মুখে সেই চেনা হাসি। প্রিয় কালো রঙের জ্যাকেট। মাথায় একই রঙের ক্যাপ। টি-শার্টটা ছাই রঙা। তার হাস্যোজ্জ্বল মুখটাই বলে দিচ্ছিল, প্রিয় ভুবনে ফেরার আনন্দ কতটা।
মাসখানেক আগেও যে সফর ছিল অনিশ্চিত, সময়ের ব্যবধানে সেখানেই ফিরে আসা। তাই তো মুখে চওড়া হাসি নিয়ে সাকিব আল হাসানকে বলতে শোনা গেল,“খুবই উচ্ছ্বসিত।”
পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) এখন সাকিবের ঠিকানা লাহোর কালান্দার্স। স্থগিত হওয়া পিএসএলে বাকি ম্যাচগুলোতে অংশ নিতে সাকিব গেছেন পাকিস্তানে। অন্তত চার ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলেছে তার। সাড়ে পাঁচ মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন ৩৮ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। সর্বশেষ তাকে দেখা গেছে আবুধাবি টি-টেন ক্রিকেটে। সেখানে বাংলা টাইগার্সের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলেছেন ৩০ নভেম্বর। এর পর নানা ঘটনায় আটকে গেছে তার ২২ গজে ফেরা।
দেশের ক্রিকেটে ফিরতে পারেননি। জাতীয় দলে উপেক্ষিত। খেলার সুযোগ পাননি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও। সঙ্গে যোগ হয়েছিল বোলিং অ্যাকশনের উটকো ঝামেলা। সব পথ পেরিয়ে, সব ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা এখন মাঠে নামার অপেক্ষায়।
সাকিবের ভাগ্য খুলেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধর কারণে। পিএসএল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক বিদেশি ক্রিকেটার পাকিস্তান ছেড়েছিলেন। তাদের ফেরার সম্ভাবনা না থাকায় পিএসএল কর্তৃপক্ষ তাকাচ্ছে নতুন মুখের দিকে। সাকিব অ্যাভেইলেভেল থাকায় তাকে লুফে নিয়েছে লাহোর কালান্দার্স।
আট বছর পর সাকিবের অপেক্ষায় পিএসএল। এর আগে দুইবার খেলেছেন করাচি কিংস এবং পেশোয়ার জালমির হয়ে। করাচির হয়ে ৮ ম্যাচ ও পেশোয়ারের হয়ে ৫ ম্যাচ খেলেছেন। এবার তার ঠিকানা লাহোর।
সুযোগ আসবে কি না, সাকিব মাসখানেক আগেও নিশ্চিত ছিলেন না। তবে, ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ব্যাট-বলের জং ছাড়াতে ও শরীরের জড়তা দূর করতে সাকিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে। যেখানে ৮-১০ দিন অনুশীলন করেছেন।
জাতীয় দলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু, বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় সাকিবকে পেতে আগ্রহ দেখাচ্ছিল না আইপিএল, পিএসএল কিংবা অনান্য লিগ। বোলিং অ্যাকশন শুধরে ছাড়পত্র পাওয়ার পর সাকিবকে নিয়ে নতুন লড়াই শুরু করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তার এজেন্ট সেকেন্ড ইনিংস স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট (এসআইএসই)। ২০১৪ সাল থেকে সাকিবের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট দেখভাল করছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিএসএল নতুন করে শুরু হওয়ায় আশার দুয়ার খুলে যায়। সাকিবকে লাহোরের সঙ্গে যোগাযোগের সব ব্যবস্থা করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর সাকিবের এখন লাহোরের জার্সিতে মাঠে নামার পালা।
বয়স বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মাঠে থাকার সময়ও ফুরিয়ে আসছে সাকিবের। গোধুলির এই সময়টা হুট করে আসা সুযোগটি সাকিবের কাছে নিশ্চিতভাবে বিরাট পাওয়া। আলোর দেখা পেয়ে সাকিবও জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়। ব্যাট-বলের দারুণ রসায়নে ২২ গজে চেনা দ্যুতি ছড়িয়ে ধ্রুপদী হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের তারকা, এমন চাওয়া তো কোটি ক্রিকেটভক্তের।
ঢাকা/ইয়াসিন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প এসএল ঞ চ ইজ
এছাড়াও পড়ুন:
এজবাস্টনে আলোচনায় আম্পায়ার সৈকত
যশস্বী জয়সোয়ালের সঙ্গে বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের যেন একটা অদৃশ্য যোগসূত্র রয়েছে। ভারতীয় এই টপঅর্ডার ব্যাটিংয়ে এবং সৈকত আম্পায়ারিংয়ে থাকলে একটা না একটা কিছু ঘটবেই। সেই মেলবোর্ন থেকে শুরু করে এই ধারাবাহিকতা এজবাস্টনেও চলছে। এর মধ্যে এজবাস্টনে জয়সোয়াল-সংশ্লিষ্ট একটি সিদ্ধান্তে সৈকতের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস।
ইংলিশদের মন খারাপ হওয়ারই কথা। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও যে তাদের হাতে নেই। দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের অধিনায়ক শুভমান গিল। তাঁর ১৬১ রানে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪২৭ রান তুলে ডিক্লেয়ার করেছে ভারত। এরপর ৬০৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ৭২ রান করে চাপে আছে ইংল্যান্ড।
সর্বশেষ ঘটনাটি ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ বিকেলের। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের অষ্টম ওভারে জয়সোয়ালের বিপক্ষে এলবির আবেদন করেন ইংলিশ পেসার যশ টং। আম্পায়ার সৈকত আঙুল তুলে আউট ঘোষণা করেন। জয়সোয়াল আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করবেন কিনা, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। শেষ পর্যন্ত নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ব্যাটার লোকেশ রাহুলের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নেন।
সৈকত নিয়ম অনুযায়ী টিভি আম্পায়ারের কাছে পাঠিয়ে দেন রিভিউ আবেদন। তবে এ সময় সৈকতের দিকে ছুটে যান বেন স্টোকস। ইংলিশ অধিনায়কের দাবি, রিভিউ নেওয়ার নির্ধারিত ১৫ সেকেন্ড পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সৈকত বলেন, ১৫ সেকেন্ডের ভেতরেই রিভিউ নিয়েছেন জয়সোয়াল। বিষয়টি নিয়ে স্টোকস ও সৈকতের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ তর্কও হয়। এর মধ্যে টিভি আম্পায়ার পল রাইফেল সিদ্ধান্ত দেন যে জয়সোয়াল আউটই ছিলেন। যার মানে, সৈকতের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। অথচ মাঝখান দিয়ে কত কিছু ঘটে গেল। বিশেষ করে বেন স্টোকসের ক্ষোভ প্রকাশের বিষয়টি বেশ দৃষ্টিকটুই ছিল।
এই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও জয়সোয়ালের বিপক্ষে সৈকতের সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়েছিল ইংলিশরা। ক্রিস ওকসের বলে জয়সোয়ালের বিপক্ষে এলবির আবেদনে সাড়া দেননি বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত। সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ইংলিশ অধিনায়ক রিভিউ নিলে ‘আম্পায়ার্স কল’ বহাল থাকে। এর জেরে বোলার ওকস তো নিয়ম বদলের দাবি পর্যন্ত তুলেছিলেন। এজবাস্টন টেস্টে গতকাল চতুর্থ দিন প্রথম সেশন পর্যন্ত সৈকতের সাতটি সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রিভিউ নিয়েছে ভারত ও ইংল্যান্ড। এর মধ্যে ব্রাইডন কার্সের বিপক্ষে সিরাজের এলবির নটআউট সিদ্ধান্ত বাদে আর একটিও সফল হয়নি।