আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হলেই বিপদ, পরের মৌসুমে পুড়বে কপাল
Published: 18th, May 2025 GMT
বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে গত রাতে তুমুল বৃষ্টি। তাতে ম্যাচ হয়ে গেল পণ্ড। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু পেল স্বস্তি। আইপিএলের প্লে-অফে খেলার আশা আরও উজ্জ্বল হলো দলটার। কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য সেই বৃষ্টিই ছিল বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি। মাঠ ভেজা পড়ে রইল, শেষ হয়ে গেল কলকাতার আইপিএল ২০২৫ অভিযান।
এই মৌসুমে এ নিয়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো কলকাতার। কলকাতার ছিটকে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল এই দুটি ম্যাচের। অথচ শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বে গত বছর কলকাতা ছিল দুর্দান্ত। একেবারে একপেশে ফাইনালে তারা উড়িয়ে দিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে। আর এবার? এবার তারা সেই রাজসিংহাসন হারিয়ে লিগ পর্ব থেকেই বিদায়।
এই অভিজ্ঞতা অবশ্য কলকাতার এবারই প্রথম নয়। তৃতীয়বারের মতো তারা শিরোপা জেতার পরের বছর লিগ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ল। কলকাতা প্রথম শিরোপা জিতেছিল ২০১২ সালে, গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে। কিন্তু পরের বছর তারা প্লে-অফেও উঠতে পারেনি। ২০১৪ সালে আবার চ্যাম্পিয়ন, ২০১৫-তে আবার একই পরিণতি। এই বছরও সেই ইতিহাসটা ফিরল।
পাঁচবার আইপিএলের শিরোপা জিতেছে মুম্বাই। এর মধ্যে তিনবার শিরোপা জেতার পরের মৌসুমে (২০১৬, ২০১৮ ও ২০২১) তাদের বিদায় নিতে হয়েছে লিগ পর্ব থেকেই।অবশ্য লজ্জার এই রেকর্ডে কলকাতা একাই নয়, তাদের আগেই এই অভিজ্ঞতা হয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের। পাঁচবার আইপিএলের শিরোপা জিতেছে মুম্বাই। এর মধ্যে তিনবার শিরোপা জেতার পরের মৌসুমে (২০১৬, ২০১৮ ও ২০২১) তাদের বিদায় নিতে হয়েছে লিগ পর্ব থেকেই। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়েরও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে দুবার। তবে সবার আগে এই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস। আইপিএলের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা পরের আসরেই ছিটকে পড়েছিল লিগ পর্ব থেকে।
আগের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন, পরের মৌসুমে লিগ পর্ব থেকে বিদায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল গ পর ব থ ক ই পর র ম স ম কলক ত র
এছাড়াও পড়ুন:
তখন ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছিল এনএসআই-ডিজিএফআই
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সরাসরি হস্তক্ষেপে দিনের ভোট রাতে করাসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। তখন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল বলে তিনি পরে বুঝতে পারেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পরপরই দিনের ভোট রাতে করার বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। প্রায় সাত বছর পর নির্বাচনের সেই অনিয়মের বিষয়টি তৎকালীন সিইসি নিজে আদালতের কাছে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তুলে ধরেছেন। জবানবন্দিতে তাঁর এই বক্তব্য সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সাবেক সিইসি নূরুল হুদা গত মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল সিএমএম মো. জিয়াদুর রহমান।
দিনের ভোট রাতে করার অভিযোগে বিএনপির এক নেতার করা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় গত ২২ জুন গ্রেপ্তার হন নূরুল হুদা। গ্রেপ্তারের পরদিন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। সেই বিতর্কের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এরপর দুই দফায় তাঁকে আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। একই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সাবেক আরেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ জানানো হয়েছিল, ‘অন্তত দেড় শ আসনে ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি রাখা হয়েছে।’ ভোটের পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেছিলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অসত্য কথা। এই নির্বাচনে কমিশন পুরোপুরি সন্তুষ্ট।’
নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তৎকালীন এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তারা
নূরুল হুদা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, দলের নেতা-কর্মী, নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন।
জবানবন্দিতে সাবেক সিইসি বলেন, ‘আমি মনে করি, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করে প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করে দিনের ভোট রাতে গ্রহণ করেছে এবং অস্বাভাবিকভাবে কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় শতভাগ ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’
তৎকালীন সরকারি দলের সরাসরি হস্তক্ষেপেই অনিয়মগুলো সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে নূরুল হুদা বলেন, ‘কিছু কিছু অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনী অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুনরাতের ভোট আমি দেখিনি, আদালতে কেউ অভিযোগও করেননি: সিইসি২৭ জানুয়ারি ২০২২সাবেক সিইসি ২০১৮ সালের ভোটের অস্বাভাবিক ফলাফলের তথ্যও উল্লেখ করেছেন জবানবন্দিতে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর আমি রেজাল্ট শিট দেখে জানতে পারি যে অনেক কেন্দ্রে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়ে, যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আরও শুনেছি যে অনেক কেন্দ্রে রাতে ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার ভর্তি করা হয়। রাতেই ভোট দেওয়া হয়ে যায়।’
এই কাজে কারা জড়িত ছিলেন, সেটাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবে তাদের কর্মী বাহিনী, দায়িত্বে থাকা পুলিশ, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এই কাণ্ড ঘটেছে বলে আমি মনে করি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী। আমি বিশ্বাস করি, আমি বা আমার কমিশনের লোকদের অন্ধকারে রেখে এই অরাজক পরিস্থিতি ও ভোটের অনিয়ম করা হয়েছিল।’
বহিরাগতরা কেন্দ্রের ভোট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। ছড়িয়ে থাকা ব্যালট পেপার কুড়াচ্ছেন কয়েকজন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লার চান্দিনার পশ্চিম বেলাশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে