জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন, তা যৌক্তিক বলেই আমরা মনে করি। তবে এর অর্থ এই নয় যে তাঁদের সব দাবি রাতারাতি বাস্তবায়ন করা যাবে। কিন্তু যেসব দাবি আগেই বাস্তবায়ন করা যেত, সেগুলোও ফেলে রাখার কারণেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়েছেন, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বুধবারের কর্মসূচিতে।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে শিক্ষার্থীদের লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন।
সংবাদমাধ্যমে যেসব ছবি ও খবর এসেছে, তাতে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আচরণ ছিল বেপরোয়া। তাঁদের আঘাতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও আহত হয়েছেন। বাধার মুখেও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি থেকে সরে আসেননি এবং বৃহস্পতিবারও তঁারা রাজপথে ছিলেন। এটা আন্দোলনের প্রতি তাঁদের দৃঢ়তার প্রতিফলন বলা যায়।
কিন্তু তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম যখন সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসেন, তখন তাঁর প্রতি পানির বোতল ছুড়ে মারার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একজন উপদেষ্টা যখন তাঁদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করতে আসেন, তাঁর প্রতি ন্যূনতম সৌজন্যবোধ প্রকাশ করা উচিত। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চেষ্টার ঘাটতি আছে। দাবিদাওয়া কতটা পূরণ করা যাবে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা। এনসিপির একজন নেতা খেদের সঙ্গে বলেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, তাঁরা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চান না বলে ছাত্র উপদেষ্টাদের সেখানে যেতে হয়।
আগে থেকেই যমুনার সামনে সভা–সমাবেশের ওপর ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু দিন কয়েক আগে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একাধিক সংগঠন যমুনার সামনে সমাবেশ করলেও সরকার বাধা দেয়নি। দুই সংগঠনের সরকারের দ্বিমুখী নীতি শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে নিঃসন্দেহে। আইন সবার প্রতি সমান হতে হবে।
এর চেয়েও উদ্বেগজনক হলো, রাজপথের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত সরকারের নীতিনির্ধারকদের হুঁশ না হওয়া। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমান সরকারের আমলে গত নভেম্বরে তাঁরা সচিবালয় ঘেরাও করেছিলেন। সে সময়ও সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ছয় মাসেও সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো পেশার মানুষ হোন, তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকারকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। কেবল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, কুয়েটসহ আরও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা চলছে।
আমরা আশা করব, সরকার অবিলম্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করবে। সব সমস্যা একসঙ্গে সমাধান করতে না পারলেও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস অনুমোদন কিংবা ছাত্রাবাসগুলো দখলমুক্ত করার কাজটি কঠিন হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। সেই সরকারের অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তি হল দখল করেছিলেন বলে আন্দোলন সফল হয়নি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর বলপ্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করা হয়েছিল। এখন তো তারা ক্ষমতায় নেই। তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হওয়া হলগুলো উদ্ধার হবে না কেন?
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। বলপ্রয়োগ সমস্যাকে আরও জটিল করতে বাধ্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র উপদ ষ ট সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবছর ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি’ দেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর হাতে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তির’ চেক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হয়।
প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে বৃত্তির চেক নেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের হাবীবা আক্তার, তেজগাঁও সরকারি কলেজের এস এম আবু তালেব ও ঢাকা কমার্স কলেজের খন্দকার মাহমুদুল হাসান।
এ বৃত্তির অধীনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজ ও ইনস্টিটিউটের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের এককালীন সহায়তা দেওয়া হবে। এ বছর ৭২৫টি প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৪০ জন শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পেয়েছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মোট শিক্ষার্থী ৩১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি, যা দেশে উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ আছে ২ হাজার ২৫৭টি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৩২ জন শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন।
আজ বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, ‘এক বছর আগে তরুণেরা দেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের ফলে আমরা, সমগ্র জাতি, অধিকারবঞ্চিত প্রজা থেকে নতুন করে অধিকারভোগী নাগরিকে পরিণত হতে পেরেছি।’
সি আর আবরার আরও বলেন, ‘আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে স্বৈরাচার আর কখনো এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পালনের এ দিনে আমরা সেই জাতীয় প্রত্যাশাকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করি। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের শুধু একটি নতুন দেশ দিয়েছে তা নয়, নতুন স্বপ্নও দেখিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানউল্লাহ, সহ–উপাচার্য লুৎফর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ এ টি এম জাফরুল আযম উপস্থিত ছিলেন।