চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব। হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ‘বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। শিল্পীদের নিরাপত্তা, মর্যাদার দাবিতে অভিনয় শিল্পী সংঘ বিবৃতিও দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, চিত্রনায়িকা পরীমণি, নির্মাতা আশফাক নিপুণ, অভিনেতা বাশার,  নির্মাতা শিহাব শাহীন, র‌্যাপার তাবীব, অভিনেতা ও নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবনসহ আরও অনেকে। 

চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী নুসরাত ফারিয়ার শাস্তি হোক। নইলে মুক্তি দেওয়া হোক এ পরিস্থিতি থেকে। কিন্তু কোনো চরিত্রে অভিনয়ের কারণে বা ঢালাওভাবে যে গায়েবি মামলা হচ্ছে তার শিকার হলে বেদনাদায়ক।”

অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন। তিনি লিখেছেন, “রাষ্ট্র কী ভুলে যাচ্ছে? আপনারা বাংলাদেশকে কথা দিয়েছিলেন, তার বাকস্বাধীনতা থাকবে, শিল্পী তার শিল্পচর্চা করবে আপন লয়ে, আরও কত কী! গোল্ডফিশ মেমোরি হলে তো হবে না! মনে করানোর ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জানে!”

“উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!” নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম একবাক্যে পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।   

অভিনেতা সোহেল রানা লিখেছেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়া বলেন এই রাষ্ট্রে শিল্পী কীভাবে তার কর্মটা করবে?’’

নির্মাতা ইমেল হক লিখেছেন, ‘‘আব্দুল হামিদসহ চিহ্নিত অপরাধীদের পালাতে সাহায্য করা হয় আর নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাহ সরকার, বাহ!’’
সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান লিখেছেন ছড়া : 
‘‘চোখের সামনে পার পেয়ে যায় 
বোয়াল মাগুর রুই, 
নরম কোমল নায়িকা ধরে 
জেলের ভেতর থুই। 
মন্ত্রী-নেতার সখ্যে যদি 
খুনের মামলা হয়, 
তুমি আমি গান কবিতায় 
কেউই মুক্ত নয়।’’

নাট্যনির্দেশক আলী হায়দার পুরো ঘটনা ‘উদ্ভট আর অপরিপক্ব’ উল্লেখ করে লিখেছেন ‘‘নুসরাত ফারিয়া ন্যায্যবিচার পাক এই দাবি জানাচ্ছি।’’

উল্লেখ্য রবিবার (১৮ মে) দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি তিনি। সোমবার আদালতের নির্দেশে এই নায়িকাকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

ঢাকা/রাহাত//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

জনমিতির লভ্যাংশ কর্মশক্তি হইয়া উঠুক

দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির যেই চিত্র বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান অর্থবৎসরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাইয়া ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে উপনীত, যাহা গত বৎসর একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে উক্ত সময়ে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লক্ষ হইতে বৃদ্ধি পাইয়া ২৭ লক্ষ ৩০ সহস্রে থিতু হইয়াছে। বিষয়টা উদ্বেগজনক এই কারণে, বেকারত্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিঘাত কাহারও জন্য সুখকর নহে। বৈধ আয়ের পন্থা না পাইলে অনেকে জীবিকা নির্বাহে ক্ষেত্রবিশেষে নীতি-নৈতিকতাও বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না। সমাজবিজ্ঞানীরা উহাকেই চৌর্যবৃত্তি, ডাকাতি, রাহাজানির ন্যায় নানাবিধ অপরাধ বিস্তারের মোক্ষম কারণ বলিয়া মনে করেন। এহেন পরিস্থিতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতারও জ্বালানিরূপে সাব্যস্ত হইয়া থাকে। 

দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির এই চিত্র এমন সময়ে জনসমক্ষে উপস্থিত, যখন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরিণতিতে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থামিয়া যায় নাই। বরং মব সন্ত্রাস নামক নূতন নূতন অস্থিতিশীলতা অপরাধের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়া চলিয়াছে। প্রসঙ্গক্রমে বলিয়া রাখা প্রয়োজন, বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তাহারাই, যাহারা জরিপ শুরুর পূর্বের সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কার্যে ব্যাপৃত হন নাই, কিন্তু কার্যের অভিপ্রায়ে ঐ সাত দিন এবং আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং জরিপ শুরুর পূর্বের ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কার্যের সন্ধান করিয়াছেন। বেকারের উল্লিখিত সংজ্ঞা অধুনা অচল। অর্থাৎ প্রকৃত বেকারত্ব বিবিএসের জরিপের তথ্য অপেক্ষা অধিকতর হইবার আশঙ্কাই প্রবল। এই প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব লইয়া রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকগণ, তৎসহিত নাগরিকদেরও মনোজগতে ভাবনার উদয় হইবার প্রয়োজন রহিয়াছে।

বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণ অন্বেষণে অর্থনীতিবিদগণ সঠিকভাবেই দীর্ঘদিন ধরিয়া চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার অতিরিক্ত হইবার ঘটনাকে দায়ী করিয়াছেন। বেসরকারি খাতে বটেই, সরকারি খাতেও নূতন কর্মসংস্থান বর্তমানে নাই বলিলেই চলে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-বিসিএস পরীক্ষা প্রায় এক বৎসর ধরিয়া বন্ধ। এমনকি ‘বিসিএসজট’ চলিবার সংবাদও আসিয়াছে। অন্যান্য সরকারি চাকুরিতেও নিয়োগ প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ কর্মসংস্থানের বৃহত্তম খাত বলিয়া পরিচিত বেসরকারি খাতে নিয়োগের যে খরা চলিতেছিল; যাহার কারণে তৎকালে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যঙ্গ করিয়া চাকুরিবিহীন প্রবৃদ্ধিরূপে বর্ণনা করা হইত, সেই খরা অদ্যাবধি কাটে নাই। তদুপরি, বিশেষত গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বিশৃঙ্খলার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ লইয়া বিবিধ প্রকার দুর্বৃত্ত বহু শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাইয়া সেইগুলি বন্ধ করিয়া দিয়াছে। অন্য কিছু কারণেও বহু কলকারখানার দরজা তালাবদ্ধ। ফলস্বরূপ, গত ৯ মাসে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাগরিক বেকারের খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করিয়াছেন।

আমর জানি, তারুণ্যের আধিক্যের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতির লভ্যাংশের যুগে রহিয়াছে, যাহা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ ইতোপূর্বে বিশেষত অর্থনৈতিক উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়াছে। স্বভাবতই, এই তরুণ কর্মশক্তিকে উপযুক্ত কার্যে প্রযুক্ত করিতে না পারিলে রাষ্ট্রের জন্য তাহা বিশাল অপচয়রূপে প্রতিভাত হইবে। সরকারের শীর্ষ মহল দাবি করিতেছে, অর্থনীতি ইতোমধ্যে স্থিতিশীল হইয়া উঠিয়াছে। যাহার সুফল অচিরেই জনগণ পাইতে শুরু করিবে। কিন্তু বেকারত্ব বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকিলে তো সকলই গরল ভেল!

সম্পর্কিত নিবন্ধ