নগর ভবনে তালা, ইশরাকের সমর্থকদের বিক্ষোভে রাস্তা বন্ধ
Published: 19th, May 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে আজ সোমবারও বিক্ষোভ করছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। রাজধানীর গুলিস্তানে নগর ভবনের সামনে তাঁদের অবস্থান ও বিক্ষোভের কারণে সকাল ১০টা থেকে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আজ ষষ্ঠ দিনের মতো নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ইশরাকের সমর্থকেরা। সকাল ১০টা থেকে নগর ভবন ও এর আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন তাঁরা। সরেজমিন দেখা যায়, গুলিস্থান থেকে নগর ভবনে যাওয়ার সড়কটির দুই পাশে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপিসহ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
ইশরাকের সমর্থকদের দাবি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার কারণেই আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও ইশরাক শপথ নিতে পারছেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী দপ্তর নগর ভবনেই থাকায় সেখানে দাপ্তরিক কাজ করেন উপদেষ্টা। তবে ইশরাকপন্থীদের টানা আন্দোলনের কারণে কয়েক দিন তিনি সেখানে যাননি।
বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা বলছেন, যত দিন না ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো হবে, তত দিন তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিএনপির বৈদেশিক–বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। রায়ের পর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার পরও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় গত বুধবার থেকে তাঁর সমর্থকেরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
আরও পড়ুননগর ভবনে আজও তালা, যান চলাচল বন্ধ, কালও ইশরাকের সমর্থকদের বিক্ষোভ২২ ঘণ্টা আগেএদিকে ইশরাকের পক্ষে মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল না করার বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, সে সম্পর্কে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দিয়েছে।
আরও পড়ুননগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা, ইশরাকের সমর্থকদের অবস্থান১৮ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশর ক র সমর থকদ র স থ ন য় সরক র নগর ভবন র অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত ট্রেন থেকে এক ব্যক্তিকে ফেলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, আসলে ঘটনা কী
চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলছেন এক ব্যক্তি। কিন্তু ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ তার হাত ধরে রেখেছেন। একপর্যায়ে ভেতর থেকে হাত ছেড়ে দিলে লোকটিকে রেললাইনে পড়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনার ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর রেলস্টেশন এলাকায়।
ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। তারর বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে অনেকেই মতিউরকে চোর এবং ছিনতাইকারী বলে দাবি করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মতিউর অটোরিকশাচালক ছিলেন। দুই বছর ধরে দূতাবাস এবং এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন তিনি। ১৫ দিন আগে বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন তিনি। সৌদি আরবে যাওয়ার পর বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীবের পরিবারের সদস্যরা সপ্তাহখানেক আগে মতিউরের বাড়ি যান এবং কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তারই জেরে বগুড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেন। এবং তার কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ মতিউরের পরিবারের।
মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার বাবা অটোরিকশাচালক ছিলেন। গত দেড় বছর ধরে সৌদি আরবের লোক পাঠানোর কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ৩-৪ জনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন, তারা সেদেশে ভালোই আছে। ১৫ দিন আগে আমার বাবা বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার তালশন গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠান। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীব তার বাবাকে আমাদের বাড়িতে পাঠান। তার বাবা বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে যান। আর বগুড়া থেকে ট্রেনে বাড়িতে ফেরার পথে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং তার শ্যালকরা আমার বাবাকে মোবাইল চোর বলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং প্রায় ৪-৫ মিনিট ট্রেনে ঝুলিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে ট্রেনটি আদমদিঘী উপজেলার নশরতপুর স্টেশনে পৌঁছালে সেখানকার প্লাটফর্মের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আমার বাবা ট্রেনের নিচে পড়ে যান। ট্রেনের নিচে পড়লেও বাবা কোনোরকম প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু সেখানকার উৎসুক জনতা বাবাকে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী ভেবে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘বাবাকে কোনোরকম সেখান থেকে উদ্ধার করে আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আদমদীঘি থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তারা আমার অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এবং আদমদিঘী থানার ওসি আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। তিনি আমাকে বলেন, এটি রেলওয়ের বিষয়, এই অভিযোগ সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গিয়ে করুন। আদমদিঘী থানা পুলিশের কথা শুনে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে যাই। তবে সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশ জানায়, আপনার বাবা জীবিত। মারা গেলে মামলা নেওয়া যেত। আমরা এখন কোথায় অভিযোগ করব? আমার বাবা তো ছিনতাইকারী না। তিনি বৈধ পথে ব্যবসা করছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারের বাসিন্দা নেহাল আহমেদ বলেন, ‘মতিউরকে দীর্ঘদিন থেকে চিনি। তার মাধ্যমে আমার দুই আত্মীয়কে বিদেশে পাঠিয়েছি। একজন সৌদি আরবে এবং আরেকজন মালয়েশিয়াতে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। মতিউরের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে কখন কারও ঝামেলা হতে দেখিনি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাকিব হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে সজীবের বাবা মোহাম্মদ হেলালের যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘৪০ দিন আগে সজীবকে মতিউরের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমার ছেলে কাজের সুযোগ পায়নি। এ নিয়ে তার সঙ্গে অনেকবার দেখা করতে চেয়েছি। সে আমার সঙ্গে দেখা না করে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাত থেকে আট দিন আগে তার বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম ছেলের বিষয়ে জানতে, তবে সেখানে কোনো ঝামেলা হয়নি।’
মতিউরকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে ছেলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বগুড়া থেকে আসার সময় সজীবের শ্যালকরা ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে মতিউরকে ফেলে দেয়। তবে রাকিব সেখানে কিছুই করেনি। ট্রেনে কি হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’
অভিযোগের বিষয়ে বগুড়া আদমদিঘী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটি রেলওয়ে পুলিশের বিষয়। তাই আমরা কোনো অভিযোগ নেয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি জিআরপি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তারা প্রথমে আদমদিঘী থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদেরকে জিআরপিতে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। তখন তারা আমার থানায় এসেছিলেন। আসার পরে তাদেরকে নাকি আবার আদমদীঘি থানা থেকে ফোন করা হয়। তখন তারা আবারও আদমদিঘী থানায় অভিযোগ জানাতে চলে যান। পরবর্তীতে তারা আর আমার থানায় আসেননি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা সবসময় অভিযোগ এবং তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’