ক্লাবগুলোর জাতীয় স্বার্থে সচেতন হওয়া উচিত
Published: 17th, May 2025 GMT
ফিফার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানান সমস্যার সামনে ছিল বাফুফের নির্বাচিত কমিটি। নির্বাচনের ছয় মাস পর অনেক সমস্যার সমাধান যেমন হয়েছে, ফুটবলের উন্মাদনা দেখে পৃষ্ঠপোষকরাও এগিয়ে এসেছে। দেশের ফুটবলের নানান বিষয় নিয়ে বাফুফে সহসভাপতি এবং ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। তা শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: বাফুফের অভ্যন্তরীণ ফাইন্যান্সিয়াল কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে কী করেছেন?
জাহেদী: ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপির নেতৃত্বে যে অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি আছে, তারা এটি নিয়ে কাজ করছে। ফেডারেশনের কাছে যেমন অনেকেই টাকা-পয়সা পাবে, তেমনি করে ফেডারেশনও অনেকের কাছে টাকা পায়। অনেক স্পন্সর তাদের পুরো টাকা দেয়নি। অনেক ভেন্ডর তাদের পুরো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করেননি। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে আমরা হয়তো তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
সমকাল: ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ফুটবল নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
জাহেদী: ডেভেলপমেন্ট কমিটিতে আমরা কয়েকটা এরিয়াতে কাজ করছি। একটা হলো বয়সভিত্তিক ফুটবলকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। নজর দিতে চাই স্কুল ফুটবলের দিকে। এটি সরকারও চাচ্ছে। আমরা উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে স্কুল ফুটবল আয়োজন করব। স্কুল ফুটবলটা যদি ঠিকমতো চালু করতে পারি, তাহলে সারাদেশেই তরুণ, ছাত্রদের ভেতরে ফুটবল নিয়ে একটা অনুপ্রেরণা তৈরি হবে। আমরা সম্প্রতি ২শর ওপর একাডেমিকে তালিকাভুক্ত করেছি। তাদের ভেতরে ১৭টিকে ডাবল স্টার দেওয়া হয়েছে; কারণ তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক ভালো। আমাদের উদ্দেশ্য হলো– প্রতিটি জেলা-উপজেলায় যেখানে একাডেমিগুলো আছে সেগুলোকে সহায়তা করা। এ কাজগুলো যদি আমরা সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, আগামী ছয় মাস বা এক বছর পরে ফুটবলে চোখে পড়ার মতো দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে।
সমকাল: ফুটবলে বয়স চুরিটা বড় সমস্যা। এটি রোধে কী পরিকল্পনা নিয়েছেন আপনারা?
জাহেদী: এটি (বয়স চুরি) নিয়ে নির্বাহী এবং ডেভেলপমেন্ট কমিটিতেও কথা বলেছি আমরা। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না এবং আমরা এটিকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেব না। যে কারণে আমরা আমাদের কম্পিটেন্ট মেডিকেল টিম গঠন করতে যাচ্ছি। যারা একদম বৈজ্ঞানিকভাবে বয়স নির্ধারণ করবে এবং সেটি আমরা কঠোরভাবে অনুসরণ করব।
সমকাল: জাতীয় দলের প্রয়োজনে ক্লাবগুলো ফুটবলার ছাড়েন না। এই সংস্কৃতিটা পুরোনো।
জাহেদী: আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্ষেত্রে যোগাযোগে কোনো গ্যাপ ছিল না। অনেক আগে থেকেই ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিকেএসপির দুই ফুটবলারের পরীক্ষা ছিল। বসুন্ধরা কিংস তারা প্রথমে বলেছিল তাদের দুই ফুটবলারকে দেবে। পরে যখন আমাদের প্রয়োজন ছিল তারা ফুটবলার ছাড়েনি। আমার কথাটা হলো ক্লাব এবং জাতীয় দল সেটি বয়সভিত্তিক হোক বা জাতীয় দল হোক এখানে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং বিধি থাকা দরকার। যাতে ক্লাবও জানবে জাতীয় পর্যায়ে দায়িত্ব কতটুকু, ফেডারেশনও জানবে যে যখন জাতীয় দল গঠন করব তখন ক্লাব থেকে আমরা কী ধরনের সহযোগিতা পেতে পারি। আমি যেটি মনে করি, ক্লাবে যারা কর্মকর্তা আছেন, তাদের নিশ্চয় জাতীয় দলের প্রতি, দেশের সুনামের প্রতি যথেষ্ট কমিটমেন্ট আছে, তারাও এটি চান। এই কমিটমেন্টের একটু ঘাটতি আমি দেখেছি। আমি বিশ্বাস করি আগামীতে ক্লাবগুলো জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে আরও সচেতন এবং আরও উদার হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল ফ টবল র আম দ র সমক ল সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।