ডিবি পরিচয়ে ট্রাক ছিনতাই: ৫৭ ব্যারেল পাম তেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪
Published: 6th, May 2025 GMT
ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের বেজগাঁও এলাকা থেকে তেলবাহী ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ট্রাকসহ ৫৭টি তেলের ব্যারেল উদ্ধার ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন- মো. আলম (৩২), নূর আলম ওরফে আলমগীর হোসেন (৩৮), মো.
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আনিসুর রহমান শ্রীনগর থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার কাঁচপুর মাল্টি ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলমিল থেকে ৭৫ ড্রাম পাম তেল (মূল্য আনুমানিক ২১,৭৫,০০০ টাকা) নিয়ে একটি ট্রাক ঝিনাইদহের উদ্দেশে রওনা দেয়। ট্রাকটি রাত ৯টার দিকে শ্রীনগরের বেজগাঁও যাত্রী ছাউনির কাছে পৌঁছলে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে থামায় পিকআপে আসা ৬ জনের একটি ডাকাত দল। তারা চালক মো. রাসেল (২২) ও হেলপার মো. আল-আমিন হোসেনকে (২৩) হাতকড়া পড়িয়ে পিকআপে তোলে এবং জোরপূর্বক নেশাজাতীয় জুস খাইয়ে অচেতন করে ফেলে। এরপর চালক ও হেলপারকে ছনবাড়ী-মুন্সীগঞ্জ সড়কের পাশে ফেলে ট্রাকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
ট্রাকের মালিক জিপিএসের মাধ্যমে ট্রাকটির গতিবিধি লক্ষ্য করে রাত ১টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেন। খবর পেয়ে শ্রীনগর থানা পুলিশ ট্রাকচালক ও হেলপারকে উদ্ধার এবং কল্লিগাঁও বড় জামে মসজিদের পাশে রাস্তার কাছে ১৮ ড্রামভর্তি তেলসহ ট্রাকটি জব্দ করে। এ ঘটনায় ২ মে শ্রীনগর থানায় মামলা করা হয়।
শ্রীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, মামলা করার পর জেলা পুলিশের একাধিক ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তথ্যপ্রযুক্তি, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৪ মে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার মেসার্স জামাল এন্টারপাইজ অ্যান্ড ভ্যারাইটিজ স্টোর থেকে ৩৫টি ড্রামভর্তি তেল ও ২২ খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার করে। এছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের হামলা: বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায় মুজাফফরাবাদের বাসিন্দাদের
পাকিস্তানের যে কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত, তার মধ্যে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে আগে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন ঘুমাচ্ছিলেন; বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়।
বিস্ফোরণের পর স্থানীয়রা তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন।
মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদের পাশে বসবাস করেন মোহাম্মদ ওহিদ। এই মসজিদটি ভারত হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে বলে দাবি করেছেন ওহিদ।
বিবিসি লিখেছে, ওহিদ বলেন, “আমি গভীর ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ আমার ঘর কাঁপিয়ে দেয়।”
“আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হই, দেখি অন্যরাও একইভাবে ছুটে বের হচ্ছে। কী ঘটছে, তা বোঝার আগেই আরো ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত হানে, চারদিকে আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।”
ওহিদ জানান, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “শিশুরা কাঁদছে, মহিলারা দিগদ্বিদিক ছুটছেন নিরাপদ জায়গার খোঁজে। আমরা সবাই আতঙ্কিত, জানি না কী করব। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, চারপাশে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে আছে।”
ওহিদ বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত, তবে তিনি বুঝতে পারছেন না কেন একটি মসজিদ লক্ষ্যবস্তু করা হলো।
“এটা ছিল একটি সাধারণ মহল্লার মসজিদ, যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। এর চারপাশে কখনো কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি,” যোগ করেন ওহিদ।
বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে অবশ্য বলা হয়েছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের ৫টি স্থানে আঘাত করেছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, ৭ মে গভীর রাতে ভারতের এই হামলায় পাকিস্তানের অন্তত তিনজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও হামলা পরিচালিত হচ্ছে।
ভারত নিজস্ব আকাশসীমা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
বিবিসি লিখেছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তাদের দেশের জিও টিভিকে বলেছেন, “ভারত তাদের নিজস্ব আকাশসীমা থেকে পাকিস্তানের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “এই হামলাগুলো বেসামরিক এলাকায় আঘাত হেনেছে। ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে’ বলে ভারত যে দাবি করেছে, সেটি মিথ্যা।”
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। এই হামলায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয় ইসলামাবাদ। এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তাতে সমর্থন দেয় ভারতের সব রাজনৈতিক দল।
সেই থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা করল ভারত। এখন পাকিস্তান কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় বা জবাব দেয়, তারপর ওপর নির্ভর করছে বাকিটা।