এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি ও অসহযোগ কর্মসূচির ডাক আন্দোলনকারীদের
Published: 21st, May 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের অপসারণ ও অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ডাক দেয় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসিনা আক্তার, উপ-কর কমিশনার শাহাদাত জামিল শাওন ও মোস্তফিজুর রহমানসহ পরিষদের সিনিয়র কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিস্তারিত আসছে.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের সেই ভয়াবহ রাতে যা ঘটেছিল
চা শ্রমিকদের মাতৃভূমিতে ফেরার আন্দোলন ইতিহাসে ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। আজ ২০ মে, ১৯২১ সালের এই তারিখে চা শ্রমিকদের চাঁদপুর স্টেশন থেকে নিজ নিজ ভূমির দিকে যাত্রা করার কথা ছিল। অবশ্য শ্রমিক আসা শুরু হয়েছিল মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই।
শুরুর দিকে চাঁদপুর রেলস্টেশনে জড়ো হওয়া শ্রমিকেরা স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের সহায়তায় গোয়ালন্দগামী জাহাজে উঠে পড়েন। ওই সময় চাঁদপুরের মহকুমা প্রশাসক ছিলেন সুশীল কুমার সিংহ। তিনি শ্রমিকদের সহযোগিতা করেছিলেন কিন্তু কিছুদিন পরেই তৎকালীন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ম্যাকফরসন চাঁদপুর রেলস্টেশনে এসে হাজির হন। পরে ঘটনা নির্বিচারে হত্যার দিকে গড়ায়। তার নির্দেশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোর্খা সৈন্য স্টেশন ঘিরে ফেলে। ট্রেনের টিকেট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়, জাহাজের পাটাতন তুলে দিয়ে যাত্রীদের মেঘনায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
মোঃ আবুল হাসান অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সদস্য, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটি উপদেষ্টা, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘চা শ্রমিকরা কলিমগঞ্জ রেলস্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন নারী ছোট শিশুদেরকে নিয়ে ট্রেনে রওনা দিতে পেরেছিলেন। পুরুষেরা হাঁটা শুরু করেছিলেন। কিছু মানুষ জাহাজে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন এবং কিছু মানুষ জাহাজে উঠতেও পেরেছিলেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে তৎকালীন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের যে প্রতিনিধি ম্যাকফরসন সে চাঁদপুরে উপস্থিত হয়ে যাত্রীদের জাহাজে উঠতে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর জাহাজের পাটাতন সরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শ্রমিক নদীতে ভেসে যান। এই ঘটনা উনিশ, বিশ তারিখ জুড়ে হয়েছে। এবং রাতের বেলা ‘গোর্খা সৈন্য’ অপেক্ষমাণ শ্রমিকদের ওপর আক্রমণটা করে অনেককে হত্যা করেছে। ’’
আরো পড়ুন:
ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
হিলিতে আরনু জুটমিল বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকেরা দিশেহারা
গোর্খা সৈন্য সম্পর্কে মোঃ আবুল হাসান জানান, এই চা শ্রমিকদেরকে যারা সংগ্রহ করেছেন তারা মূলত এক ধরণের দালাল। যেসব অঞ্চল থেকে চা শ্রমিকদেরকে আনা হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াতে একটা ব্যবসা গড়ে উঠেছিল। অনেকটা দাস কেনা-বেচার ব্যবসায়ের মতো। চা বাগানে শ্রমিকদেরকে আনার পরে এদের মধ্যে থেকে কিছু মানুষকে মালিকপক্ষ বিশেষ বাহিনী হিসেবে বা গোর্খা পুলিশ হিসেবে ব্যবহার করতো।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একটি বড় অংশ ছিল অসহযোগ আন্দোলন। মুল্লুক চলো আন্দোলনও ছিল এক ধরণের অসহযোগ আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলনে চা শ্রমিকদের সম্পকৃক্ততা নানান ফর্মে, নানান মাত্রায় ছিল। মুল্লুক চলো আন্দোলন ঘিরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটার পরে সে সময় কংগ্রেসের প্রাদেশিক পর্যায়ের নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বস্ত্রীক চাঁদপুরে এসে বাকি ভূক্তভোগী শ্রমিকদের দেখে যান, খোঁজখবর নেন।
‘‘ওই আন্দালনের জের ধরে সাড়ে চার হাজার রেল শ্রমিকদের টার্মিনেট করা হয়েছিল। তো এই সব ধর্মঘটে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের নানাভাবে ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দিয়েছিলেন দীনবন্ধু, চার্লস অ্যান্ড রুলস। ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে টার্মিনেট করার মতো পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও ছিল। আমাদেরকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে নানান সময়ে। জবরদস্তির ব্যাপারটা এখনও নানানভাবে আছে। বিমোট এরিয়াতে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানগুলোতে নানা রকম জবরদস্তির নজির পাওয়া যায়।’’—যোগ করেন মোঃ আবুল হাসান
তিনি আরও বলেন, ‘‘কাজ করতে গিয়ে দেখেছি পনেরো বছর আগেও এই জবরদস্তি ব্যাপারটা প্রবল ছিল। এমনকি এখনও জবরদস্তি আছে। একজন চা শ্রমিক যদি চা বাগানে যে ধরণের মজুরি বা সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় সে যদি এটা মেনে নিতে না চায় তাহলে আইনগতভাবে বাগানে থাকার সকল অধিকার হারাবে। ২০০৫,’০৭ এই সময়ে যেতাম তখন যাদেরকে সেন্টার করে আমরা যেতাম তাদেরকে নোটিশ করা হতো। বা গ্রাম চৌকিদার ডেকে নিয়ে শোকোজ করা, ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে টার্মিনেট করা; এই ধরণের পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও ছিল।’’
বিশ্বের রাজনীতির সুফলগুলো এই চা শ্রমিকদের ঘরে না পৌঁছালেও কুফলগুলো কালে কালে, সময়ে সময়ে ঠিকই পৌঁছেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব থেকেও মুক্ত ছিলেন না তারা।
মোঃ আবুল হাসান বলেন, ‘‘মোটা দাগে বলতে গেলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে চা শিল্প যদিও লাভ করছিল কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের দোহাই দিয়ে যে ধরনের চুক্তিতে কিংবা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার আশ্বাসে চা শ্রমিকদের আনা হয়েছিল সেসব সুযোগ সুবিধাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে, মার্তৃভূমিতে ফিরতে পারেননি চা বাগানের শ্রমিকেরা। এখনও চলমান আইনের বিরুদ্ধে কথা বলার আইনী সুযোগ নেই কোনো শ্রমিকের। এরপরেও যেটুকু পরিবর্তন এসেছে তার পেছনে রয়েছে ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনের অনেক বড় প্রভাব।
ঢাকা/লিপি