কক্সবাজারে প্রবারণার ফানুসে মানবতার বার্তা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’
Published: 6th, October 2025 GMT
কক্সবাজারের রামুতে অসংখ্য ফানুসে আলোকিত হয়ে ওঠে অন্ধকার আকাশ। সন্ধ্যা থেকে রঙিন ফানুসগুলো আলো ছড়াতে ছড়াতে উড়ছিল আকাশে। প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে রামুসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ফানুস উড়িয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন।
সবচেয়ে বড় আয়োজন হয় রামুর কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। রঙিন ফানুস ওড়ানোর সময় আকাশজুড়ে ভেসে ওঠে শান্তি, ভালোবাসা ও মানবতার বার্তা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।
রামু সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ ও কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ মহাথের বলেন, ‘প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের জন্য গভীর তাৎপর্যের দিন। আষাঢ়ের পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নতুন প্রতিজ্ঞায় ব্রতী হন। এটি সংযম ও পরিশুদ্ধতার উৎসব।’
প্রজ্ঞানন্দ মহাথের আরও বলেন, ‘ফানুস ওড়ানো প্রবারণার অন্যতম অনুষঙ্গ। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, ফানুসের আলো অন্ধকার দূর করে শান্তি, কল্যাণ ও আলোকিত জীবনের প্রতীক। তাই এই রাতে সবাই একসঙ্গে আকাশে ফানুস উড়িয়ে নিজের ও বিশ্বের মঙ্গলের প্রার্থনা করেন।’
ফানুসে রামু সীমা মহাবিহারের প্রয়াত অধ্যক্ষ পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরের প্রতিকৃতিও স্থান পায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ উদযাপনে প্রস্তুত বান্দরবান
বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ বা শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। প্রতিবছরের মতো এবারও তিন দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে উদযাপিত হবে এ উৎসব।
তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব হিসেবে পরিচিত ওয়াগ্যোয়াই পোয়েকে ঘিরে এরইমধ্যে বান্দরবানের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফানুস বানানো ও রাজহংসী আকৃতির রথ তৈরির শেষ ব্যস্ততা।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানান, প্রাচীনকাল থেকে বর্ষাবাস (উপোষ) শেষ করে আশ্বিনী পূর্ণিমায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় এই উৎসব পালন করে আসছে মারমা সম্প্রদায়। কথিত আছে, এই দিনেই গৌতম বুদ্ধ তার মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই স্মরণে ভক্তরা শত শত রঙিন ফানুস আকাশে উড়িয়ে বুদ্ধকে উৎসর্গ করেন।
উৎসব উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ উপলক্ষে রাজহংসী আকৃতির বিশাল রথ তৈরি করা হয়েছে, যার ওপর বুদ্ধমূর্তি বসিয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে। রথযাত্রার পেছনে বৌদ্ধ ভক্তরা প্রদীপ হাতে ধর্মীয় দেশনা গান পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে দেবতার আকৃতির পুতুল (পোছোমা)।
৬ অক্টোবর রাতে শহরের বিভিন্ন পাড়ায় আয়োজন করা হবে পিঠা তৈরির উৎসব। তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে পিঠা তৈরি করে ভোরে সেগুলো ভগবান বুদ্ধকে দান করবে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যেও বিতরণ করবে।
রথ কারিগর ক্যওয়ান মারমা জানান, কয়েকজন বন্ধু মিলে রাজহংসীর আদলে একটি রথ ও পাঁচটি পুতুল তৈরি করেছেন তারা, যার কাজ প্রায় শেষের দিকে। অন্যদিকে ফানুসশিল্পী চহ্লামং, এসিংমং ও অংচিংমং জানান, বর্ণিল ফানুসগুলো প্রবারণা পূর্ণিমার রাতে চূলামনি জাদি (বুদ্ধের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ) হিসেবে আকাশে উড়ানো হবে।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং মারমা জানান, এবারের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে মঙ্গল রথযাত্রা, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন, পিঠা উৎসব, ফানুস উড়ানো, পঞ্চশীল গ্রহণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী রাজা মাঠে গুরু ভান্তেদের ধর্মদেশনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে, উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার। তিনি বলেন, “প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে গোয়েন্দা নজরদারি ও সাদা পোশাকের টিম মোতায়েন থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনায় বান্দরবানে কোনো প্রভাব পড়েনি। এখানে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বান্দরবানের মানুষ দেশ ও অঞ্চলকে ভালোবাসে, তাই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।”
ঢাকা/চাইমং/এস