নড়াইল সদর উপজেলায় সৌদি থেকে বাড়ি ফেরার কয়েক ঘণ্টা পর এক প্রবাসীর ওপর হামলা করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ সময় ঠেকাতে আসা আরও একজনকে মারধর করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে উপজেলার চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের চালিতাতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত প্রবাসীর নাম মো. আজিম মোল্যা। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের ধুড়িয়া গ্রামের ছাবুল মোল্যার ছেলে। ঠেকাতে আসা ব্যক্তি একই গ্রামের ইসমাইল শেখ (৭২)। তাঁরা এখন নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বেলা দুইটার দিকে সৌদি থেকে সদর উপজেলার ধুড়িয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ফেরেন আজিম। বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার দিকে পাশের চালিতাতলা বাজারের ইসমাইল শেখের দোকানে বসে ছিলেন। তখন প্রতিপক্ষ চণ্ডীবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও সদস্য মোস্তফা মোল্যার নেতৃত্ব কয়েকজন আজিমের ওপর অতর্কিতে হামলা করেন বলে অভিযোগ। এ সময় আজিমকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। বাধা দিতে গেলে ইসমাইল শেখকেও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আহত আজিম মোল্যা বলেন, ‘এলাকায় হাবিবুরের প্রতিপক্ষ হিসেবে আমি নির্বাচন করতে চাইছি। আমি বিএনপি করি এ জন্য আমারে মারছে। মোস্তফা মেম্বার হুকুম দেছে আর হাবিবুর লোকজন নিয়ে আমারে মারধর করিছে।’

তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইউপি সদস্য মোস্তফা মোল্লা বলেন, ‘গতকাল সারা দিন আমি ফেদি বাজারে ছিলাম। রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার পরে আমি সেখান থেকে বাড়ি আসি। পরে খবর শুনি, চালিতাতলা বাজারে কে বা কারা আজিমদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই।’

অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে আমি জানি না। আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আজিম যে সৌদি থেকে বাড়ি এসেছে, আমি সেটাও জানতাম না।’

এ বিষয়ে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এ ঘটন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ