গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়েছে, তুলে ফেলা হয়েছে বাকল। দুর্বল হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছগুলো। একটি বা দুটি নয়, খাগড়াছড়ির তিনটি সড়কে এভাবেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে শতাধিক গাছকে। সড়ক তিনটি হলো খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি, পানছড়ি-খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়ক।

ছায়া সুনিবিড় পাহাড়ি এসব সড়কের দুই ধারে রয়েছে রেইনট্রি, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলসহ নানা প্রজাতির প্রায় হাজারখানেক গাছ। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সঞ্চালন লাইনের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু সময় পরপর এই তিন সড়কের গাছের ডালপালা ছাঁটাই করা হয়।

সড়কের পাশে বসবাস করা স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়োজিত শ্রমিকেরাই ডালপালা ছাঁটার পাশাপাশি গাছের বাকলও তুলে ফেলেছেন। তবে কিছু বাকল স্থানীয় বাসিন্দারা তুলেছেন বলে দাবি তাঁদের। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডালপালা ছাঁটার বিষয়টা স্বীকার করলেও বাকল তুলে ফেলার বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন।

সড়ক বিভাগের মালিকানায় থাকা গাছগুলোর বেশির ভাগই লাগিয়েছেন গ্রামবাসী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। এসব গাছের বয়স ২৫-৩০ বছর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে সড়কের পাশের গাছগুলো হত্যার উদ্দেশ্যেই ডালাপালা ছেঁটে বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু গাছ মরে গেছে। গত বছর গাছের ডালপালা ছাঁটা ও বাকল তোলার বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল সড়ক বিভাগ।

এক বছর আগেও ছাল উঠিয়ে গাছ মারার কারণ জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। বর্তমানে আবারও গাছের ছাল ওঠানো হচ্ছে শুনেছি। সরেজমিন দেখে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মাকসুদুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী, খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ

সড়ক বিভাগ খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের দুই পাশের গাছ সড়ক বিভাগের। কিন্তু ডাল কাটার সময় বিদ্যুৎ বিভাগ কখনো সড়ক বিভাগকে জানায় না। এক বছর আগেও ছাল উঠিয়ে গাছ মারার কারণ জানতে চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। বর্তমানে আবারও গাছের ছাল ওঠানো হচ্ছে শুনেছি। সরেজমিন দেখে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খাগড়াছড়ি শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের ঠাকুরছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আটটি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি গাছ কেটে নিয়েছেন এলাকার লোকজন। বর্তমানে মরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে আর তিনটি গাছ। আবার পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুকিছড়া এলাকায় ১১টি, শিবমন্দির এলাকায় ৯টি, গাছবান এলাকায় ৫টি, ছোটনালা এলাকায় ৩টি, গিরিফুল এলাকায় ৬টি, মঞ্জু আদাম এলাকায় ৮টি, কুড়াদিয় এলাকায় ৭টিসহ সড়কটিতে প্রায় অর্ধশত গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের শান্তিপুর এলাকায় ৮টি, ব্রিকফিল্ড এলাকায় ৪টি, বানছড়া ৪টি, কার্বারি টিলায় ১টি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক গাছ মরে গেছে, আর কিছু গাছ শুকিয়ে মৃতপ্রায়।

পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে যাতায়াত করা লোকজন এবং গাড়ির চালকেরা জানান, পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের দুই পাশজুড়ে একসময় ২০ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো শত শত গাছ ছিল। গাড়িতে আসা-যাওয়ার সময় পুরো সড়কে ছায়া থাকত। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ছাল তুলে গাছগুলো ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হচ্ছে।

ঠাকুরছড়া এলাকার বাসিন্দা দিনেশ কুমার ত্রিপুরা বলেন, গত বর্ষার সময় গাছের ডাল কাটার সময় ২৫-৩০ বছরের পুরোনো তিনটি রেইনট্রিগাছের নিচের অংশের ছাল-বাকলও তুলে ফেলা হয়। ছাল ওঠানোর কারণে গাছের মরা ডাল রাস্তার ওপর পড়তে থাকে। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু মৃত গাছ কেটে নিয়েছেন।

গাছবান এলাকায় সড়কের পাশের বাসিন্দা রবিন চাকমা। তাঁর বাড়ির পাশে রয়েছে অনেক গাছ। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন প্রতি বর্ষায় গাছের ডাল ছাঁটাই করতে এসে ছালও তুলে নেন। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়। মরা ডালগুলো সামান্য বাতাস এলে ভেঙে পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে সড়কের ওপর ডাল পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ডালপালা কাটার পাশাপাশি তুলে নেওয়া হয়েছে বাকল। এতে মৃতপ্রায় সড়কের পাশের এসব গাছ। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের ঠাকুরছড়া এলাকা থেকে তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় সড়ক র প শ সড়ক র প শ র গ ছ র ব কল সড়ক ব ভ গ ব কল ত ল এল ক য় প নছড় ল কজন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে ফ্ল্যাট দখলে জেলা যুবদল সভাপতির সহায়তার অভিযোগ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী শহরে একটি ফ্ল্যাট দখলের ঘটনায় জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম ওরফে সুমনের সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কাজল রেখা নামের এক নারী নোয়াখালী প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাজল রেখা অভিযোগ করেন, ২০১০ সালে তাঁর বড় ছেলে আল মাহমুদের বন্ধু উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নূর হোসেনকে তাঁদের মালিকানাধীন চৌমুহনী পৌরসভার কুরিপাড়া এলাকার একটি তিনতলা বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। এরপর তিনি ছেলের পড়ালেখার সুবিধার্থে ঢাকায় চলে যান। তখন থেকে নূর হোসেন তাঁর বাড়ি দেখাশোনা করছিলেন। ‌একপর্যায়ে নূর হোসেন তাঁর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেন এবং বাড়িতে থাকা অন্য ভাড়াটেদের বের করে দেন।

কাজল রেখা অভিযোগ করেন, নূর হোসেনের দলীয় প্রভাবের কারণে তিনি অনেক চেষ্টা করেও গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাড়ি দখলমুক্ত করতে পারেননি। পরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুবলীগ নেতা নূর হোসেন আত্মগোপন করলে গত ৮ মার্চ তিনি তাঁর বাড়িটি দখলে নেন। এরপর নূর হোসেন জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিমের শরণাপন্ন হয়ে তাঁর (মঞ্জুরুল আজিম) লোকজনের মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি পুনরায় দখল করেন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কাজল রেখা নামের ওই নারীর ফ্ল্যাট দখলের ঘটনায় তিনি কিংবা তাঁর কোনো লোক জড়িত নন। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই নারীকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

এদিকে ফ্ল্যাট দখল করে রাখার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কাজল রেখা। তিনি বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর বেগমগঞ্জ থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করে এলেও ফ্ল্যাটটি এখনো দখলমুক্ত হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জায়গাজমি–সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়গুলো আদালতের এখতিয়ার। এরপরও ওই নারীর অভিযোগ পাওয়ার পর বেগমগঞ্জ থানায় পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় খোঁজ নিতে পারেন।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়ার কথা। হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। মীমাংসা না হয়ে থাকলে ওই নারী আদালতে যেতে পারেন। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁরা ফ্ল্যাটের মালিকানার টাকাপয়সা লেনদেনের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ