেশিন কেনা হচ্ছে, তা যদি ঢাকার বাইরে স্থাপন করা যায়, তাহলে সারাদেশে ডায়ালাইসিস সেবা সহজ হবে। কিডনি চিকিৎসায় দক্ষ জনবলেরও অভাব আছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা.রফিকুল আলম বলেন, সারাবিশ্বেই কিডনি প্রতিস্থাপন ডোনার সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ডোনার সংকট মোকাবেলা করতে বলছে। এ জন্য প্রদত্ত আইনে সংশোধন আনতে হবে। আবেগপ্রবণ হয়ে অনেকে কিডনি দিতে চান, কিন্তু আমাদের আইনে বাধা থাকার কারণে তা সম্ভব হয় না। এজন্য নিজেদের নীতিমালা তৈরি করা জরুরি।
তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনে অর্থ সংকট বড় সমস্যা, এ জন্য আমাদের যাকাত ফান্ডের মতো আরও কিছু ফান্ড তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের বাৎসরিক চাহিদা আনুমানিক পাঁচ হাজার। কিন্তু গড়ে বছরে প্রায় ১২০ জন ব্যক্তি তাদের আত্মীয়দের নিকট থেকে প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনির ব্যবস্থা করতে পারেন। এখন ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিডনি নিয়েও প্রতিস্থাপন করতে পারলে সংকট কিছুটা কমে যাবে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কায়ও তা শুরু হয়েছে।