গাজার চলমান পরিস্থিতি এক কথায় দুঃস্বপ্নের মতো। সেখানে ত্রাণের গাড়ি ঢুকতে শুরু করেছে, এটা সুখবর। কিন্তু যে সংখ্যায় ঢুকছে, তা চাহিদার বিবেচনায় মহাসমুদ্রে এক ফোঁটা জলের চেয়েও কম। সংঘাত শুরুর আগে গাজার মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক সামগ্রীর প্রয়োজন হতো। এখন চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার এসব কথা বলছিলেন রেড ক্রসের মুখপাত্র তোমাসো ডেলা লোঙ্গা। আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে আড়াই মাস পর চলতি সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় অবরোধ কিছুটা শিথিল করলে ত্রাণবাহী শতাধিক ট্রাক প্রবেশ করে। এ প্রসঙ্গে জার্মান সরকারের মুখপাত্র বলেন, যে সংখ্যক ত্রাণবাহী গাড়ি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, এখন পর্যন্ত তা একেবারেই অপর্যাপ্ত।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘তারা ত্রাণ পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। চায়ের চামচে নয়, এখন গাজায় ত্রাণের বন্যা বইয়ে দেওয়া প্রয়োজন।’ তিনি ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার সমালোচনা করে বলেন, গাজার চার-পঞ্চমাংশ ‘নো গো জোনে’ (যাতায়াতের অযোগ্য এলাকা) পরিণত হয়েছে। শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিরা নির্মম সংঘাতের সবচেয়ে কঠিন পর্ব পার করছে। গাজায় পুরো পরিবারের সদস্যরা না খেয়ে থাকছে। তারা মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। সারা পৃথিবী এটা তাকিয়ে দেখছে। তিনি জানান, ১১৫ ট্রাক ত্রাণ গাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে। তবে অধিকৃত উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ যায়নি।
আলজাজিরা জানায়, জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা সংস্থার ত্রাণ নিয়ে বৃহস্পতিবার ১০৭টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, এসব ট্রাকে ময়দা, শুকনো খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ ছিল। গাজার আল নাসের হাসপাতালের চিকিৎসক আহমেদ আল-ফারাহ সতর্ক করে বলেন, গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ না করলে দুর্যোগ প্রকট হবে।
এমন পরিস্থিতিতে উপত্যকাজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। শুক্রবার গাজায় এক দিনে আরও ৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৮৫ জন। তাদের মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বোমা হামলায় সাত শিশু নিহত হয়েছে। উত্তর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে। এতে অর্ধশতাধিক নিহত হন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৮২২ জন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
এতে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৭৩ জন নিহত হয়েছেন।
উপত্যকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, গাজার ৯৪ শতাংশ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করা হয়েছে। ৩৬ হাসপাতালের মধ্যে কেবল ১৯টি আংশিক সক্রিয় রয়েছে। গত সপ্তাহে চারটি প্রধান হাসপাতাল ‘হামলা, সরে যাওয়ার নির্দেশ ও সংঘাতে’র কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। উত্তর গাজায় কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সচল নেই।
হামলা চালানো হচ্ছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতেও। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের হাইকমিশনার জানান, গত এক সপ্তাহে গাজায় ৬২৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৫৮ জন বাস্তুচ্যুত। তারা বিভিন্ন তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে ১৪৮ জন নারী ও শিশু। গত এক সপ্তাহে ৯ ফিলিস্তিনি সাংবাদিকও নিহত হন।
এক হাজার চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের খোলা চিঠি
ইসরায়েলে ক্রমবর্ধমান হামলা ও অবরোধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ বাড়ছে। অনেক দেশ ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসছে। গতকাল শুক্রবার মিডল ইস্ট আই অনলাইন জানায়, গাজা গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে একটি খোলা চিঠিতে সই করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রায় এক হাজার ব্যক্তিত্ব। এ হত্যা নিয়ে চলচ্চিত্র জগতের নীরবতার নিন্দাও জানান তারা। চিঠিতে সই করা ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত অভিনেতা রেফ ফিনস। চলতি সপ্তাহে কান চলচ্চিত্র উৎসবে এ চিঠি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
খোলা চিঠিতে আরও সই করেছেন কানের জুরি বোর্ডের সদস্য জুলিয়েট বিনোচি, রোনি মারা, জনাথন গ্লেজার, যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালক জিম জারমুচ প্রমুখ। এবারের কান উৎসবে ফিলিস্তিনের আলোকচিত্রী ফাতিমা হাসৌনাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। ‘আর্টিস্ট অব ফামেত’ নামের ওই তথ্যচিত্রে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর ফাতিমার জীবন ও গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। কানে তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন হবে– এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পর গত ১৬ এপ্রিল উত্তর গাজায় ২৫ বছরের ফাতিমার বাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে পরিবারের ১০ সদস্যসহ তিনি নিহত হন।
তিন নেতার সমালোচনা করে বিপাকে নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের নেতাদের সমালোচনা করে বিপাকে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ও অন্তহীন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাখোঁ, কানাডার মার্ক কার্নি ও ব্রিটেনের কিয়ার স্টারমার গাজায় ত্রাণ ইস্যুতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দেন। তারা ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে প্রতিবাদ জানান। এ অবস্থায় নেতানিয়াহু ওই তিন নেতার সমালোচনা করে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ সম্বোধন করেন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র শ ক রব র প রব শ
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।