৩৫ কোটি টাকার রাজশাহী শিশু হাসপাতাল পড়ে আছে
Published: 11th, January 2025 GMT
রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল আট বছর আগে। শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। ২০০ শয্যার হাসপাতালটি এখনো বুঝে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার নিজেদের লোক দিয়ে প্রায় চার বছর ধরে হাসপাতালটি পাহারা দিচ্ছেন। বারবার চিঠি দিলেও কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটি বুঝে নিচ্ছে না।
দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল বুঝে না নেওয়ায় সেবা কার্যক্রমও শুরু করা যাচ্ছে না। রাজশাহীর সিভিল সার্জন বলছেন, তাঁরা হাসপাতাল বুঝে নেওয়ার জন্য কয়েক দফা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। সেখান থেকে সাড়া না পাওয়ায় হাসপাতাল হস্তান্তরে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
একটি হাসপাতালের জন্য জনগণের অর্থ ব্যয় তখনই সফল হয়, যখন এটা জনগণের কাজে লাগে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হাসপাতাল ফেলে রাখা হয়েছে। এক ঘণ্টার জন্যও বিলম্ব করা তো অপরাধ।আহমেদ শফি উদ্দিন, সভাপতি, সুজন, রাজশাহীরাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ–২ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের নির্মাণ প্রকল্পের নাম ‘কনস্ট্রাকশন অব গভর্নমেন্ট শিশু হসপিটাল অ্যাট রাজশাহী সিটি করপোরেশন’। প্রায় ৩৫ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মিত ওই হাসপাতালের কাজটি পায় ‘কেএসবিএল অ্যান্ড এইচই (জেভি)’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। মূল কাজ তিন বছরেই শেষ হয়ে যায়। এরপর আরও কিছু বাড়তি কাজ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোও ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩০ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর ভবনটি হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তারা ১৪ আগস্ট, ২৮ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিকভাবে ভবনটি হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছেন। ৩ সেপ্টেম্বর ভবনের পশ্চিম ব্লকের দুটি জানালার কাচ ভেঙে অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম এবং ২৫ অক্টোবর গভীর নলকূপের কেবল চুরি গেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। আগামী দিনে এর থেকে বেশি চুরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এরপর কোনো ক্ষতি হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই দায়ভার নেবে না।
সম্প্রতি নগরের টিবিপুকুর এলাকায় নির্মিত ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে শুধু ঠিকাদারের একজন কর্মচারী পাহারায় আছেন। ওই কর্মচারী বলেন, বাইরের সব ফিটিংস রাতের বেলা চুরি হয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণ এভাবে পাহারা দিয়ে রাখা যায়! তিনি এই প্রতিবেদককে হাসপাতাল ভবনের পেছনে নিয়ে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র দেখান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নেই। পাওয়ার কেব্লও নেই। পাহারাদার বলেন, এগুলোতে বাল্ব লাগানো ছিল। সব চুরি হয়ে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ফরহাদ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল ভবন তাঁদের পক্ষে আর পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব
হচ্ছে না। তাঁরা কিছু বলতে গেলেই গ্লাস ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। ফ্রেম খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা হাসপাতাল ভবনটি বুঝে নিতে বারবার চিঠি দিচ্ছেন; কিন্তু কর্তৃপক্ষ সাড়া দিচ্ছে না।
হাসপাতাল বুঝে না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, ‘সমস্যা আমাদের না। সমস্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের পক্ষে কে বুঝে নেবে, এটা নিয়েই জটিলতা। আমাদের আদারস লজিস্টিক ও অর্গানোগ্রাম নেই। আমরা তো কাজ শেষ করে দিয়েছি। এটা সিভিল সার্জনের বুঝে নেওয়ার কথা। তিনি কেন বুঝে নিচ্ছেন না? এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।’
সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বারবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, তাঁরও বদলি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে পারবেন না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গেলে খুব বেদনার দৃশ্য দেখতে হয়। কী মানবেতরভাবে শিশুদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। একটি হাসপাতালের জন্য জনগণের অর্থ ব্যয় তখনই সফল হয়, যখন এটা জনগণের কাজে লাগে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হাসপাতাল ফেলে রাখা হয়েছে। এক ঘণ্টার জন্যও বিলম্ব করা তো অপরাধ। যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটা চালু করা জরুরি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
আট বছর ধরে গাড়ি চালানোর পেশায় আছেন মো. শাহীন। প্রথমে চালাতেন ট্রাক, এখন যাত্রীবাহী বাস। তবে এটা তার মূল কারবারের আড়াল মাত্র। বাস চালানোর আড়ালে তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনেন ইয়াবার বড় চালান। প্রতি চালানে ১০–২০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে। এগুলো পৌঁছানোর বিনিময়ে তিনি পান মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি চালান এনে তিনি অন্তত ছয় লাখ টাকা পান। ফলে লাভজনক এ কারবারে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকা থেকে বাসচালক শাহীন ও সুপারভাইজার সঞ্জিত রাজবংশীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ওই সময় বাসটিতে তল্লাশি চালিয়ে ১৫ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। এই চালানটি ঢাকার গাবতলী এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ জানান, আন্তঃজেলা বাসের চালক–হেলপারদের একটি অংশ মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন রুটের পরিবহনকর্মীদের মাদকসংশ্লিষ্টতার তথ্য পেতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস পূর্ব রামপুরার মোল্লা টাওয়ারের সামনে থামানো হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে চালক ও সুপারভাইজার স্বীকার করেন, তাদের কাছে মাদকদ্রব্য আছে। এরপর তাদের দেখানো অনুযায়ী চালকের আসনের নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন ডিএনসি ধানমন্ডি সার্কেলের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, শাহীনের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর ধরে তিনি বাসে মাদক পরিবহনের কাজ করেন। এর আগে ট্রাক চালানোর সময় অন্য চালকদের মাধ্যমে এ কারবারের বিষয়ে জানতে পারেন। পরে টেকনাফের মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি প্রতি ১০ হাজার পিস ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আনুমানিক এক লাখ টাকা করে পান। এবারের চালানের জন্য পেতেন দেড় লাখের কিছু বেশি। তবে পৌঁছানোর আগেই তিনি ও তার সহযোগী ধরা পড়েন।
অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইয়াবার চালানের প্রেরক ও প্রাপকসহ আরও কয়েকজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।