একটি ভিডিওর কারণে বিগত সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। খেটেছেন জেল। হারিয়েছেন কাজ। এমনকি ঠকেছেন শিল্পমাধ্যম থেকেও। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি বলেছিলেন তার মত ঘটনা যেন কোনো শিল্পীর জীবনে না ঘটে। কিন্তু গতকাল থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন নুসরাত ফারিয়াকে।

তাকে গ্রেপ্তারের পর নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন পোস্ট শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ।

প্রথম পোস্টে তিনি লিখেছেন, “রাষ্ট্র কি ভুলে যাচ্ছে? আপনারা বাংলাদেশকে কথা দিয়েছিলেন, তার বাক স্বাধীনতা থাকবে, শিল্পী তার শিল্প চর্চা করবে আপন লয়ে। আরও কত কি? গোল্ডফিশ মেমোরি হলে তো হবে না! মনে করানোর ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জানে”

দ্বিতীয় পোস্টে নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে নেওয়ার একটি ছবি পোস্ট করেছেন নওশাবা। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “দমটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। কেনো? কেনো রাষ্ট্র? কি দোষে একজন শিল্পী আজ এইভাবে? জনগণ জানতে চায়। জানার অধিকার আমাদের আছে! আমরা বারবার কি উদাহরণ সৃষ্টি করছি?”

তৃতীয় পোস্ট হিসেবে অভিনেতা মোস্তাফিজ নূর ইমরানের লেখা শেয়ার করেছেন নওশাবা। সেখানে লেখা, ‘আমরা শিল্পী। আমরা স্বাধীন। আমরা সর্বজনীন। আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা শুধু আমাদের কাজ করি।’

এরপর তিনি সতর্কবার্তা দিয়ে করে লিখেছেন, ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: শিল্প ও শিল্পীর অবমূল্যায়ন, জাতির ধ্বংসের কারণ। শিল্পী যদি সত্যিই অপরাধী প্রমাণিত হয়, অবশ্যই তার সুষ্ঠু বিচার হোক। আত্মপক্ষ সমর্থন থাকুক। কোনও অপরাধের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলেও তার বিচার আইন অনুযায়ী অবশ্যই হোক। কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে এমন কোনও ফায়দা যদি নিয়ে থাকেন, যেটার কারণে কারও ক্ষতি হয়েছে, তবে অবশ্যই ন্যায়বিচার হোক। দুর্নীতি থাকলে সেটা প্রমাণ হোক, সেই অনুযায়ী শাস্তিও হোক। কিন্তু মিথ্যা মামলা, আটক, হয়রানি, পাবলিক, মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল, মব ভায়োলেন্স- এসব মানহানি বন্ধ হোক এখনই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ নওশ ব আহম দ নওশ ব

এছাড়াও পড়ুন:

উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলকে থামাতে পারবে?

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর ছিল বিভ্রান্তির এক মহড়া। যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের মধ্যকার সম্পর্কে পুনরায় ভারসাম্য নিয়ে আসা ও দ্বিধাগ্রস্ত ধারণা; উভয় ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। রিয়াদে তিনি সৌদি রাজপরিবারকে বলেছিলেন, ‘কীভাবে জীবন যাপন করতে হয়, সে ব্যাপারে আর কোনো বক্তৃতা’ দেওয়া হবে না। তিনি সিরিয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন, যাতে দেশটি ‘নতুনভাবে শুরু’ করতে পারে এবং তিনি উট ও বিলাসবহুল স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ‘একজন নির্মাণকারী হিসেবে ‘তিনি কাতারি প্রাসাদের ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘এটি নিখুঁত মার্বেল’।

জো বাইডেন জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড এবং ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সরকারের ভূমিকার জন্য কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর মনে হয়েছিল, তিনি তা ভুলে গেছেন অথবা বুঝতে পেরেছেন– তিনি কথা রাখতে পারবেন না। ট্রাম্পের কাছ থেকে এমন কোনো মিশ্র ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। যেমন: আপনি ধনী, আমাদের আপনাকে প্রয়োজন। আপনি আপনার মতোই থাকতে পারবেন।
ফলাফল হলো সমান লেনদেন নিয়ে আসা; বিলিয়ন ডলারের চুক্তি এবং লাভের বিনিময়ে দু’পক্ষের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী লেনদেন বিন্যাস করা। ট্রাম্প তিনটি উপসাগরীয় দেশ সফর করেছিলেন। এগুলো হলো কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। দেশ তিনটির অর্থনৈতিক রূপান্তরে বিশাল জাতীয় প্রকল্প এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেওয়ায় তাদের সেটি দেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছিল। এই বাসনা কেবল ধনী অজ্ঞ হিসেবেই নয়, বরং নিজেদের প্রচেষ্টায় ক্ষমতার অত্যাধুনিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

কিন্তু ট্রাম্পের সফরে একটি মৌলিক ফাঁক রয়েছে, যা গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক ঘোষণার কিছু অংশে ধরা পড়েছে। ইসরায়েল যখন গাজায় তার হামলা তীব্র করে তুলেছে, যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনায় তাদের আগ্রহের অভাব নির্দেশ করে। এ সময় চারদিকে জোরালোভাবে হামলার নিন্দা জানানো হয়। যখন ট্রাম্পকে মার্কিন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছিল, তখন একটি স্পষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়নি। আর তিনি এমন একটি দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা এই অঞ্চলে সামরিক অভিযানে অস্ত্র সরবরাহ ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। 

পুরো ভ্রমণের বৈশিষ্ট্য ছিল এক বিচ্ছিন্নতা। উদীয়মান শক্তিগুলোর একটি ব্লকের সব জোরালো ভাষা ও চিত্রকল্পের মধ্যে যে প্রশ্নটি রয়ে গেল সেটি হলো, এই উঠতি শক্তি ঠিক কী কারণে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কি কেবল সেই ক্ষমতা, যা এই রাষ্ট্রগুলো  যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও অনুকূল বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করার অধিকার দেয়? আর তাদের নিন্দা বা ‘বক্তৃতা’ দেওয়ার ভয় ব্যতিরেকে তাদের নিজস্ব জমিতে বৈদেশিক নীতির সুবিধামতো ব্যবহার এবং প্রকল্পগুলো অনুসরণ করার অনুমতি দেয়? নাকি এমন ক্ষমতা যা রাজনৈতিক ফলাফলকে অর্থপূর্ণভাবে প্রভাবিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের পথ পরিবর্তন করতে রাজি করাতে পারে। এটি এমন এক বিষয় যা এখন কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং আরব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
যুদ্ধ এখন লেবানন ও সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে; জর্ডান ও মিসর চরম চাপের মধ্যে। ট্রাম্প এখনও গাজা থেকে মানুষকে ‘পুনর্বাসন’ করার লক্ষ্যে তাঁর জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনাটি ক্রয় করেই চলেছেন। এখন লিবিয়ার পালা। আর যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে তাঁর প্রশাসনের প্রাথমিক দিনগুলোতে যে গতি দেখা গিয়েছিল, তার এখন অস্তিত্ব নেই। কারণ ইসরায়েল গাজার অন্যান্য অঞ্চল দখল করার জন্য অভিযান তীব্র করছে। একদিকে উপসাগরজুড়ে বিলাসবহুল দৃশ্যের উন্মোচন এবং মার্বেলের গুণমান নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য, অন্যদিকে কয়েক মাস ধরে গাজায় কোনো খাবার, পানি বা ওষুধ প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা। 

যদি এই শক্তিগুলোর এখনও তাদের নিজেদের আঙিনায় কী ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ স্থিতিশীল ও নির্ধারণের ক্ষমতা না থাকে; অথবা যেখানে তাদের অন্য আরবদের ক্ষুধা, বাস্তুচ্যুতি ও নির্যাতন থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা এবং দায়িত্ব রয়েছে, সেখানে যদি প্রকৃতপক্ষে তারা নেতৃত্ব গ্রহণ না করে, তাহলে এটি অর্থনৈতিক সাফল্যের একটি বিস্তৃত নাটক। কথার চেয়ে কাজ বড়। প্রকৃতপক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ।

নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক;
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর 
ইফতেখারুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ