টানা কয়েক দিন ধরে প্রাণঘাতী সংঘাতের পর অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছেছে ভারত-পাকিস্তান। গতকাল শনিবার দুই দেশের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এ উত্তেজনার শুরু হয় গত ২২ এপ্রিল, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন।

ভারত কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের সঙ্গে হামলাকারীদের সংযোগ আছে বলে অভিযোগ করে। পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে পেহেলগামে হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। ওই ঘটনার জেরে পাকিস্তানের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, পাকিস্তানের ৬টি জায়গায় ২৪টি হামলা হয়েছে। হামলায় ৩৩ বেসামরিক পাকিস্তানি নাগরিক নিহত ও ৭৬ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে (এলওসি) পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ করেছে। এতে ১৬ ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কাশ্মীরের অবন্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কাপুরথালা, জলান্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, ভাতিন্ডা, চণ্ডীগড়, নাল, ফালোদি, উত্তরলাই, ভুজসহ ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর অনেকগুলো স্থাপনা লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল পাকিস্তান। তবে এই হামলা প্রতিহত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

জবাবে পাকিস্তান ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে। নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়েও (এলওসি) ভারতের একাধিক তল্লাশিচৌকিতেও হামলা করেছে দেশটি।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান গতকাল একটি অস্ত্রবিরতিতে উপনীত হয়। বিশ্বনেতারা তাদের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। গুতেরেসের বরাতে এক বিবৃতিতে তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, মহাসচিব একে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তাকে ফোন করেছেন এবং পাকিস্তানের সংযম প্রদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি সংকটময় সময়ে পাকিস্তানের দায়িত্বশীল পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, উভয় দেশকে সংলাপ প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধবিরতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। আমরা উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সরাসরি ও কার্যকর সংলাপে বসার আহ্বান জানাই।’

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর দুই দেশের মধ্যে অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। দেশটির বৈদেশিক অধিদপ্তরের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতিকে দারুণভাবে স্বাগত জানাই। আমি উভয় পক্ষকে এটি বজায় রাখার আহ্বান জানাই। সবার স্বার্থেই উত্তেজনা প্রশমন করা জরুরি।’

গতকাল শনিবার অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর পাকিস্তান আকাশসীমা খুলে দেয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট র স ব গত জ ন কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে ভারতের পাঠানো ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

ভারতের পাঠানো ৭৭টি ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করেছে পাকিস্তান। বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাতে এসব ড্রোন পাঠানো হয়েছিল। এগুলো সবই ইসরায়েলের তৈরি হারপ ড্রোন।

আজ শুক্রবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ২৯টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও শুক্রবার ভোরে ভারতের আরও ৪৮টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও শুক্রবার ভোরে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর গোলাবর্ষণে আরও পাঁচজন সেবমারিক নাগরিক নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন।

এলওসির হাজিরা, ফরোয়ার্ড কাহুটা ও খুরাত্তা এলাকায় ভারত গোলাবর্ষণ করেছে। এতে হতাহতের পাশাপাশি অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর গোলাবর্ষণের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা গোলাবর্ষণ করেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, এলওসিতে যেকোনো আগ্রাসনের দ্রুত ও কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। ভারতের দাবি, এ হামলার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পাকিস্তান তা দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দিয়েছে। এরপর দুই দেশ পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপ নেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে।

এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার দিবাগত (৭ এপ্রিল) রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ভারতের দাবি, তারা সশস্ত্রগোষ্ঠীর ঘাঁটি নিশানা করে হামলা চালিয়েছে। কোনো সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি।

আরও পড়ুনভারতের পাঠানো ৩০টি ইসরায়েলি হরপ ড্রোন ধ্বংস করার দাবি পাকিস্তানের৩ ঘণ্টা আগে

পাকিস্তান বলেছে, হামলায় ৩১ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হয়েছেন। মসজিদ, নীলম-ঝিলম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের দাবি, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল। তবে মার্কিন দুই কর্মকর্তার মতে, পাকিস্তান অন্তত ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার একটি রাফাল।

বৃহস্পতিবার ভোররাতেও দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এ ছাড়া এলওসিতে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ হারপ ড্রোন তৈরি করে থাকে। ড্রোনগুলো ঘুরে ঘুরে লক্ষ্য খুঁজে বের করে এবং অপারেটরের নির্দেশ পেলে লক্ষ্যবস্তুর ওপর সরাসরি আঘাত হানে। আঘাত হানার সময় ড্রোনগুলো নিজেকেও ধ্বংস করে দেয়।

আরও পড়ুনমুরিদকেতে ভারত কি ‘সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি’তে হামলা চালিয়েছে, নাকি মসজিদে৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে ভারতের পাঠানো ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের