সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে। একই সঙ্গে এসব গ্রহ নিজ অক্ষের ওপরও ঘূর্ণায়মান। বিভিন্ন গ্রহ ঘূর্ণনের দিক, অক্ষের ওপরে হেলানো অবস্থানসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে বেশ আলাদা।
ঘূর্ণনের দিক থেকে বুধ গ্রহ খুব ধীরে ঘুরে থাকে। বুধ গ্রহের ঘূর্ণনের দিক অন্যান্য বেশির ভাগ গ্রহের মতোই পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, যা আসলে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত। বুধ গ্রহের একটি দিন পৃথিবীর প্রায় ৫৮ দশমিক ৬ দিনের সমান। গ্রহটির অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য ৩ ডিগ্রি হেলে থাকায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঋতু পরিবর্তন হয় না।
বুধের পরেই শুক্র গ্রহের অবস্থান। সৌরজগতের একমাত্র শুক্র গ্রহ, যা পূর্ব থেকে পশ্চিমে বা ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন অতীতে কোনো বড় সংঘর্ষের কারণে শুক্র গ্রহ এমন করে ঘুরছে। শুক্রের একটি দিন পৃথিবীর প্রায় ২৪৩ দিনের সমান, যা সৌরজগতের দীর্ঘতম। শুক্রের অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে প্রায় ১৭৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি হেলে আছে।
আমাদের পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরে। পৃথিবীর একটি দিন প্রায় ২৪ ঘণ্টা। পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে প্রায় ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি হেলে আছে। এই হেলানো অবস্থার কারণেই পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়। পৃথিবীর পরেই মঙ্গল গ্রহের অবস্থান, যা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরে। মঙ্গলের একটি দিন পৃথিবীর প্রায় ২৪ দশমিক ৬ ঘণ্টার সমান। মঙ্গলের অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে প্রায় ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি হেলে আছে, যা পৃথিবীর কাছাকাছি। এই কারণে মঙ্গলেও ঋতু পরিবর্তন দেখা যায়, তবে তা পৃথিবীর চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। গ্রহটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে খুব দ্রুত ঘোরে। আর তাই বৃহস্পতির একটি দিন পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টা কম হয়ে থাকে। বৃহস্পতির অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে মাত্র ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি হেলে আছে। এর ফলে এই গ্রহে কোনো উল্লেখযোগ্য ঋতু পরিবর্তন হয় না। আরেকটি বড় গ্রহ শনিও দ্রুত ঘোরে, পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। শনির একটি দিন পৃথিবীর প্রায় ১০ দশমিক ৭ ঘণ্টা। শনির অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে প্রায় ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি হেলে আছে, যা পৃথিবীর কাছাকাছি। এর ফলে শনিতে সুস্পষ্ট ঋতু পরিবর্তন দেখা যায়।
দূরের গ্রহ ইউরেনাস পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘোরে। এর কারণও সম্ভবত কোনো বড় সংঘর্ষ। ইউরেনাসের একটি দিন পৃথিবীর প্রায় ১৭ ঘণ্টা। ইউরেনাসের অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে প্রায় ৯৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি হেলে আছে, যার মানে এটি প্রায় কাত হয়ে ঘোরে। এই চরম হেলানো অবস্থার কারণে এর ঋতু পরিবর্তন খুবই অদ্ভুত। এক মেরু দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এবং অন্য মেরু অন্ধকারে থাকে। আরেক গ্রহ নেপচুন পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরে। নেপচুনের একটি দিন পৃথিবীর প্রায় ১৬ ঘণ্টা। নেপচুনের অক্ষ তার কক্ষপথের সঙ্গে প্রায় ২৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি হেলে আছে, যা পৃথিবী ও শনির কাছাকাছি। এর ফলে নেপচুনেও ঋতু পরিবর্তন দেখা যায়।
সূত্র: নাসা ও নোয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স রজগত র র গ রহ গ রহ র অবস থ দশম ক র একট
এছাড়াও পড়ুন:
সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহের প্রথম ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি
বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে ১০ গুণ বড় ‘ওয়াস্প-১৮ বি’ নামের দৈত্যকার একটি দূরবর্তী গ্যাসীয় গ্রহের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তথ্য ব্যবহার করে এবারই প্রথম সৌরজগতের বাইরে থাকা কোনো গ্রহের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এই যুগান্তকারী মানচিত্র গ্রহ বিজ্ঞানের একটি বড় পদক্ষেপ। সূর্যের বাইরের অন্য কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র এর আগে তৈরি করা হয়নি। মানচিত্র তৈরির এ কৌশল ব্যবহার করে মহাবিশ্বে আবিষ্কৃত ছয় হাজারের বেশি বহির্গ্রহকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
বহির্গ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অনেক দিনের। সৌরজগতের বাইরের নানা ধরনের গ্রহ দেখা যায়। কিছু গ্রহ আছে যাদের দুষ্টু গ্রহ বলা হয়। এসব গ্রহ কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে না। মহাবিশ্বে অনেকটা স্বাধীনভাবে বা বন্ধনহীনভাবে ভেসে বেড়ায়। নাসার এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ২৮টি বহির্গ্রহ শনাক্ত করা হয়েছে। আরও প্রায় আট হাজার বহির্গ্রহ গ্রহের মর্যাদার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, থ্রিডি ইক্লিপস ম্যাপিং কৌশল ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক মানচিত্রটি তৈরি করেছেন। এই প্রক্রিয়া স্পেকট্রোস্কোপিক ইক্লিপস ম্যাপিং নামেও পরিচিত। এর আগে বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তথ্য ব্যবহার করে বহির্গ্রহের টুডি বা দ্বিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন বহির্গ্রহ পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণ করা বিজ্ঞানীদের জন্য কঠিন বলে নতুন ত্রিমাত্রিক মানচিত্র বেশ উপকারী হবে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে আবিষ্কৃত ওয়াস্প-১৮ বি গ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের উপস্থিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী রায়ান চ্যালেঞ্জার বলেন, ‘টেলিস্কোপ ও এই নতুন কৌশলটির মাধ্যমে আমরা আমাদের সৌরজগতের প্রতিবেশীদের মতোই বহির্গ্রহকে বোঝার সুযোগ পাব।’
সূত্র: স্পেস ডট কম