ফের দুষ্কৃতকারীদের নিয়ন্ত্রণে ‘নগদ’, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্বেগ
Published: 17th, May 2025 GMT
মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ ফের দুষ্কৃতকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে অবৈধভাবে ই-মানি তৈরি এবং অর্থ জালিয়াতির আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
শনিবার (১৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
তিনি বলেন, জনগণের টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছিল। আদালতের আদেশের কারণে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে। আদালতের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার দায়িত্ব ফিরে পাবে।”
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বাড়ছে
সোনালী ব্যাংক চালু করল নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ
তিনি জানান, আদালতের রায়ে যারা আগে যারা আর্থিক অনিয়মে জড়িত ছিলেন, তারা আবার প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আশঙ্কা করছে, আদালতের পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত নগদে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম ঘটতে পারে। আগামী ১৯ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চে প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। পরবর্তী করণীয় এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা যাবে।”
গত ১৫ মে হাইকোর্ট নগদে প্রশাসক নিয়োগ স্থগিত করে। ফলে নতুন করে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মীদের বিভাগ পরিবর্তন করা শুরু করেছে তারা। গত দুই দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন্সিক অডিটের সহায়তা করার অপরাধে ২৩ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার অনিয়ম। ওই সময়ে ভুয়া এজেন্ট ও পরিবেশক দেখিয়ে অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি এবং সরকারি ভাতা বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ মেলে। এই জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডাক বিভাগের আটজন সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক, নগদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক সিইওসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ঢাকা/এনএফ/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছেন, ৬৯ বছর বয়সে করেছেন পিএইচডি
সময়টা ১৯৯৯ সাল। মরিশাস থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান নিদ্যানন্দ রায়া। উদ্দেশ্য ছিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা। বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে যত দিন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন তিনি।
এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বাবাকে দেওয়া সেই কথা রেখেছেন নিদ্যানন্দ। এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। এ বয়সে এসে মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে সামাজিক নীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নামের শুরুতে ‘ড.’ শব্দটি যুক্ত করেছেন।
এ অর্জন কেমন লাগছে? প্রশ্নের জবাবে নিদ্যানন্দের চটজলদি জবাব, ‘তেমন কিছুই না। এটা জীবনের একটা অর্জন মাত্র।’
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিদ্যানন্দ বলেন, আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।ড. নিদ্যানন্দ এখন লন্ডনের এনফিল্ডে বসবাস করেন। পড়াশোনার জন্যই দেশ ছেড়েছিলেন। বলছিলেন, নিজ দেশে পড়াশোনার সুযোগ সীমিত ছিল। তাই দেশ ছেড়ে এসেছিলেন।
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’
যুক্তরাজ্যকে ‘সুযোগের ভূখণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।’
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর নিদ্যানন্দ সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার প্রস্তাব পান। কিন্তু সেখানে কাজের সুযোগ না থাকায় সেটা করতে পারেননি।
মাঝের সময়টায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে নিদ্যানন্দকে। দীর্ঘ সময় পরিবারের খরচ চালাতে স্কুলশিক্ষক স্ত্রী ল্যাকসোমিকে সহায়তা করতে পারেননি তিনি। বরং স্ত্রীই তখন পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। নিদ্যানন্দ বলেন, ‘তখন আমাকে চাকরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল। আমাকে স্থায়ী হতে হয়েছিল। আমাকে সবকিছু করতে হয়েছিল।’
‘এখানে আসার পর আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আমাকে একজন পরিচর্যাকারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে,’ বলেন নিদ্যানন্দ।
নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এই শিক্ষক বলেন, আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন নিদ্যানন্দ। এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।’
জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বলতে গিয়ে কয়েক দশক আগে বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন নিদ্যানন্দ। তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছি। বাবা, আমি তোমাকে গর্বিত করেছি।’