সোনার ভরি দুই লাখ টাকা ছাড়াল, নতুন দাম কাল থেকে কার্যকর
Published: 6th, October 2025 GMT
কিছুদিন ধরেই প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। অবশেষে দুই লাখ টাকার মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলল সোনার ভরি। এটিই দেশের ইতিহাসে সোনার সর্বোচ্চ দর। নতুন দর আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি আজ সোমবার সন্ধ্যায় সোনার মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। তাদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সোনার দাম ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ১৫০ টাকা বাড়বে। সর্বশেষ গত রোববার সোনার দাম ২ হাজার ২২৯ টাকা বেড়েছিল। তার মানে তিন দিনে ভরিপ্রতি সোনার দাম বেড়েছে ৫ হাজার ৩৭৯ টাকা। তাতে প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
জুয়েলার্স সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশের বাজারে কাল থেকে ভালো মানের এক ভরি, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের হলমার্ক করা সোনা কিনতে খরচ করতে হবে ২ লাখ ৭২৬ টাকা। এ ছাড়া প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৫ টাকায় বিক্রি হবে।
দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সোনার ভরি ছিল ১৭০ টাকা। ২০০০ সালে সোনার দাম ছিল ৬ হাজার ৯০০ টাকা। এক দশক পর, অর্থাৎ ২০২০ সালে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা হয়। ২০২৩ সালে দেশে প্রথমবারের মতো সোনার দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে পরের দুই বছরেই সোনার দাম দ্বিগুণ হয়েছে। আর স্বাধীনতার পর থেকে হিসাব করলে সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ১৮১ গুণ।
এদিকে আজ পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা, ২১ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৫১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সেই হিসাবে আগামীকাল থেকে ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৫০ টাকা, ২১ ক্যারেটে ৩ হাজার ১০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটে ২ হাজার ৫৭৮ টাকা দাম বাড়বে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ১৯২ টাকা বাড়বে।
বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির সঙ্গে সোনার দামের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা মানে সোনার বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। কারণ, অস্থির সময়ে বিভিন্ন দেশ সোনায় বিনিয়োগ করে। ঐতিহাসিকভাবেও দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সোনার দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়, অর্থাৎ ২০২০ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.
বিশ্ববাজারে কয়েক দিন ধরে সোনার দাম টানা বাড়ছে। আজ সোমবার একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৯৫২ ডলারে দাঁড়ায়। ১ অক্টোবর সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ৮৭১ ডলার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই
রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে গভীর শঙ্কার জন্ম দিতে বাধ্য।
মানবাধিকার সংস্থা এনএসএফের প্রতিবেদনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা অক্টোবরের ৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২-এ। আহত ব্যক্তির সংখ্যা একলাফে ৫৪৭ থেকে ৭২৪ এবং নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২ থেকে ৯—এই ঊর্ধ্বগতি শুধু পরিসংখ্যান নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিফলন। রাজনৈতিক সহিংসতা যখন মাসে মাসে বাড়ে, তখন তা নির্দেশ করে যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা মিলেমিশে সমাজে একধরনের সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করেছে।
গণপিটুনির পুনরুত্থান ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আইনকে পাশ কাটিয়ে সংঘবদ্ধ জনতা বিচার করছে—এমন প্রবণতা যেকোনো সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাকর। নভেম্বর মাসে ৪৩টি ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু; অক্টোবরে নিহত হয়েছেন ১২ জন—এ সংখ্যাগুলো শুধু হত্যার পরিসংখ্যান নয়; এ সংখ্যা আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর ইঙ্গিত। চুরি, ছিনতাই বা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগেই হোক, আইনের শাসন ভেঙে পড়লে সাধারণ মানুষ নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেয়। অথচ অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা, গণপিটুনি ঠেকাতে তৎপরতা দেখানো—এসব দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
নভেম্বরে কারা হেফাজতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে অসুস্থতার কথা বলা হলেও সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা কি এই মৃত্যুর কারণ? বারবার তদন্তের দাবি উঠলেও দায় নির্ধারণ বা কাঠামোগত সংস্কারের কোনো অগ্রগতি নেই।
সীমান্ত পরিস্থিতিও সমানভাবে নাজুক। ভারতীয় কোস্টগার্ড কর্তৃক ১০৮ জেলে আটক, আরাকান আর্মির হাতে ৪৭ জেলে, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু—এসব মিলিয়ে সীমান্তবাসী আজ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিবাদ বা কূটনৈতিক অনুরোধে তেমন ফল না হওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সীমাবদ্ধতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
নভেম্বর মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যেভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার খুলনায় দিনদুপুরে আদালত চত্বরে হাজিরা শেষে বের হওয়ার সময় দুজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ, যেখানে মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা, সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যেভাবে প্রবেশ করেছে ও হত্যা করে বেরিয়ে গেছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও গোয়েন্দা নজরদারির ব্যর্থতা তুলে ধরেছে। খুলনায় ১৫ মাসে ৪৬টি হত্যাকাণ্ড এ শহরকে ধীরে ধীরে সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত করছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপ এখনো জোরালো ও দৃশ্যমান নয়। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান—এখনই এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতি চলতে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টিকে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।