মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সংযোগ গড়ে তোলা জরুরি। আর সেই সংযোগের জন্য বড় বাহন হতে পারে বই। এই তাগিদ যত বাড়বে, যত শক্তিশালী হবে, তত তরুণেরা দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার পর ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘আলী যাকের মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠ উদ্যোগ’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। জাদুঘরের মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যজন ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি আলী যাকেরের স্মৃতি বহমান রাখতে গ্রন্থ পাঠের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তিনটি বই পাঠ করে প্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে পুরস্কার জিতেছেন ৩০ জন শিক্ষার্থী।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সংযোগ গড়ে তোলাটা জরুরি আর সেই সংযোগের জন্য বই একটা খুব বড় বাহন হতে পারে।’ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের প্রয়াণ বড় ক্ষতি হলেও তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো স্বপ্নগুলো বহমান রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সবার উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন মফিদুল হক। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের সামাজিক শক্তির, বাংলাদেশের সমাজের যে নিজস্ব শক্তি রয়েছে, তারই একটা প্রতিফলন। এই বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর জানিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয়বারের মতো তিন মাসব্যাপী বইপাঠ কর্মসূচি শুরু হয়। ঢাকা মহানগরীর ১০টি পাঠাগার এতে যুক্ত হয় এবং প্রতিটি পাঠাগারে নির্বাচিত তিনটি বইয়ের পাঁচটি করে সেট দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রশীদ হায়দার সম্পাদিত ‘খুঁজে ফিরি: ১৯৭১-এ পিতৃ স্মৃতিহীন সন্তানদের কথা’, কলেজ পর্যায়ে ঝর্ণা বসু ও মফিদুল হক সম্পাদিত ‘অবরুদ্ধ অশ্রুর দিন: পারিবারিক স্মৃতি ভাষ্য ১৯৭১’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আনোয়ার পাশা রচিত ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ ছিল।

এবার ঢাকা মহানগর ছাড়াও সারা দেশ থেকে নির্বাচিত ৫০টি পাঠাগারকে বই প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। গ্রন্থ পাঠ শেষে স্কুল পর্যায়ে ২০৮টি, কলেজ পর্যায়ে ১৪২টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১২৮টি পাঠ প্রতিক্রিয়া জমা পড়ে। বিচারকদের দেওয়া নম্বরে প্রতি বিভাগে সেরা ১০ জনের প্রত্যেককে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই ও ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক পাঠককে দেওয়া হয় সনদ।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আরেক ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ‘আলী যাকের সফল মানুষ ছিলেন, তিনি যে কাজে হাত দিয়েছেন, সে কাজেই সফল হয়েছেন। যখন রাষ্ট্র কোনো সহায়তা করেনি, তখন আমরা এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডা.

জামিল স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নার্গিস আক্তার বানু, সীমান্ত গ্রন্থাগার ঢাকার সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতান আহমেদ টোকন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ খালেকের সন্তান রাকিবুল খালেক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর র অন ষ ঠ ন গ রন থ পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

শিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ভূমিধস জয় কাউকে কাউকে আনন্দিত করেছে, কাউকে শঙ্কিত বা চিন্তিত করেছে। তবে প্রায় সবাইকে অবাক করেছে। অবাক হওয়ারই কথা। কারণ, কিছুদিন আগে পর্যন্ত যে ছাত্র সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় দিতে পারত না, তাদের এ ধরনের জয় বিস্মিত করার মতো ব্যাপার বৈকি।

এই ফল দেখে কিছু মানুষ এ কারণে খুশি যে কয়েক দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দলের একচেটিয়া আধিপত্য শেষ হয়ে গেল। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ছাত্রশিবিরের এ জয়ে অনেকে কেন শঙ্কিত বা চিন্তিত?

সম্ভবত এর প্রধান কারণ ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর একটি অঙ্গসংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জামায়াত একটি প্রশ্নবিদ্ধ রাজনৈতিক দল। ১৯৭১ সালে তাঁরা শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেই ছিল না, দলটি ছিল পাকিস্তানের সামরিক সরকারের সমর্থনপুষ্ট। দলটি কেবল মৌখিকভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়নি, ইতিহাস বলে, তারা রাজাকার, আলবদর, আলশামস ইত্যাদি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যায় সহায়তা করেছিল।

আরও পড়ুনশিবিরের বিজয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কি নতুন ধারার সূচনা হলো১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ কারণে তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিবর্জিত করা একটি স্বাধীন দেশের পক্ষে খুব স্বাভাবিক ছিল। তাই এ দেশে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার পর অন্তত প্রথম কয়েক বছর রাজনীতি করতে পারেনি। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পটপরিবর্তন হতে শুরু করে। কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভাব সেই পরিবর্তনকে আরও বেগবান করে।

মূলত জিয়াউর রহমান নতুন দল সৃষ্টির জন্য একটি বিরাট জাল ফেলেছিলেন এবং সেই দলে সব মতের লোকদের অন্তর্ভুক্তি এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছিল। তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা হলেও তাঁর নতুন দলে এমন ব্যক্তিদের এনেছিলেন, যাঁরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মুসলিম লীগের শাহ আজিজুর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তান সরকারের সাফাই গাওয়ার জন্য। এই আজিজুর রহমানকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানান।

জাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজয়ীদের উচ্ছ্বাস। এখানেও শিবিরের বড় সাফল্য অর্জিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩ সেপ্টেম্বর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিবিরের এই সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সুবিধা দেবে কি?