আগামীকাল মঙ্গলবার নগর ভবনের সামনে ৭ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক সমর্থক আন্দোলনকারীরা। 

সোমবার (১৯ মে) সকাল থেকেই ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ইশরাকপন্থী কর্মী-সমর্থকদের পদচারণায় অচল হয়ে পড়ে নগর ভবন এবং তার আশপাশের এলাকা। ষষ্ঠ দিনের মতো তারা ৬ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এই কর্মসূচি থেকে আগামীকাল ৭ ঘণ্টার কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। 

সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, “আদালতের রায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট—সবই আছে। শুধু দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এটা নগরবাসীর সঙ্গে অন্যায়।”

তিনি অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘‘দাবি মেনে না নিলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। আমরা আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে যেতে প্রস্তুত।’’

সোমবার সকাল ১১টার আগেই নগর ভবনের প্রধান ফটক ঘিরে ফেলেন আন্দোলনকারীরা। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। বঙ্গমার্কেট থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত রাস্তাগুলো কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে অফিসগামী মানুষ, পথচারী ও যানবাহন দুর্ভোগে পড়ে। 

রাজধানীর দক্ষিণ সিটির ৬৫ নাম্বার ওয়ার্ডর বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম মজনু বলেন, ‘‘আমাদের ভোটে ইশরাক বিজয়ী হয়েছেন। সেটি আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ সরকারের লোকজন জোর করে তাকে বাইরে রেখেছে। আমরা এর প্রতিবাদে নেমেছি। ছয় দিন ধরে চলা এই অবস্থান কর্মসূচি আরও তীব্র হচ্ছে। গত শনিবার ও রোববার সচিবালয়ের দিকে মিছিল করে হাজারো মানুষ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।’’

এই পরিস্থিতিতে শহরের প্রাণকেন্দ্রে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা নিয়ে শঙ্কিত নাগরিকরা। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা এখানেই থাকবেন, যতদিন না ইশরাক দায়িত্ব পান।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার থেকেই নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে। ফলে ভেঙে পড়েছে সেবা কার্যক্রম, ব্যাহত হচ্ছে নগর পরিচালনার দৈনন্দিন কাজকর্ম।

২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে তাপস আত্মগোপন করলে চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ওই ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেয়।

ঢাকা/এএএম//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র অবস থ ন নগর ভবন ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

জনমিতির লভ্যাংশ কর্মশক্তি হইয়া উঠুক

দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির যেই চিত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান অর্থবৎসরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাইয়া ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে উপনীত, যাহা গত বৎসর একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে উক্ত সময়ে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লক্ষ হইতে বৃদ্ধি পাইয়া ২৭ লক্ষ ৩০ সহস্রে থিতু হইয়াছে। বিষয়টা উদ্বেগজনক এই কারণে, বেকারত্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিঘাত কাহারও জন্য সুখকর নহে। বৈধ আয়ের পন্থা না পাইলে অনেকে জীবিকা নির্বাহে ক্ষেত্রবিশেষে নীতি-নৈতিকতাও বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না। সমাজবিজ্ঞানীরা উহাকেই চৌর্যবৃত্তি, ডাকাতি, রাহাজানির ন্যায় নানাবিধ অপরাধ বিস্তারের মোক্ষম কারণ বলিয়া মনে করেন। এহেন পরিস্থিতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতারও জ্বালানিরূপে সাব্যস্ত হইয়া থাকে। 

দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির এই চিত্র এমন সময়ে জনসমক্ষে উপস্থিত, যখন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরিণতিতে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থামিয়া যায় নাই। বরং মব সন্ত্রাস নামক নূতন নূতন অস্থিতিশীলতা অপরাধের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়া চলিয়াছে। প্রসঙ্গক্রমে বলিয়া রাখা প্রয়োজন, বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তাহারাই, যাহারা জরিপ শুরুর পূর্বের সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কার্যে ব্যাপৃত হন নাই, কিন্তু কার্যের অভিপ্রায়ে ঐ সাত দিন এবং আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং জরিপ শুরুর পূর্বের ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কার্যের সন্ধান করিয়াছেন। বেকারের উল্লিখিত সংজ্ঞা অধুনা অচল। অর্থাৎ প্রকৃত বেকারত্ব বিবিএসের জরিপের তথ্য অপেক্ষা অধিকতর হইবার আশঙ্কাই প্রবল। এই প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব লইয়া রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকগণ, তৎসহিত নাগরিকদেরও মনোজগতে ভাবনার উদয় হইবার প্রয়োজন রহিয়াছে।

বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণ অন্বেষণে অর্থনীতিবিদগণ সঠিকভাবেই দীর্ঘদিন ধরিয়া চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার অতিরিক্ত হইবার ঘটনাকে দায়ী করিয়াছেন। বেসরকারি খাতে বটেই, সরকারি খাতেও নূতন কর্মসংস্থান বর্তমানে নাই বলিলেই চলে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-বিসিএস পরীক্ষা প্রায় এক বৎসর ধরিয়া বন্ধ। এমনকি ‘বিসিএসজট’ চলিবার সংবাদও আসিয়াছে। অন্যান্য সরকারি চাকুরিতেও নিয়োগ প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ কর্মসংস্থানের বৃহত্তম খাত বলিয়া পরিচিত বেসরকারি খাতে নিয়োগের যে খরা চলিতেছিল; যাহার কারণে তৎকালে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যঙ্গ করিয়া চাকুরিবিহীন প্রবৃদ্ধিরূপে বর্ণনা করা হইত, সেই খরা অদ্যাবধি কাটে নাই। তদুপরি, বিশেষত গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বিশৃঙ্খলার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ লইয়া বিবিধ প্রকার দুর্বৃত্ত বহু শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাইয়া সেইগুলি বন্ধ করিয়া দিয়াছে। অন্য কিছু কারণেও বহু কলকারখানার দরজা তালাবদ্ধ। ফলস্বরূপ, গত ৯ মাসে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাগরিক বেকারের খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করিয়াছেন।

আমর জানি, তারুণ্যের আধিক্যের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতির লভ্যাংশের যুগে রহিয়াছে, যাহা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ ইতোপূর্বে বিশেষত অর্থনৈতিক উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়াছে। স্বভাবতই, এই তরুণ কর্মশক্তিকে উপযুক্ত কার্যে প্রযুক্ত করিতে না পারিলে রাষ্ট্রের জন্য তাহা বিশাল অপচয়রূপে প্রতিভাত হইবে। সরকারের শীর্ষ মহল দাবি করিতেছে, অর্থনীতি ইতোমধ্যে স্থিতিশীল হইয়া উঠিয়াছে। যাহার সুফল অচিরেই জনগণ পাইতে শুরু করিবে। কিন্তু বেকারত্ব বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকিলে তো সকলই গরল ভেল!

সম্পর্কিত নিবন্ধ