গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের বাস্তবায়ন চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভাষ্য, সংস্কারকে স্থায়ী এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই গণভোট প্রয়োজন। যাতে সংবিধানের সংশোধনী বা অন্য কোন উপায়ে ভবিষ্যতে বাতিল করা না যায়। গণভোট জাতীয় নির্বাচনে আগে না কি একসঙ্গে হবে তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত।

রোববার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে বিফ্রিংয়ে দলের এই অবস্থান জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা.

সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। জামায়াত আগের প্রস্তাবে জানিয়েছিল, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল চায়। আগের নিয়মে সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হবেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। 

রোববার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে।
 
ডা. তাহের বলেন, গত ২৬ এপ্রিল প্রথম দিনের সংলাপে যেসব বিষয়ে জামায়াত একমত ছিল না, এর কয়েকটিতে দ্বিতীয় দিনের সংলাপে রাজি হয়েছে। সংস্কারের জন্য দেশ ও জাতির স্বার্থে জামায়াত দলীয় সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠেছে। অন্য দলগুলোর কাছ থেকে একই ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
 
নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের প্রস্তাব করেছিল জামায়াত। তবে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। দলটি ১৬৬ সুপারিশের ৭৭টিতে আগে একমত ছিল। দুই দিনের বৈঠক শেষে এই সংখ্যা ১২০ এর বেশি জানিয়ে ডা. তাহের বলেছেন, কমিশনের অবস্থান হল, নির্বাচনকালীন সরকার নির্বিঘ্নে পরিচালনার স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার হাতে উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা থাকা উচিত। নির্বাচনকালীন সরকার যেহেতু সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য হবে, তাই জামায়াত এই কমিশনের এই সুপারিশে একমত হয়েছে।

নির্বাচন কবে চান- এ প্রশ্নে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেছেন, সংস্কার শেষ যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে বিলম্ব করা উচিত নয়। জামায়াত চায়, সংসদ এবং স্থানীয় দুই নির্বাচনই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হোক। 

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারো বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগ আদালত গ্রহণ করলে, সেই আসামি দণ্ডিত হওয়ার আগেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এতে আগে রাজি না হলেও রোববার একমত হয়েছে জামায়াত। 

ডা. তাহের বলেছেন, সাধারণ নিয়মে কারো দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ব্যবস্থা হিসেবে কমিশন সুপারিশ করেছে, আইসিটিতে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জামায়াত এতে একমত হয়েছে।
 
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আইসিটিতে। অভিযোগ করা হচ্ছে, সাজার আগেই তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে নির্বাচনী আইনে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডা. তাহের বলেছেন, ত্রিয়াত্তরেও আইসিটি আইনে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য ছিল। জুলাই গণহত্যার চূড়ান্ত বিচার শিগগিরই হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের পর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন আসামিরা। এসব বিবেচনায় জামায়াত একমত হয়েছে ট্রাইব্যুনাল কারো বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করলে, সেই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
 
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ছয়টি বিকল্প দিয়েছিল। এগুলো হলো- অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট, গণপরিষদ, পরবর্তী সংসদ এবং একই সঙ্গে গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচন।
 
বিএনপি চায় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোরর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে জুলাই সনদ সই হবে। পরবর্তী সংসদে সনদ অনুযায়ী সাংবিধানিক সংস্কার হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি চায় গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার হবে।
 
জামায়াত কমিশনের স্প্রেডশিটে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে মতামত জানায়নি। রোববার জানায়, গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার হবে। দলটির নায়েবে আমির বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যে জুলাই সনদ সই হওয়ার পর, তা গণভোটে অনুমোদনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কার হবে।
 
ডা. তাহের সমকালকে বলেছেন, অতীতে সংবিধানের কিছু সংশোধনী সংসদে বাতিল হয়েছে। আবার কিছু আদালতের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে যে সংস্কার হতে যাচ্ছে, তা চিরস্থায়ী করতে জামায়াত গণভোট চায়। গণভোটে সংবিধানের সংশোধনী অনুমোদিত হলে, পরবর্তীতে কোনো সংসদ, আদালত বাতিল করতে পারবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ব চনক ল ন সরক র র প রস ত ব স স ক র হব র বল ছ ন ত হ র বল ঐকমত য গণভ ট আইস ট

এছাড়াও পড়ুন:

নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে

লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।

এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।

এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’

গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।

‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।

তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমি

নেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।

হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩
  • সব দলের সম্মতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে এবি পার্টি