ধানমন্ডি এলাকায় প্রায়ই আন্তঃকলেজ দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজ এলাকায় সম্প্রতি সংঘটিত আন্তঃকলেজ সহিংসতায় এ কলেজের একজন অধ্যাপককে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। একই ঘটনায় বেশ কয়েক শিক্ষার্থীও আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক এবং শিক্ষার পরিবেশবিরোধী ঘটনার ফলে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ধানমন্ডি এলাকার সচেতন নাগরিকরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে উৎকণ্ঠিত ও ক্ষুব্ধ। তারা একটি স্থায়ী, কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক সমাধান প্রত্যাশা করছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি গভীরভাবে লজ্জিত, ব্যথিত ও আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শিক্ষা ক্যাডারের দায়িত্বশীল, বিচক্ষণ ও কর্তব্যনিষ্ঠ প্রতিনিধিরা ধানমন্ডি এলাকার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ পুনঃস্থাপন করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। এ লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবিত রূপরেখা তুলে ধরছি।
প্রথমত, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করতে হবে। ধানমন্ডি এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ সুরক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির আদলে একটি কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হোক। এ কমিটিতে প্রতিটি কলেজ থেকে পাঁচজন দক্ষ ও চৌকস শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিটির দায়িত্ব হবে কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পেশ করা। এর মধ্যে থাকবে ঘটনার কারণ, জড়িতদের পরিচয় এবং অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কলেজ তা দ্রুত কার্যকর করবে। কোনো ব্যত্যয় হবে না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। এ ছাড়া শাস্তি স্থগিত, বাতিল বা মওকুফের ক্ষমতা শুধু মাউশির থাকবে– এ তথ্যও শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিতে হবে। গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী
সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।
দ্বিতীয়ত, ভিডিও পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য হলো সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। এতে কমিটির কাছে অপরাধ-সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ সহজেই পৌঁছে যাবে। তদন্ত হবে প্রমাণভিত্তিক এবং দ্রুত। এর ফলে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। পাশাপাশি সায়েন্স ল্যাব এলাকার অপরাধপ্রবণতাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে প্রত্যাশা।
nড.
অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা কলেজ
chowdhurynajmul76@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ বন দ ব ধ নমন ড তদন ত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫