ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে ‘মান–সম্মান থাকতে’ সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস। তিনি বলেছেন, ‘মান-সম্মান থাকতে আপনারা অতি দ্রুত আপনাদের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। সেই কর্মসূচি আমাদের দিতে বাধ্য করবেন না, যে কর্মসূচিতে শিক্ষক এবং ছাত্রের সম্পর্ক বজায় থাকে না।’

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রদল নেতা গণেশ চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। ‘শহীদ শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার, ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে’ এই সমাবেশ করা হয়।

বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানকে ‘ফাদার অব মবোক্রেসি’ আখ্যায়িত করেন গণেশ চন্দ্র রায়। এই উপাচার্যকে আর ‘মাননীয়’ বলবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সমাবেশের আগে ক্যাম্পাসে কালো পতাকা হাতে মিছিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘৫ আগস্টের পর নিয়োগ পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের ওপর ছাত্রদলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অপরাপর প্রগতিশীল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো আস্থার জায়গা রেখেছিল। আমরা জানতে পেরেছি, এই মবকে কেন্দ্র করেই বর্তমান উপাচার্য ও প্রক্টর একটি অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের চক্রান্তে লিপ্ত। আজকের পর থেকে এই উপাচার্যকে আর মাননীয় বলব না। এই উপাচার্যকে ফাদার অব মবোক্রেসি ঘোষণা করলাম।’

শাহরিয়ার আলম সাম্য কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলেন, তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর কারও কারও দিক থেকে তোলা এমন প্রশ্নেরও কড়া সমালোচনা করেন গণেশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ক্যাম্পাসে শাহরিয়ার যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন, আমাদের কিছু ভাই, আমাদের ছাত্রদল করা কিছু ভাই, শাহরিয়ারের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কিছু বন্ধুবান্ধব ও ছোট ভাই-বড় ভাই এবং শাহরিয়ারের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের সহযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে উপাচার্যের বাড়িতে গিয়েছিলেন। উপাচার্য সেখানে যে আচরণ করেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, শিক্ষার্থীদের ইমোশনকে (আবেগকে) প্রাধান্য না দিয়ে তিনি অভিভাবকের জায়গায় থেকে যে শিশুসুলভ আচরণ করেছেন, এরপরে এই উপাচার্য স্বপদে বহাল থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি রাখেন না।’

গত ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা, ক্যাম্পাসের গণিত ভবনের সামনের সড়কের একটি গাছে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া, মেট্রোরেলের পিলারে থাকা শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে চারুকলা অনুষদে ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগসহ কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন ছাত্রদলের এই নেতা৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি সব সময় শিক্ষার্থীবান্ধব হবে, আমরা নিশ্চয়তা দিলাম। আমরা মনে করি, বর্তমান উপাচার্য শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সমর্থ নন। এ জন্য আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, উপাচার্য মহোদয়, পাঁচ দিন আগে আপনার বাসভবনের ফটকে দাঁড়িয়ে আপনি যে বালখিল্য আচরণ করেছেন, তার জন্য অতি দ্রুতই দুঃখ প্রকাশ করবেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে আমরা স্বপদে বহল দেখতে চাই না।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘মানসম্মান থাকতে আপনারা অতি দ্রুত আপনাদের পদ থেকে সরে দাঁড়ান৷ না হলে ছাত্রদল আপনাদের শক্ত হাতে জবাব দেবে। সেই কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না, যে কর্মসূচিতে শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক বজায় থাকে না।’

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রশাসনের পদত্যাগ চাই।’ সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন শাওন বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ডের দায়ভার গ্রহণ করে উপাচার্য ও প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার, নূর আলম ভূঁইয়া ইমন, শামীম আক্তার শুভ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র ই উপ চ র য ছ ত রদল র আম দ র র আলম করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের