জুনে রিজার্ভ দাঁড়াবে ৩০ বিলিয়ন ডলার: গভর্নর
Published: 21st, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আগামী মাসে রিজার্ভ ২৭ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার হবে। রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার জন্য সময় প্রয়োজন। বুধবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) আয়োজনে রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। পিআরআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের (আইজিসি) সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে আর্থিক উন্নয়নের ভৌগলিক ও ঐতিহাসিক প্রবণতা’ শীর্ষক একটি গবেষণা করেছে পিআরআই। গবেষণার ফলাফল প্রকাশের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস বা মোট রিজার্ভ এখন সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। অন্যদিকে আইএমএফে ব্যালান্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি। গভর্নর তার বক্তব্যে রিজার্ভের প্রাক্কলনে গ্রস নাকি বিপিএম–৬ বুঝিয়েছেন তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, আগামী মাসে আইএমএফের ১ দশমকি ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় হওয়ার কথা। আবার বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে। ফলে গভর্নর হয়ত গ্রস রিজার্ভ বুঝিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার। তিনি বলেন, ‘এই গবেষণা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের একটি স্থানিক ও কালানুক্রমিক চিত্র উপস্থাপন করেছে, যা জাতীয় গড়ের আড়ালে থাকা গভীর আর্থিক বৈষম্যকে স্পষ্টভাবে উন্মোচন করেছে। প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক উন্নয়নের জন্য প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে দেশের কোন কোন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠী মূলধারার ব্যাংকিং সেবা থেকে বাদ পড়ে আছে।’
পিআরআইর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে আর্থিক প্রবেশগম্যতার চরম বৈষম্য ফুটে উঠেছে। জাতীয়ভাবে মাত্র ১ শতাংশ ঋণ হিসাবধারী সমস্ত ঋণের ৭৫ শতাংশ পাচ্ছে এবং ৭৮ শতাংশ ঋণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত। দশকব্যাপী ব্যাংক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ধনী পূর্বাঞ্চলে ঘনীভূত রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তারা দেশের দরিদ্র অঞ্চলে পৌঁছাচ্ছে না বা সেবা দিচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে, পরিস্থিতিগত প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো গরিবদের জন্য ব্যাংকিং সেবা দিতে করছে না।’
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন আইজিসির বাংলাদেশের সিনিয়র উপদেষ্টা ড. নাসিরুদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (পরিসংখ্যান) মো. আনিস উর রহমান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড আহস ন এইচ মনস র অন ষ ঠ ন আর থ ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গরিব পাচ্ছে বিদ্যুৎ ভর্তুকির ছিটেফোঁটা, লাভবান ধনীরা
বিদ্যুতের ভর্তুকি বছরে ৬২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে এর বড় অংশ ধনীরা ভোগ করছেন। বিপরীতে গরিবরা ছিটেফোঁটা পাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে দেওয়া ভর্তুকির মাত্র ১২ শতাংশের সুবিধাভোগী সবচেয়ে গরিবরা। বিপরীতে ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ (এক-তৃতীয়াংশ) পাচ্ছেন সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ গ্রাহক, যার পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। বৈষম্যমূলক কাঠামোর কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি করছে।
আইএমএফের কারিগরি সহায়তা-সংক্রান্ত খসড়া প্রতিবেদনে এমন চিত্র তুলে ধরে সংস্থাটি ভর্তুকি কমাতে কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি দাম বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে। প্রয়োজনে সরাসরি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ। গত ৩০ জুন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ভর্তুকি সংস্কার শীর্ষক এ প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভর্তুকির সুফল মূলত ধনীরা পান। কারণ, তারাই বিদ্যুৎ-জ্বালানি বেশি ভোগ করেন। এ জন্য দাতাগোষ্ঠী ভর্তুকি থেকে বের হতে চাপ দেয়। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা– সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাঁর পরামর্শ, একদিকে ভর্তুকি কমাতে হবে, অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়াতে হবে। তাহলে ভর্তুকিশূন্য হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্তরা ভিন্ন নামে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি
২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। গত ১৬ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৭৮০। অথচ দেশের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা না থাকলেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্র বানিয়েছিল। ফলে উৎপাদন না করেও কেন্দ্র মালিকরা প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা সরকার থেকে পেয়েছে, যার প্রভাবে বেড়েছে বিদ্যুতের খরচ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট কিনতে লেগেছে ১১ টাকা ৭৪ পয়সা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৬ টাকা ১৮ পয়সা। মাত্র পাঁচ বছরে খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এ চাপ সামলাতে তৎকালীন সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
২০০৯ সালে বিদ্যুতের খুচরা দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। এখন হয়েছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। এর পরও উৎপাদন খরচের সঙ্গে খুচরা দামের সমতা হয়নি। লোকসান কমাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির ভর্তুকি ছিল ৭ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এর পর থেকে বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ হাজার ৮০০, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৫১১, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৪০০ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভর্তুকি ৬২ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ-গ্যাস মিলে ভর্তুকি ছিল জিডিপির ১.৩২ শতাংশ। তবে ২০২৩-২৪-এ তা কিছুটা কমে ১.১০ শতাংশ হলেও বাজেটের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।
আইএমএফ তিন ধাপে ভর্তুকি সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছে। স্বল্প মেয়াদে প্রাথমিক (লাইফলাইন) গ্রাহকদের দাম অপরিবর্তিত রেখে ধনীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এতে ২.১ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি শহরে ১০ এবং গ্রামের জন্য ৫ শতাংশ দাম বাড়াতে হবে। এতে ৬.১ শতাংশ ভর্তুকি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
মধ্য মেয়াদে সরাসরি ভর্তুকি তুলে দিয়ে সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ পরিবারকে মাসে ৪৮৮ টাকা করে সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এতে ৬৪ শতাংশ ভর্তুকি কমানো সম্ভব। আর দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ মূল্যকে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাভোগীদের তালিকার সঙ্গে যুক্ত করে প্রকৃত দরিদ্রদের ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। এতে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি সাশ্রয় সম্ভব।
পাশাপাশি আইএমএফ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ক্ষমতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ তথ্য ব্যবস্থাপনা একীভূত, অকার্যকর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সরকারকে সংস্কারের রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে বলেছে।
দাম বাড়ার চাপে সরকারের নারাজি
আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তির শর্ত হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি প্রতিবছর চারবার করে দাম বাড়িয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ভর্তুকি ধাপে ধাপে শূন্যে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়েনি।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, অনেক চাপ সত্ত্বেও তারা দাম বাড়াননি। এ মুহূর্তে এমন উদ্যোগ নেই, নিকট ভবিষ্যতেও দাম বাড়বে না। তবে সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও খাতভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে ভর্তুকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।