‘নিরাপদ’ পানীয়টি হতে পারে তরুণদের কিডনি রোগ ও অ্যাংজাইটির কারণ
Published: 19th, May 2025 GMT
এনার্জি ড্রিংকে থাকে চিনি। নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে কেবল এই একটি উপাদানের জন্যই। আর্টিফিশিয়াল সুইটনার বা কৃত্রিম চিনি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। যেকোনো পানীয়ে মিষ্টতা আনার জন্য অন্য কোনো কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হলে তাতেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এনার্জি ড্রিংকে আরও থাকে ক্যাফেইন। উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন মারাত্মক ক্ষতির কারণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য যতটা ক্যাফেইন নিরাপদ, উঠতি বয়সের একটি ছেলে বা মেয়ের জন্য তা নিরাপদ নয়। এনার্জি ড্রিংকে থাকা আরও কিছু রাসায়নিক উপাদানের কারণেও স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা.
সাইফ হোসেন খান।
অতিরিক্ত পরিমাণে এনার্জি ড্রিংক খেলে এতে থাকা ক্যাফেইনের কারণে হৃৎপিণ্ডের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। কখনো কখনো ব্যাহত হতে পারে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ। তাই অতিরিক্ত এনার্জি ড্রিংক খাওয়া কখনোই উচিত নয়। পরিমাণে খুব বেশি না হলেও নিয়মিত এসব পানীয় খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। পরবর্তী সময়ে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যাঁদের পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে এনার্জি ড্রিংক।
অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকিক্যাফেইনের কারণে কারও কারও তীব্র মাথাব্যথা হয়। অন্যদিকে আবার নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক খেলে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে বাড়তে পারে স্ট্রোক এবং দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের আশঙ্কাও। প্রিজারভেটিভের উপস্থিতির কারণেও কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনযেসব ভুলে আপনার লিভারের ক্ষতি করছেন১৭ মে ২০২৫ঘুমের ব্যাঘাত ও মানসিক বিপর্যয়অতিরিক্ত পরিমাণে এনার্জি ড্রিংক খেলে এর ক্যাফেইনের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আবার কম মাত্রায় নিয়মিত খেলেও ক্যাফেইন থাকার কারণে এই পানীয়ের প্রতি নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। বিষণ্নতা, অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তার সঙ্গেও এনার্জি ড্রিংকের যোগসূত্র পাওয়া গেছে গবেষণায়।
শেষ কথামাঝেমধ্যে অল্প এনার্জি ড্রিংক খেলে ক্ষতি নেই। তবে তা নিয়মিত কিংবা অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। তাতেই বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে একটি বোতল বা ক্যানের অর্ধেকটার বেশি না খাওয়াই ভালো। ১২ বছর বয়সের নিচের বয়সীদের এসব পানীয় একেবারেই দেওয়া উচিত নয়। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের সুগার অন্যান্য অনেক খাবারের চেয়ে অনেক দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এই পানীয়। যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে, তাঁদের এ ধরনের পানীয় খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
আরও পড়ুনকর্মী থেকে নিজেই এখন শতাধিক রেস্তোরাঁর মালিক শামীম, যেখানে কাজ করেন দুই হাজারের বেশি মানুষ১৭ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ফ ইন র জন য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন
তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের।
দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত।
আরো পড়ুন:
রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন
টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়
প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।
তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।
গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে।
সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে।
২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি