ফিফার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানান সমস্যার সামনে ছিল বাফুফের নির্বাচিত কমিটি। নির্বাচনের ছয় মাস পর অনেক সমস্যার সমাধান যেমন হয়েছে, ফুটবলের উন্মাদনা দেখে পৃষ্ঠপোষকরাও এগিয়ে এসেছে। দেশের ফুটবলের নানান বিষয় নিয়ে বাফুফে সহসভাপতি এবং ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। তা শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: বাফুফের অভ্যন্তরীণ ফাইন্যান্সিয়াল কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে কী করেছেন?
জাহেদী:
ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপির নেতৃত্বে যে অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি আছে, তারা এটি নিয়ে কাজ করছে। ফেডারেশনের কাছে যেমন অনেকেই টাকা-পয়সা পাবে, তেমনি করে ফেডারেশনও অনেকের কাছে টাকা পায়। অনেক স্পন্সর তাদের পুরো টাকা দেয়নি। অনেক ভেন্ডর তাদের পুরো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করেননি। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে আমরা হয়তো তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

সমকাল: ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ফুটবল নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
জাহেদী:
ডেভেলপমেন্ট কমিটিতে আমরা কয়েকটা এরিয়াতে কাজ করছি। একটা হলো বয়সভিত্তিক ফুটবলকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। নজর দিতে চাই স্কুল ফুটবলের দিকে। এটি সরকারও চাচ্ছে। আমরা উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে স্কুল ফুটবল আয়োজন করব। স্কুল ফুটবলটা যদি ঠিকমতো চালু করতে পারি, তাহলে সারাদেশেই তরুণ, ছাত্রদের ভেতরে ফুটবল নিয়ে একটা অনুপ্রেরণা তৈরি হবে। আমরা সম্প্রতি ২শর ওপর একাডেমিকে তালিকাভুক্ত করেছি। তাদের ভেতরে ১৭টিকে ডাবল স্টার দেওয়া হয়েছে; কারণ তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক ভালো। আমাদের উদ্দেশ্য হলো– প্রতিটি জেলা-উপজেলায় যেখানে একাডেমিগুলো আছে সেগুলোকে সহায়তা করা। এ কাজগুলো যদি আমরা সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, আগামী ছয় মাস বা এক বছর পরে ফুটবলে চোখে পড়ার মতো দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে।

সমকাল: ফুটবলে বয়স চুরিটা বড় সমস্যা। এটি রোধে কী পরিকল্পনা নিয়েছেন আপনারা?
জাহেদী:
এটি (বয়স চুরি) নিয়ে নির্বাহী এবং ডেভেলপমেন্ট কমিটিতেও কথা বলেছি আমরা। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না এবং আমরা এটিকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেব না। যে কারণে আমরা আমাদের কম্পিটেন্ট মেডিকেল টিম গঠন করতে যাচ্ছি। যারা একদম বৈজ্ঞানিকভাবে বয়স নির্ধারণ করবে এবং সেটি আমরা কঠোরভাবে অনুসরণ করব। 

সমকাল: জাতীয় দলের প্রয়োজনে ক্লাবগুলো ফুটবলার ছাড়েন না। এই সংস্কৃতিটা পুরোনো।
জাহেদী:
আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্ষেত্রে যোগাযোগে কোনো গ্যাপ ছিল না। অনেক আগে থেকেই ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিকেএসপির দুই ফুটবলারের পরীক্ষা ছিল। বসুন্ধরা কিংস তারা প্রথমে বলেছিল তাদের দুই ফুটবলারকে দেবে। পরে যখন আমাদের প্রয়োজন ছিল তারা ফুটবলার ছাড়েনি। আমার কথাটা হলো ক্লাব এবং জাতীয় দল সেটি বয়সভিত্তিক হোক বা জাতীয় দল হোক এখানে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং বিধি থাকা দরকার। যাতে ক্লাবও জানবে জাতীয় পর্যায়ে দায়িত্ব কতটুকু, ফেডারেশনও জানবে যে যখন জাতীয় দল গঠন করব তখন ক্লাব থেকে আমরা কী ধরনের সহযোগিতা পেতে পারি। আমি যেটি মনে করি, ক্লাবে যারা কর্মকর্তা আছেন, তাদের নিশ্চয় জাতীয় দলের প্রতি, দেশের সুনামের প্রতি যথেষ্ট কমিটমেন্ট আছে, তারাও এটি চান। এই কমিটমেন্টের একটু ঘাটতি আমি দেখেছি। আমি বিশ্বাস করি আগামীতে ক্লাবগুলো জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে আরও সচেতন এবং আরও উদার হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় দল ফ টবল র আম দ র সমক ল সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যুত্থানে স্বামী হারিয়েছেন এখন সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন

‘আমার স্বামী যখন ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তখন আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বর্তমানে ছয় মাসের মেয়েই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে মেয়ের নাম রাখা হয়েছে সাবরিনা বিনতে সিদ্দিক। আমার স্বামী দেশের মানুষের বৈষম্য দূর করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, আমি ও আমার সন্তান যেন বৈষম্যের শিকার না হই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সমকালকে কথাগুলো বলছিলেন সাদিয়া খাতুন।
গত বছরের ২০ জুলাই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নূরে আলম সিদ্দিক। এ ঘটনার মাত্র ছয় মাস আগে ১২ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। নিজ বাড়ি গৌরীপুর উপজেলায় হলেও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কোনাপাড়া মাদ্রাসায় চাকরি করতেন সিদ্দিক। এই এলাকায় চাকরির সুবাদে বিয়ে করেন সাদিয়া খাতুনকে। স্বামীর স্মৃতি কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না তিনি।
সাদিয়া বলেন, সারাদেশে আন্দোলন যখন শুরু হচ্ছে, তার প্রথম দিন থেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল নূরে আলম সিদ্দিকীর। ১৮ ও ১৯ জুলাই আন্দোলনে যাওয়ার পর ভয় ঢুকে যায় মনে। এর ঠিক পরদিন গৌরীপুরের কলতাপাড়ায় আন্দোলনে অংশ নিলে পুলিশ সদস্যরা কাছ থেকে গুলি করে মেরে ফেলে তাঁকে। ওইদিন তাঁর সঙ্গে আরও দু’জন শহীদ হন।
স্বামী নিহত হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে আসেন সাদিয়া। বাবার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। বাবা ও ভাই কোনো রকম উপার্জন করে চালিয়ে নিচ্ছেন। তাদের খোঁজখবর নেন না শ্বশুর-শাশুড়ি। সরকারি যা সহযোগিতা করা হয়েছে, তার অধিকাংশ টাকা তারা নিয়ে গেছেন বলে দাবি সাদিয়ার। তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্মদানের জন্য আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি, তখন জুলাই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দেয় সরকার। আমি ভেবেছিলাম আমার শ্বশুরের কাছে সরকার সরাসরি টাকা দিলেও আমার সন্তানের জন্য কিছু টাকা দেবেন। পরে তারা আমাকে কিছুই দেননি।’
জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকেও আন্দোলনে নিহতদের অনেক আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১ টাকাও পাননি বলে জানান সাদিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আজ যদি আমার স্বামী থাকত, তাহলে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এসব কথা শুনতে পেয়ে সাদিয়া খাতুনের পাশে দাঁড়ান। সর্বশেষ জেলা পরিষদ থেকে অনুদানের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে। সাদিয়ার দাবি, শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকা যেন প্রকৃত ওয়ারিশ শনাক্ত করে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এই টাকা যদি তাঁর সন্তান না পায়, তবে তাঁকে ভরণপোষণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
সাদিয়ার ভাই মাহমুদুল হাসান শামীম বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। নিজের সংসারের খরচ জোগানোর আগে স্বামীহারা বোনের কথা চিন্তা করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, সরকার যেন প্রতিটি শহীদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। প্রশাসনের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘যাদের কারণে আপনারা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছেন, তাদের যেন স্মরণে রাখেন।’
বিচার দেখে যেতে চান শহীদ বিপ্লবের বাবা
গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারের বাসিন্দা বাবুল মিয়া। ২০ জুলাই বাড়ির পাশে আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে মারা যান তাঁর ছেলে বিপ্লব হাসান। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন তিনি। ছেলে হত্যার বিচার দেখে যাওয়াই তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছা। উপজেলা সদরে ছোট একটি চাকরি করতেন বিপ্লব হাসান। ঘটনার দিন সকালে নাশতা খাওয়ার জন্য মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হন তিনি। এরপর ফেরেন লাশ হয়ে। পরে বাবুল মিয়া ছেলে হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল নূর আয়াশ জানান, জুলাই আন্দোলনে ময়মনসিংহ জেলার ৪১ জন বাসিন্দা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শহীদ হয়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত তাদের আশানুরূপ আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেনি। শহীদ পরিবারের প্রতিটি সদস্য যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারেন, সে ব্যাপারে কাজ করছেন তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ