একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথকে সুগম করতে প্রয়োজন কারখানাগুলোর স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যবস্থাপনা যা শিল্পকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং ব্যয় কমাবে। শিল্পকারখানার কাজে রোবটিক্সের ব্যবহার এ ক্ষেত্রে রাখবে অসাধারণ ভূমিকা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আয়োজন করা হয় জাতীয় রোবটিক্স ও প্রযুক্তি উৎসব। গত ৮-১০ মে রোবট আর তরুণ উদ্ভাবকদের কল-কবজায় মুখর হয়ে উঠেছিল চুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং (এমআইই) বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ‘MIE Robolution 1.
আলোচনায় এসেছে উৎসবের রোবটিক্স প্রতিযোগিতা। রোবো সকার, লাইন ফলোয়িং রোবট, টেকাথন, প্রজেক্ট শোকেস, ক্যাড ডিজাইন ও দাবা– এই ছয়টি ভিন্নধর্মী বিভাগে ভাগ করা প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন প্রজন্মের মেধাবী তরুণ। অনুষ্ঠানের প্রথম দিন গত ৮ মে সকাল ১০ টায় কেক কাটা এবং এক বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে সূচনা হয় অনুষ্ঠানটির। পরে বেলা ১১টা থেকে চুয়েট কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় সেমিনার। এতে আমন্ত্রিত বক্তারা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা খুব মনোযোগ সহকারে সেমিনারে বক্তব্য শোনেন। দ্বিতীয় দিন আয়োজিত হয় লাইন ফলোয়িং রোবট প্রতিযোগিতা। যেখানে সেন্সর ও লজিক দিয়ে পথ চিনে নেওয়া রোবট দেখায় বুদ্ধিমত্তার ঝলক। এতে নির্দিষ্ট পথে চলতে সক্ষম রোবটের তৈরি করে কারিশমা দেখান প্রতিযোগীরা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তারপর শুরু হয় রোবো সকার প্রতিযোগিতা যেখানে রোবটগুলো মাঠে নামে গোলের লড়াইয়ে। দ্রুতগতি, কৌশল আর সমন্বয়ের এই খেলায় প্রতিযোগীরা দেখায় নিখুঁত প্রোগ্রামিং দক্ষতা। প্রযুক্তি ও খেলাধুলার অসাধারণ এই সংমিশ্রণ দর্শকদের মাঝে তৈরি করে উত্তেজনার ঝড়। রোবো সকার তরুণ উদ্ভাবকদের জন্য এক চমৎকার চ্যালেঞ্জ ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। ওইদিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘টেকাথন’। টেকাথন হলো হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বিত হ্যাকাথন। যেখানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সঙ্গে সফটওয়্যার এর সমন্বয় সাধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানটি দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী চুয়েটের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, টেকাথন হচ্ছে প্রথম অনসাইট হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বিত হ্যাকাথন। এখানে অংশ নেওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবুও ভালো লাগছে। সামনের দিনগুলোতে এমন আরও আয়োজন দেখতে পাব বলে আশা করি। শেষ দিনে হয় কম্পিউটার ভিত্তিক ডিজাইনিং প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা সমমূল্যের পুরস্কার বিতরণ করা হয় এই অনুষ্ঠানে। সর্বশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই তিন দিনব্যাপী উৎসবের পর্দা নামে। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ছবির মতো সুন্দর ভেনিস
বছরটা আমার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলা যায়। এ বছর কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনেও এসেছে দারুণ কিছু পরিবর্তন। রাজীব (আদনান আল রাজীব) আর আমি নতুন জীবনের শুরুটা করেছি কিছু প্রিয় গন্তব্য ঘুরে। তার মধ্যে রয়েছে ইউরোপ আর মিসর ভ্রমণের অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি– ভ্রমণ শুধু জায়গা দেখা নয়, এটি অনুভবের, উপলব্ধির আর নিজেকে নতুন করে চেনার একটা যাত্রা। ছোটবেলা থেকে আমার একটি স্বপ্ন ছিল– মিসরে যাওয়ার। ইতিহাসের বইয়ে পিরামিড আর মমির ছবি দেখে সেই যে মুগ্ধতা জন্মেছিল, তা কখনোই ফিকে হয়নি। এবার যখন ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমার টিম নিয়ে কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে মিসর গেলাম, তখন বুঝলাম– স্বপ্ন সত্যি হওয়ার এমন অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মিসরের জাদুঘরে প্রবেশ করে আমি যেন এক অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম। কয়েক বছর ধরে যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, অবশেষে আমি মমি দেখেছি। যদিও ছবি তোলার অনুমতি ছিল না, তবুও সেই মুহূর্তটা আমার মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। মিসরের ইতিহাস, তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রতিটি ধাপে ধাপে আমি বিস্ময়ে ভেসেছি। সত্যি বলতে মিসর জাদুকরী একটি দেশ– এমন এক মায়াবী শক্তি আছে, যেটি অনুভব না করলে বোঝানো যাবে না।
এরপর ইউরোপ ভ্রমণের অংশ হিসেবে আমরা গেলাম ইতালির ভেনিসে। ভেনিস শহরটা যেন এক প্রেমপত্রে লেখা, পানি আর পাথরের ওপর। রাজীব আর আমি হাঁটছিলাম সেই জলপথ ধরে। ভেতরটা কেমন যেন মুগ্ধতায় ভরে যাচ্ছিল। সেই ভ্রমণের একটা মুহূর্ত আমি শেয়ার করেছিলাম– লাল রঙের ওয়ান শোল্ডার গাউনে, খুবই হালকা মেকআপে। একদম আরামদায়ক কিন্তু ক্ল্যাসিক একটা লুকে।
লাল আমার প্রিয় রং। এটি শুধু একটা রং নয়– আমার কাছে এটি ভালোবাসা, উৎসব আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আমি চাইছিলাম এমন একটা লুক, যেখানে নিজের মতো করে স্বস্তিতে থাকব, আবার নিজেকে সুন্দরও লাগবে। অনেকেই মনে করেন লাল পোশাক মানেই ভারী মেকআপ দরকার। আমি চেয়েছি একেবারে ‘আন্ডারস্টেটেড’ অথচ দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া একটা স্টাইল। লিপস, হালকা চোখের সাজ আর কানে একটু লাল ফুল– প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এক সহজ সৌন্দর্য। চুল বাঁধা ছিল একটু অগোছালোভাবে, সেটিই যেন আমার সেই মুহূর্তের গল্পের অংশ। এলোমেলো খোঁপায় একটি রাজকীয় ছাপ ছিল, যা আমি দারুণ পছন্দ করি। ভেনিসের সেই কিছু মুহূর্ত শুধু স্মৃতি হয়ে থাকেনি, সেটি যেন আমার জীবনের এক নতুন গল্প হয়ে গেছে। প্রতিটি ফ্রেম, প্রতিটি হাঁটা, প্রতিটি হাসি– আমি মনে করি সবই ছিল আমার একটি অভ্যন্তরীণ যাত্রার প্রতিচ্ছবি। আমি ভাগ্যবান এ অভিজ্ঞতার জন্য, এই জীবনের জন্য।