‘ইস্তিখারা’ আরবি শব্দ যার অর্থ আল্লাহর কাছে কোনো কাজ বা সিদ্ধান্তের জন্য কল্যাণ ও হিদায়াত প্রার্থনা। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) আমাদের কোরআনের সুরা শেখানোর মতো সকল বিষয়ে ইস্তিখারার পদ্ধতি শিখিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৬৬)
ইস্তিখারার আগে নিজে চিন্তাভাবনা করা এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত, বিশেষ করে বিয়ে, চাকরি বা বিনিয়োগের মতো বড় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এবং তাদের সঙ্গে বিষয়ে পরামর্শ করো। তারপর যখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)
ইস্তিখারার পদ্ধতি
ইস্তিখারা করা অত্যন্ত সহজ।
১.
প্রথমে দুই রাকাত নফল নামাজ: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তবে সে ফরজ নামাজ ছাড়া দুই রাকাত নামাজ পড়বে এবং তারপর দোয়া করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৬২)
২. ইস্তিখারার দোয়া: নামাজের পর নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে হবে। প্রয়োজনে কাগজ থেকে দেখেও পড়া যায়।
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্তাখিরুকা বিইলমিকা, ওয়া আস্তাকদিরুকা বিকুদরাতিকা, ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আজিম। ফাইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু, ওয়া আনতা আল্লামুল গুইয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা খায়রুন লি ফি দিনি ওয়া মা’আশি ওয়া আকিবাতি আমরি (বা আজিলি আমরি ওয়া আজিলিহি) ফাকদুরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লি সুম্মা বারিক লি ফিহি। ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা শাররুন লি ফি দিনি ওয়া মা’আশি ওয়া আকিবাতি আমরি (বা ফি আজিলি আমরি ওয়া আজিলিহি) ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরিফনি আনহু। ওয়াকদুর লিল খায়রা হায়সু কানা সুম্মা আরদিনি বিহি।
আরও পড়ুনজীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)১৩ মার্চ ২০২৫অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমার জ্ঞানের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করি, তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে শক্তি চাই এবং তোমার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। কারণ তুমি সবকিছু নির্ধারণ করতে পারো, আমি পারি না; তুমি সব জানো, আমি জানি না; আর তুমি অদৃশ্যের জানাশোনা। হে আল্লাহ, যদি তুমি জানো যে এই কাজটি আমার ধর্ম, জীবিকা এবং পরিণতির জন্য কল্যাণকর, তবে তা আমার জন্য নির্ধারণ করো, সহজ করো এবং তাতে বরকত দাও। আর যদি তুমি জানো যে এটি আমার ধর্ম, জীবিকা এবং পরিণতির জন্য ক্ষতিকর, তবে তা আমার থেকে দূরে রাখো এবং আমাকে তা থেকে দূরে রাখো। আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করো, যেখানেই তা থাকুক, এবং আমাকে তাতে সন্তুষ্ট করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৬৬)
দোয়াটি মুখস্থ করতে প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে ফ্রি অডিও ফাইল ডাউনলোড করে বারবার শুনতে পারেন।
৩. নির্দিষ্ট প্রয়োজন উল্লেখ: নবীজি (সা.) বলেছেন, দোয়ার সময় নির্দিষ্ট প্রয়োজন উল্লেখ করতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৬২)
যদি আরবি না জানা থাকে, তবে মনে মনে বিষয়টি চিন্তা করা যথেষ্ট। নিজের ভাষায়ও প্রয়োজন উল্লেখ করা যায়। দোয়ার মাঝখানেও প্রয়োজনটি উল্লেখ করা যায়।
৪. সিদ্ধান্ত নিন ও কাজ করুন: যদি হৃদয়ে স্বস্তি অনুভব করেন এবং বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যায়, তবে বিসমিল্লাহ বলে এগিয়ে যান। আর যদি অস্বস্তি বোধ করেন এবং বাধার সম্মুখীন হন, তবে দিক পরিবর্তন করুন। যদি এখনো বিভ্রান্তি থাকে, তবে ইস্তিখারা আবার করুন। মনস্থির না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যান।
আরও পড়ুনফজর নামাজ শয়তানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীদের বিজয়১৮ এপ্রিল ২০২৫ইস্তিখারার সময় যা বর্জনীয়
ইস্তিখারা করতে গিয়ে অনেকেই ভুল করেন, যা কিছুতেই উচিত নয়। যেমন:
১. অন্যকে দিয়ে ইস্তিখারা করানো: ইস্তিখারার দোয়ায় ‘আমি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, তাই নিজেই করতে হবে। অন্য কাউকে, এমনকি আলেম বা পুণ্যবান ব্যক্তিকে দিয়ে করানোর কোনো ধর্মীয় ভিত্তি নেই। আল্লাহ বলেন, ‘…নিশ্চয়ই আমি নিকটে আছি। যখন কোনো প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
২. স্বপ্ন বা অলৌকিক চিহ্নের অপেক্ষা: ইস্তিখারার জন্য স্বপ্ন দেখার প্রয়োজন নেই। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জটিল এবং শুধু যোগ্য ব্যক্তিরাই তা করতে পারেন। দোয়ায় বলা হয়েছে, ‘…আমার জন্য সহজ করো…।’ তাই কাজের ক্ষেত্রে সহজতা বা অসুবিধা হতে পারে আল্লাহর নির্দেশনার চিহ্ন।
৩. স্পষ্ট বিষয়ে ইস্তিখারা: ইস্তিখারা শুধু ইসলামে অনুমোদিত বিষয়ে করা যায়। ফরজ কাজের জন্য ইস্তিখারা করার দরকার নেই। একইভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ এড়াতে ইস্তিখারা করার প্রয়োজন নেই।
মনে রাখবেন
ইস্তিখারার জন্য নামাজ পড়তে গিয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাতে নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়তে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। ইস্তিখারার জন্য নির্দিষ্ট দিনের সংখ্যা নেই যে এত দিন করতে হবে বা এত দিন পরে আর করা যাবে না। ইস্তিখারার পর নীরব থাকা বা তৎক্ষণাৎ ঘুমানোর প্রয়োজন নেই। আরেকটি কথা হলো, ইস্তিখারার দোয়ায় অতিরিক্ত শব্দ যোগ করা যাবে না।
ইস্তিখারা কোনো নির্দিষ্ট ইচ্ছা পূরণের জন্য নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশনা প্রার্থনার জন্য। যদি ইস্তিখারার পর সিদ্ধান্ত ভালো না মনে হয়, তবু আল্লাহকে দোষারোপ করবেন না। এটি হয়তো গোপন কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ বলেন, ‘…হয়তো তুমি যা অপছন্দ করো, তা তোমার জন্য কল্যাণকর এবং যা পছন্দ করো, তা তোমার জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, তুমি জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)
আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র র জন য ক র জন য ন ম র জন য আল ল হ উল ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ টাকার জন্য বন্ধুকে হত্যা
মমিন হোসেন (২০) ও রাকিব হোসেন (১৯) দুই বন্ধু। রাকিব পরিচ্ছন্নকর্মী আর মমিন দোকানের কর্মচারী। আম বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন মমিন। রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনির গাছ থেকে আম পাড়েন তারা। পরে সেই আম কলোনির বাজারে বিক্রি করে ৩০ টাকা কম–বেশি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মমিনকে খুন করে রাকিব। সোমবার রাতে তাকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হুসাইন মুহাম্মাদ ফারাবী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এসি হুসাইন মুহাম্মাদ ফারাবী বলেন, গত ১২ মে সন্ধ্যায় রাকিব, মমিন ও তাদের আরেক বন্ধু আলামিন মিলে এজিবি কলোনির আল হেলাল জোনের আম গাছ থেকে আম পাড়েন। পরে সেই আম এজিবি কলোনি কাঁচা বাজারে ৩৯০ টাকায় বিক্রি করেন তারা। টাকার একভাগ (১৩০ টাকা) নিয়ে আলামিন চলে যায়। বাকি ২৬০ টাকার মধ্যে রাকিব ৮০ টাকা খরচ করে। ওইদিন রাতে মতিঝিল পোস্টাল অফিসার্স কলোনির সামনে ময়লার ডাস্টবিনের পাশে মমিনকে আম বিক্রির ১০০ টাকা দেয়। তিনি ভাগের ৩০ টাকা দাবি করলে রাকিব ও মমিনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা দু’জন বাড়ি চলে যায়।
তিনি বলেন, পরের দিন একই স্থানে তাদের মধ্যে আবার টাকা নিয়ে মারামারির একপর্যায়ে রাকিব আম কাটার ছুরি দিয়ে মমিনের গলার আঘাত করে। মমিন রাস্তার উপরে পড়ে গেলে রাকিব ঢাকা মেডিকেলে কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক মমিনকে মৃত ঘোষণা করলে রাকিব লাশ ফেলে পালিয়ে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ চলে যায়।
এসি বলেন, ওই ঘটনায় নিহত মমিনের বাবা ফিরোজ শেখ মতিঝিল রাকিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার এসআই জুলহাস উদ্দিন ৭ দিনের মধ্যে রাকিবকে গ্রেপ্তার করেন। মঙ্গলবার আসামি রাকিবকে আদালতে তোলা হয়। আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।