ভারত-পাকিস্তান সামরিক লড়াই বন্ধ হওয়ায় স্বস্তির হাওয়া দিচ্ছে উপমহাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মতো বিসিবি কর্মকর্তারাও এ মুহূর্তে খুশি। কারণ, বিসিবিকে পাকিস্তান সফর বাতিলের মতো কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে হলো না। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) থেকে পরিষ্কার কোনো বার্তা না পাওয়ায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত ধোঁয়াশার মধ্যে ছিল বিসিবি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিসিবির কাছ থেকে কয়েক দিন সময় চেয়ে নিয়েছিল তারা।
বিসিবি কৌশলে পিসিবিকে সহযোগিতা করার পথ করে দেয় আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি২০ সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত বহাল রেখে। এ সফর নিয়ে বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই বিশ্বকে স্বস্তি বার্তা দিতে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় ভারত-পাকিস্তান। উভয় দেশে সামরিক হামলা বন্ধ হওয়ার মুহূর্ত থেকে ক্রিকেট মাঠে ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সিরিজগুলো নির্ধারিত সময়ে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে পাকিস্তান সফর হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রতিশোধের কথা বলে পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও জবাব দিতে দেরি করেনি। পাল্টা হামলা চালালে আইপিএল এবং পিএসএল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশ দুটি থেকে বিদেশি ক্রিকেটাররা দেশে ফিরে গেছেন। পাকিস্তান থেকে গতকাল ঢাকায় ফেরেন বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রিশাদ জানান, পাকিস্তান থেকে দুবাই পৌঁছানোর পর জেনেছেন ভারত ইসলামাবাদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। এ খবরে ভীত হয়ে পড়েছিলেন তারা। বিসিবি কর্মকর্তারাও উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি হওয়া ভালো খবর। এখন সিরিজটা হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় কোনো জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে না।’ তবে নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজটি মাঠে গড়াবে কিনা সে ব্যাপারে জানা যায়নি। পাকিস্তানের জিও টিভির ক্রীড়া সাংবাদিক সোহেল ইমরান বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত স্বস্তির। এখন বলা যায় পাকিস্তানেই সিরিজ খেলতে পারবে বাংলাদেশ। পিএসএল শেষ হওয়ার আগে না পরে সিরিজটি হবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার আছে।’
গতকাল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও সমঝোতা চুক্তির জন্য উভয় দেশ আজ বৈঠক করবে। শর্ত মেনে চুক্তি সম্পন্ন হলেই কেবল স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে দেশ দুটিতে। এশিয়া কাপ আয়োজন এবং বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড–বিসিসিআই। পাকিস্তানে স্বস্তি নিয়ে খেলতে যেতে পারবে বাংলাদেশ। যদিও বিসিবি এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে চায় না। দুই দিন অপেক্ষা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পক্ষে তারা।
গতকাল বিকেলে এক বিবৃতিতে বিসিবি জানায়, ‘খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের নিরাপত্তাই বিসিবির কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে সফরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট ও দলের সর্বোচ্চ স্বার্থ দেখবে।’
এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় পাবে বিসিবি-পিসিবি। কারণ, ১৭ ও ১৯ মে আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ১৪ মে দুবাই যাবেন লিটন কুমার দাসরা। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মধ্যদিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং আগের সূচি ঠিক থাকলে ২০ মে পাকিস্তান যাবেন তারা। ২৫ মে থেকে ৩ জুন ফয়সালাবাদ ও লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ টি২০ সিরিজ খেলবে দুই দল।
বিসিবি কর্মকর্তারা জানান, সবকিছু নির্ভর করবে পিসিবি কত দ্রুত নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারছে তার ওপর। তবে দেশটির আকাশপথ খুলে যাওয়ায় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়তো কঠিন হবে না।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিপ্লব বদলালেন উত্তরবঙ্গের হালকা প্রকৌশলশিল্প
বগুড়ার প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী বিপ্লব করোনা মহামারির সময় তৈরি করেন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। বগুড়া থেকে বিধিনিষেধের সময়ে রাত জেগে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরি করেন তিনি। দেশি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নিজের মেধা দিয়ে এক মাসেই বহনযোগ্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরি করেন মো. মাহমুদুন্নবী। এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মাধ্যমে ঘরের বাতাস থেকেই প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরি করা যায়। এটি ব্যবহারও বেশ সহজ। একটি রেগুলেটরের মাধ্যমে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে যন্ত্রটি। ৩০ কেজি ওজনের কম এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যেকোনো হাসপাতালে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। খরচ পড়েছে ৭০ হাজার টাকা।
১৯৯৬ সালে বগুড়া পলিটেকনিকে শিক্ষকতার পাশাপাশি মো. মাহমুদুন্নবী রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন। তার ওয়ার্কশপেই তিনি বন্যা-পূর্ব সতর্কতার একটি বিশেষ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই যন্ত্র ব্যাটারি ও সৌর প্যানেলে চলে। মাহমুদুন্নবীর বন্যা-পূর্ব সতর্কীকরণ যন্ত্র ২০১৮ সালে বগুড়ায় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবকের পুরস্কার পায়। মাহমুদুন্নবীর অন্যান্য উদ্ভাবনের মধ্যে বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড, রোগীর শরীরে পুশ করার স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম, জলজ প্রাণীর জন্য পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ওয়াটার অ্যারোয়েটর, করোনা প্রতিরোধে অটোমেটিক স্যানিটাইজিং মেশিন, প্যারালাইজড রোগীর ব্যবহারের জন্য অটোমেটিক হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ডিজিটাল ডোর লক, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমের জন্য লক রিং টুলস অন্যতম। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ডে (আইসিইউ) ব্যবহারের জন্য ভেন্টিলেটর মেশিন প্রস্তুত করছেন তিনি।
ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় ওয়ার্কশপ হিসেবে গড়ে তুলেছেন কাঁকন রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপকে। মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘এখন উত্তরবঙ্গে অনেক বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সমস্যা ও ত্রুটি মেরামতের জন্য বিদেশ থেকেও প্রকৌশলী আনা হতো। সেই সমস্যা সমাধানে আমরা স্থানীয় প্রকৌশলীরা কাজ করছি।’ আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার ২০২৩–এ মো. মাহমুদুন্নবী সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন।