রাজবাড়ীতে চুরির অভিযোগে শাহিন শেখ ওরফে রুপল শেখ (২৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কর্মসূচি শেষে এক আসামির বাড়িতে হামলা চালান বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে বাধা দিলে গতকাল রোববার বিকেলে সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির হোসেন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শেখ আবুল হাশেম। তাঁদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুনরাজবাড়ীতে চুরির অভিযোগে তরুণকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪১৭ মে ২০২৫

এ ঘটনায় রাতেই এসআই সাব্বির হোসেন বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় গতকাল রাতে মনির হোসেন মোল্লা ও মোসলেম মোল্লা নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, কয়েক দিন আগে রাজাপুর এলাকার মধ্যপাড়া গ্রামের শামসুদ্দিন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির পানির পাম্প চুরি হয়। এতে সন্দেহ করা হয় একই এলাকার দিনমজুর শাহিন শেখকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যার আগে সালিসের কথা বলে কয়েকজন শাহিনকে ডেকে শামসুদ্দিনের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে শামসুদ্দিন ও জহির উদ্দিন বিশ্বাসের নির্দেশে ১৫ থেকে ২০ জন মিলে শাহিনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটান। এ সময় তাঁর দুই পায়ে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে শাহিন অচেতন হয়ে পড়লে সবাই পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন শাহিনকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরদিন সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। রাতে শাহিনের মামা কালাম মোল্লা বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। স্থানীয় কয়েকজন জানান, চুরির অভিযোগের পাশাপাশি এক নারীর গোসলের ভিডিও ধারণের কারণেই শাহিনকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছিল।

এদিকে শাহিন হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল বিকেল চারটার দিকে এলাকাবাসীর ব্যানারে রাজাপুরে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ লোকজন শাহিন হত্যা মামলার আসামি মোক্তার বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন সদর থানার এসআই সাব্বির হোসেন ও এএসআই আবুল হাশেম। এ সময় হামলাকারীরা লোহার রড ও ইট দিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেই সঙ্গে আহত দুই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান জানান, শাহিন হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি শামসুদ্দিন ও জহির উদ্দিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায়ও মামলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য হত য র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে ‍শিবচর থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।

মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিপিবির ১৩তম কংগ্রেস ১৯-২২ সেপ্টেম্বর, ঠিক হবে ‘রণকৌশল’
  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • জাল টাকা বহন: ২ জনের ১৪ বছর কারাদণ্ড
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন