ডালপালা কেটে তোলা হয়েছে বাকল, খাগড়াছড়িতে মৃতপ্রায় সড়কের পাশের শতাধিক গাছ
Published: 19th, May 2025 GMT
গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়েছে, তুলে ফেলা হয়েছে বাকল। দুর্বল হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছগুলো। একটি বা দুটি নয়, খাগড়াছড়ির তিনটি সড়কে এভাবেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে শতাধিক গাছকে। সড়ক তিনটি হলো খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি, পানছড়ি-খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়ক।
ছায়া সুনিবিড় পাহাড়ি এসব সড়কের দুই ধারে রয়েছে রেইনট্রি, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলসহ নানা প্রজাতির প্রায় হাজারখানেক গাছ। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সঞ্চালন লাইনের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু সময় পরপর এই তিন সড়কের গাছের ডালপালা ছাঁটাই করা হয়।
সড়কের পাশে বসবাস করা স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়োজিত শ্রমিকেরাই ডালপালা ছাঁটার পাশাপাশি গাছের বাকলও তুলে ফেলেছেন। তবে কিছু বাকল স্থানীয় বাসিন্দারা তুলেছেন বলে দাবি তাঁদের। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডালপালা ছাঁটার বিষয়টা স্বীকার করলেও বাকল তুলে ফেলার বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
সড়ক বিভাগের মালিকানায় থাকা গাছগুলোর বেশির ভাগই লাগিয়েছেন গ্রামবাসী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। এসব গাছের বয়স ২৫-৩০ বছর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে সড়কের পাশের গাছগুলো হত্যার উদ্দেশ্যেই ডালাপালা ছেঁটে বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু গাছ মরে গেছে। গত বছর গাছের ডালপালা ছাঁটা ও বাকল তোলার বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল সড়ক বিভাগ।
এক বছর আগেও ছাল উঠিয়ে গাছ মারার কারণ জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। বর্তমানে আবারও গাছের ছাল ওঠানো হচ্ছে শুনেছি। সরেজমিন দেখে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মাকসুদুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী, খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগসড়ক বিভাগ খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের দুই পাশের গাছ সড়ক বিভাগের। কিন্তু ডাল কাটার সময় বিদ্যুৎ বিভাগ কখনো সড়ক বিভাগকে জানায় না। এক বছর আগেও ছাল উঠিয়ে গাছ মারার কারণ জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। বর্তমানে আবারও গাছের ছাল ওঠানো হচ্ছে শুনেছি। সরেজমিন দেখে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খাগড়াছড়ি শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের ঠাকুরছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আটটি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি গাছ কেটে নিয়েছেন এলাকার লোকজন। বর্তমানে মরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে আর তিনটি গাছ। আবার পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুকিছড়া এলাকায় ১১টি, শিবমন্দির এলাকায় ৯টি, গাছবান এলাকায় ৫টি, ছোটনালা এলাকায় ৩টি, গিরিফুল এলাকায় ৬টি, মঞ্জু আদাম এলাকায় ৮টি, কুড়াদিয় এলাকায় ৭টিসহ সড়কটিতে প্রায় অর্ধশত গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের শান্তিপুর এলাকায় ৮টি, ব্রিকফিল্ড এলাকায় ৪টি, বানছড়া ৪টি, কার্বারি টিলায় ১টি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক গাছ মরে গেছে, আর কিছু গাছ শুকিয়ে মৃতপ্রায়।
পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে যাতায়াত করা লোকজন এবং গাড়ির চালকেরা জানান, পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের দুই পাশজুড়ে একসময় ২০ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো শত শত গাছ ছিল। গাড়িতে আসা-যাওয়ার সময় পুরো সড়কে ছায়া থাকত। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ছাল তুলে গাছগুলো ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হচ্ছে।
ঠাকুরছড়া এলাকার বাসিন্দা দিনেশ কুমার ত্রিপুরা বলেন, গত বর্ষার সময় গাছের ডাল কাটার সময় ২৫-৩০ বছরের পুরোনো তিনটি রেইনট্রিগাছের নিচের অংশের ছাল-বাকলও তুলে ফেলা হয়। ছাল ওঠানোর কারণে গাছের মরা ডাল রাস্তার ওপর পড়তে থাকে। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু মৃত গাছ কেটে নিয়েছেন।
গাছবান এলাকায় সড়কের পাশের বাসিন্দা রবিন চাকমা। তাঁর বাড়ির পাশে রয়েছে অনেক গাছ। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন প্রতি বর্ষায় গাছের ডাল ছাঁটাই করতে এসে ছালও তুলে নেন। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়। মরা ডালগুলো সামান্য বাতাস এলে ভেঙে পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে সড়কের ওপর ডাল পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ডালপালা কাটার পাশাপাশি তুলে নেওয়া হয়েছে বাকল। এতে মৃতপ্রায় সড়কের পাশের এসব গাছ। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের ঠাকুরছড়া এলাকা থেকে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় সড়ক র প শ সড়ক র প শ র গ ছ র ব কল সড়ক ব ভ গ ব কল ত ল এল ক য় প নছড় ল কজন র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে
একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।
এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।
আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।
সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়