রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল আট বছর আগে। শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। ২০০ শয্যার হাসপাতালটি এখনো বুঝে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার নিজেদের লোক দিয়ে প্রায় চার বছর ধরে হাসপাতালটি পাহারা দিচ্ছেন। বারবার চিঠি দিলেও কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটি বুঝে নিচ্ছে না।

দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল বুঝে না নেওয়ায় সেবা কার্যক্রমও শুরু করা যাচ্ছে না। রাজশাহীর সিভিল সার্জন বলছেন, তাঁরা হাসপাতাল বুঝে নেওয়ার জন্য কয়েক দফা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। সেখান থেকে সাড়া না পাওয়ায় হাসপাতাল হস্তান্তরে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

একটি হাসপাতালের জন্য জনগণের অর্থ ব্যয় তখনই সফল হয়, যখন এটা জনগণের কাজে লাগে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হাসপাতাল ফেলে রাখা হয়েছে। এক ঘণ্টার জন্যও বিলম্ব করা তো অপরাধ।আহমেদ শফি উদ্দিন, সভাপতি, সুজন, রাজশাহী

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ–২ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের নির্মাণ প্রকল্পের নাম ‘কনস্ট্রাকশন অব গভর্নমেন্ট শিশু হসপিটাল অ্যাট রাজশাহী সিটি করপোরেশন’। প্রায় ৩৫ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মিত ওই হাসপাতালের কাজটি পায় ‘কেএসবিএল অ্যান্ড এইচই (জেভি)’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। মূল কাজ তিন বছরেই শেষ হয়ে যায়। এরপর আরও কিছু বাড়তি কাজ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোও ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩০ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর ভবনটি হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তারা  ১৪ আগস্ট, ২৮ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিকভাবে ভবনটি হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছেন। ৩ সেপ্টেম্বর ভবনের পশ্চিম ব্লকের দুটি জানালার কাচ ভেঙে অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম এবং ২৫ অক্টোবর গভীর নলকূপের কেবল চুরি গেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। আগামী দিনে এর থেকে বেশি চুরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এরপর কোনো ক্ষতি হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই দায়ভার নেবে না।

সম্প্রতি নগরের টিবিপুকুর এলাকায় নির্মিত ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে শুধু ঠিকাদারের একজন কর্মচারী পাহারায় আছেন।  ওই কর্মচারী বলেন, বাইরের সব ফিটিংস রাতের বেলা চুরি হয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণ এভাবে পাহারা দিয়ে রাখা যায়! তিনি এই প্রতিবেদককে হাসপাতাল ভবনের পেছনে নিয়ে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র দেখান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নেই। পাওয়ার কেব্‌লও নেই। পাহারাদার বলেন, এগুলোতে বাল্ব লাগানো ছিল। সব চুরি হয়ে গেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ফরহাদ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল ভবন তাঁদের পক্ষে আর পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব
হচ্ছে না। তাঁরা কিছু বলতে গেলেই গ্লাস ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। ফ্রেম খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা হাসপাতাল ভবনটি বুঝে নিতে বারবার চিঠি দিচ্ছেন; কিন্তু কর্তৃপক্ষ সাড়া দিচ্ছে না।

হাসপাতাল বুঝে না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, ‘সমস্যা আমাদের না। সমস্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের পক্ষে কে বুঝে নেবে, এটা নিয়েই জটিলতা। আমাদের আদারস লজিস্টিক ও অর্গানোগ্রাম নেই। আমরা তো কাজ শেষ করে দিয়েছি। এটা সিভিল সার্জনের বুঝে নেওয়ার কথা। তিনি কেন বুঝে নিচ্ছেন না? এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।’

সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বারবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, তাঁরও বদলি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে পারবেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গেলে খুব বেদনার দৃশ্য দেখতে হয়। কী মানবেতরভাবে শিশুদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। একটি হাসপাতালের জন্য জনগণের অর্থ ব্যয় তখনই সফল হয়, যখন এটা জনগণের কাজে লাগে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হাসপাতাল ফেলে রাখা হয়েছে। এক ঘণ্টার জন্যও বিলম্ব করা তো অপরাধ। যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটা চালু করা জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রানের পাহাড়ে চড়ে গলায় রেকর্ডের মালায়

আয়ারল‌্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে ব‌্যাটিংটা হলো একেবারে যুৎসই। প্রভাব বিস্তার করে অনায়েসে রান তুলেছেন ব‌্যাটসম‌্যানরা। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন দুজন। সুযোগ ছিল আরো। হয়নি। তাতে কি? স্কোরবোর্ডে বিশাল পুঁজি পেয়ে বড় কিছু রেকর্ডে নিজেদের যুক্ত করেছেন জয়, সাদমান, লিটন, শান্তরা।

সিলেটে আয়ারল‌্যান্ডকে ২৮৬ রানে থামিয়ে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে তুলেছে ৮ উইকেটে ৫৮৭ রান। লিড পেয়েছে ৩০৭ রানের। স্কোরবোর্ডে তিনশ রানের লিডে চোখ ছিল দলের। নয়তো দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে ৬০০ করার সুযোগ হাতছাড়া করতো না কোনোভাবেই।

আরো পড়ুন:

আয়ারল্যান্ড শিবিরে প্রথম আঘাত রানার

আয়ারল‌্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রান উৎসব’

রান পাহাড়ে চড়ে বেশ কিছু অর্জনে নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে দল। সেগুলোতেই চোখ বুলানো যাক—

এক.
টেস্ট ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৬৩৮। গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৩ সালে করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান করেছিল। সিলেটে বাংলাদেশ আজ ইনিংস ঘোষণা করে ৫৮৭ রানে।

দুই.
দেশের মাটিতে এটি আবার সর্বোচ্চ সংগ্রহ। দেশের মাটিতে এর আগে সর্বোচ্চ রান ছিল ৬ উইকেটে ৫৬০। ২০২০ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই রান করেছিল দল।

তিন.
১১৭.৩ ওভারে বাংলাদেশের দলীয় রান ৫০০ ছুঁয়ে ফেলে। টেস্ট ক্রিকেটে যা বাংলাদেশের দ্রুততম দলীয় ৫০০ রান। এর আগে ২০১৭ সালে ১২১.২ ওভারে দলীয় ৫০০ পেরিয়েছিল বাংলাদেশ। ম‌্যাচটি হয়েছিল ওয়েলিংটনে, নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে।

চার.
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম চার ব্যাটসম্যানেরই ফিফটি করার ঘটনা এবারই প্রথম বাংলাদেশের। জয় করেছেন ১৭১ রান। সাদমান ইসলাম ৮০ রানে থেমে যান। মুমিনুল হক করেছেন ৮২ রান। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তর ব‌্যাট থেকে আসে ১০০ রান। পাঁচে নামা মুশফিকুর রহিম ২৩ এবং ছয়ে লিটন নেমে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে করেন ৬০ রান। প্রথম ছয় ব‌্যাটসম‌্যানের পাঁচজনের ফিফটি পাওয়ার ঘটনাও এবারই প্রথম।

পাঁচ.
কমপক্ষে ৫০০ দলীয় রান হয়েছে এমন ইনিংসে রান রেটে এবারের ইনিংসই এগিয়ে। এই ইনিংসের রান রেট ৪.১৬। এর আগে একবারই রান রেট ৪ ছুঁয়েছিল। ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল ৪.০৮।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেসবুকে প্রেম, গোপনে বিয়ে, এরপর হত্যার ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড
  • শিক্ষা ক্যাডারে রসায়ন বিভাগে প্রথম পঞ্চগড়ের আবু তালেব
  • রানের পাহাড়ে চড়ে গলায় রেকর্ডের মালায়
  • বিপিএলের নিলামে দেশি খেলোয়াড়দের বাজেট সাড়ে ৪ কোটি
  • ফুটবল খেলতে খেলতে মাঠেই ঢলে পড়লেন তরুণ, হাসপাতালে মৃত ঘোষণা
  • অভিনেত্রী সালি কর্কল্যান্ড মারা গেছেন
  • নুটেলা ব্রেডের রেসিপি
  • ৫ ক‌্যাচ ছেড়ে আয়ারল‌্যান্ডের ৮ উইকেট নিল বাংলাদেশ
  • বিপিএলের নিলামের আদ‌্যোপান্ত
  • অপর্ণা কোথায়