অভিধানে স্বৈরাচারের মানে করা হয়েছে—‘নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করা’। কিন্তু স্বৈরাচারের বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা হলো—এটি দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিবিহীন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্যের চাওয়া-পাওয়া ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে নিজের খেয়ালখুশি ও পছন্দ-অপছন্দ অনুসারে অন্যের জীবন ও জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দ্বিতীয় পক্ষকে এ অবস্থা মেনে নিতে বাধ্য করে। একটি বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখলে স্বৈরাচার আসলে মানবতাবিরোধী অপসংস্কৃতি।

আমরা সাধারণত স্বৈরাচার ব্যাপারটিকে একটি রাজনীতি-সম্পৃক্ত বিষয় বলে ভেবে এসেছি। কিন্তু ব্যাপারটির সীমানা শুধু রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর বিস্তৃতি রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও। অন্য একটি মাত্রায় বিচার করলে স্বৈরাচার শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে থাকতে পারে, এমন নয়। এর সদম্ভ উপস্থিতি সম্ভব ব্যক্তিগত বা সমাজজীবনেও। স্বৈরাচার কখনো কখনো স্থূলভাবে আত্মপ্রকাশ করে। আবার ক্ষেত্রবিশেষে এর অবস্থান খুব সূক্ষ্ম। চূড়ান্ত বিচারে স্বৈরাচার বহুমাত্রিক জটিল একটি ব্যাপার। একে একরৈখিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে শুধু খণ্ডিত একটি ছবিই পাওয়া যাবে।

রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারে সরকার পর্যায়ে যখন কোনো ব্যক্তি বা শক্তি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে এসে বা জনগনকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে কুক্ষিগত করে, তার জন্য জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহি অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে পড়ে। সে অবস্থায় ক্ষমতাধর সেই ব্যক্তি হয়ে ওঠে চূড়ান্ত ক্ষমতাধর এক শক্তি। সে হয়ে ওঠে সব রকমের দুর্নীতির ধারক ও বাহক। ইংরেজিতে তাই একটি কথা আছে—‘অ্যাবসুলেট পাওয়ার মেকস ওয়ান অ্যাবসুলেটলি করাপট’।

এ প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক ফল হচ্ছে একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যে ব্যবস্থায় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী অঙ্গুলিহেলন ব্যতীত কোনো কাজই সমাধা করা যায় না। এতে ক্ষমতার একধরনের চূড়ান্ত কেন্দ্রীকরণ ঘটে, যেখানে তুচ্ছতম বিষয়গুলোও নিষ্পত্তির জন্য নিয়ে আসা হয় সর্বক্ষণতার অধিকারী ব্যক্তিটির কাছে। ফলে একদিকে যেমন প্রশাসনে জন্ম লাভ করে চূড়ান্ত অদক্ষতা, অন্যদিকে সেখানে স্থায়ীভাবে স্থান করে নেয় চরম দুর্নীতি।

রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারের সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। রাষ্ট্রীয় সর্বময় ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারী একজন শাসককে রাষ্ট্রীয় অর্থ ও সম্পদের ওপরে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রদান করে। এ অবস্থায় সেই শাসকেরা অর্থসম্পদ একদিকে নিজের খেয়ালখুশিমতো ব্যয় করতে পারে, আত্মসাৎও করতে পারে। সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় অর্থব্যয়ের সব বিধিবিধান, নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘিত হয়, থাকে না সেখানে কোনো দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহি।

একজন স্বৈরাচারী শাসক এসব নীতিবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ অনুদান, পুরস্কার বা উপহার দান করেন ইচ্ছেমতো, ক্রমাগত লঙ্ঘন করেন অর্থনৈতিক সুশাসনকে। এর ফলে একদিকে সম্পদের সংকট দেখা দেয়, রাষ্ট্রীয় ঋণভার বেড়ে যায়, অন্যদিকে প্রকৃত মানব উন্নয়ন ব্যাহত হয়। ব্যাপারটি এ জন্যই ঘটতে পারে, যেহেতু স্বৈরাচারী শাসনে দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহি বলে কিছু নেই। একজন স্বৈরশাসক কোনোরকমের দায়বদ্ধতা অনুভব করে না, সে জবাবদিহি করে না জনগণের কাছে। দায়বদ্ধহীনতা ও জবাবদিহির অনুপস্থিতি অর্থনৈতিক স্বৈরাচারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে স্বৈরাচারী শক্তির আত্মপ্রকাশ ও তার প্রতিষ্ঠানিকীকরণ একজন ব্যক্তির দ্বারা হয় না। যে ব্যক্তি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়, তাকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে হলে গড়ে তুলতে হয় এক সহযোগী শ্রেণির, একটি সহযোগী মোর্চার। সে মোর্চার দলভুক্ত গোষ্ঠীগুলোকে তুষ্ট রাখতে প্রয়োজন হয় সম্পদ বিতরণের। সে সম্পদ আসে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে, যা কিনা জনগণের সম্পদ। সেসব কুক্ষিগত সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ওই সম্পদ পাচার করা হয় দেশের বাইরে। সত্যিকার অর্থে স্বৈরাচারী প্রভুর স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার জন্য এসব গোষ্ঠীকে দেওয়া হয় যথেচ্ছাচার ক্ষমতা ও সম্পদ কুক্ষিগত করার নানান সুবিধা।

রাজনৈতিক স্বৈরাচারের অন্যতম আধার রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণতন্ত্রমনা হয়, তাহলে তারা দলের অভ্যন্তরে সর্বপর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা করবে। সেখানে আলোচনা হবে সর্ব অর্থে মুক্ত, মুক্তচিন্তা ও মুক্ত পরিবেশে, যেখানে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সম–অধিকার থাকবে সাধারণ কর্মী থেকে নেতা পর্যন্ত সবার। সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে।

স্বৈরাচারী শাসককে তোষণের জন্যে এসব সহযোগী তোষামোদের প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করে। মিথ্যা স্তবগানে তোষিত নেতাকে এ ধারণাই দেওয়া হয় যে তিনিই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। স্বাভাবিকভাবেই তোষিত নেতা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন। নেতাকে স্বেচ্ছাচারী করার মাধ্যমে অনুগামীরাও স্বেচ্ছাচারিতার ছাড়পত্র পেয়ে যায়।

তোষামোদের রাজনীতির অন্যতম ফলাফল স্বেচ্ছাচারিতা। এ স্বেচ্ছাচারী প্রক্রিয়া ক্রমাণ্বয়ে নেতাকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। কখনো বাস্তব সত্যকে তোষিত নেতার কাছে তুলে ধরা হয় না। বাস্তবতা থেকে ক্রমান্বয়ে বর্জিত হয়ে তোষিত নেতা শুধু তা–ই দেখতে পান, যা তোষামোদকারীরা তাঁকে দেখাতে চায়।

রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারের প্রলম্বিত বলয়ই হচ্ছে রাজনৈতিক স্বৈরাচার। রাজনৈতিক স্বৈরাচারের আলোচনা শুরু হতে পারে রাজনৈতিক মূল্যবোধ থেকে। রাজনৈতিক মূল্যবোধে যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব থাকে, অনুপস্থিত থাকে পারস্পরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের, শক্তির ব্যবহার থাকে আলাপ-আলোচনা-বিতর্কের যেকোনো ক্ষেত্রকে নিশ্চিহ্ন করার, দৃঢ় প্রচেষ্টা থাকে ভিন্নমতের টুঁটি চেপে ধরার, তাহলে রাজনৈতিক মূল্যবোধ স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে।

এ স্বৈরাচারের আরেক মাত্রিকতা হচ্ছে অহংবোধ—‘আমি যা বলছি, তা–ই ঠিক’, ‘আমি সব জানি’। ব্যাপারটি তখন অন্যদের জন্য হয়ে ওঠে বাধ্যতামূলক। সেখানে মারা পড়ে সেই আপ্তবাক্য—‘আমি আপনার সঙ্গে সর্ববিষয়ে দ্বিমত পোষণ করতে পারি; কিন্তু আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।’

রাজনৈতিক স্বৈরাচারের অন্যতম আধার রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণতন্ত্রমনা হয়, তাহলে তারা দলের অভ্যন্তরে সর্বপর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা করবে। সেখানে আলোচনা হবে সর্ব অর্থে মুক্ত, মুক্তচিন্তা ও মুক্ত পরিবেশে, যেখানে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সম–অধিকার থাকবে সাধারণ কর্মী থেকে নেতা পর্যন্ত সবার। সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে।

অথচ কখনো কখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও স্বৈরাচারী মূল্যবোধ প্রকট ওঠে। সেখানে সাধারণ সদস্যদের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন না, সিদ্ধান্তের সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয় দলের সর্বোচ্চ নেতাকে, যিনি একক সিদ্ধান্তে সবকিছু নির্ধারণ করেন। অধীশ্বরের মতো এক চূড়ান্ত ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয় দলনেতাকে। স্বাভাবিকভাবেই সেই দলনেতা চরম স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন।

দেশে দেশে, যুগে যুগে বারবার রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারের মৃত্যুঘণ্টা বাজে। গণ–অভ্যুত্থানই স্বৈরাচারকে হঠায়। কিন্তু স্বৈরাচারকে পরাজিত করার প্রক্রিয়ায় ঝরে যায় বহু তরুণ তাজা প্রাণ। আত্মাহুতি দেয় অন্যরাও। তাই যেখানেই অক্টোপাসের মতো স্বৈরাচারের বাহু বিদ্যমান, সেখানেই ছাত্র-জনতা জাগ্রত স্বৈরাচারের মূল উৎপাটনে।

সেলিম জাহান ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন ঘিরে সরগরম কেরাণীগঞ্জের রাজনীতি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেরানীগঞ্জের সংসদীয় আসন ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩ এখন সরগরম। দিন যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে প্রার্থীদের গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময়সহ প্রচারণা কার্যক্রম। এই দুই আসনে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ (এনসিপি) অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রাথীরা ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। 

নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার, ব্যানার ও স্লোগান কেরাণীগঞ্জকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জনগণের সমস্যা, প্রত্যাশা ও মতামত শোনার মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীকে পরিচিত করার চেষ্টা করছেন। ভোটাররাও নির্বাচনী উচ্ছ্বাসে অংশ নিচ্ছেন। তারা খোঁজ নিচ্ছেন প্রার্থীদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা সম্পর্কে। অনেকেই শুনছেন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি। ইতোমধ্যে প্রশাসন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। 

আরো পড়ুন:

হেভিওয়েটদের বিপক্ষে এনসিপির প্রার্থী হচ্ছেন যারা

খালেদা জিয়া: কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন নাম

নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় আগামী দিনগুলোতে প্রচারণা আরো তীব্র হবে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দুই আসনেই রাজনৈতিক মাঠ সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ঢাকা: ৩
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য জনগণের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। কেরানীগঞ্জের উন্নয়ন, অবকাঠামোতে অগ্রগতি এবং মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নই আমাদের দায়িত্বের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। আমরা চাই—এই এলাকার প্রতিটি নাগরিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে।” 

তিনি বলেন, “একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হতে পারে জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের ভিত্তি। কেরানীগঞ্জের উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বেকারত্ব হ্রাসের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—একটি জবাবদিহিমূলক ও জনগণকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঢাকা-৩ আসনের মানুষের বিশ্বাস অর্জনে। বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি—তিনি যেন দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন।” 

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাইকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

এই আসনে জামায়াতে ইসলামের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমান বলেন, “নির্বাচনী প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো, জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা। আমাদের দলের নেতারা সর্বদা জনগণের পাশে থাকবেন, এটাই আমাদের অঙ্গীকার। জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যা সমাধান করাই আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং কেরানীগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে।”

জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী মো. আবু জাফর বলেন, “আমরা জনগণের অধিকার ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। কেরানীগঞ্জের উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দল সবসময় ভোটারদের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

ঢাকা-৩ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মনোনয়নপ্রত্যাশী শেখ ফয়সাল বলেন, “জনগণের ভোটই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। তাই প্রত্যেককে সচেতনভাবে ভোট প্রদানে অংশ নিতে হবে। ভোটের মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করতে পারি এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি।” 

ঢাকা-২
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আলহাজ্ব আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য  জনগণের কল্যাণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে জনগণের অবাধ গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেই হবে। জনগণের সেবা করা এবং ঢাকা-২ আসনের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এ দুটি বিষয়েই আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। 

তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাই ধানের শীষে ভোট দেবেন। দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, ভোটাধিকার ও মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। জনগণই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক—তাদের সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও সম্মান জানানোই আমাদের রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র কখনো শক্তিশালী হতে পারে না। একটি জবাবদিহিমূলক সরকারই মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে।” 

বিএনপির এই নেতা বলেন, “দেশের উন্নয়ন তখনই টেকসই হয়, যখন সিদ্ধান্ত মানুষের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত হয়। আমরা যে বাংলাদেশ চাই, সেটি হবে ন্যায়, সাম্য, মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গঠিত একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ। তার দ্রুত সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি।” 

জামায়াতের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তৌফিক হাসান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু নির্বাচনে জয় লাভ করা নয়; বরং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা।  আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিলে মানুষের জীবনমান সত্যিকারের উন্নত হবে। প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা আমাদের দলের অঙ্গীকার। জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাত পাখা প্রতীকে প্রার্থী মাওলানা জহিরুল ইসলামের বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক মূল লক্ষ্য হলো দেশের নীতি, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি আস্থা বজায় রেখে জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঢাকা-২ আসনের মানুষের জীবনমান উন্নত করাই আমাদের প্রধান অঙ্গীকার। আমরা বিশ্বাস করি—শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার সর্বোত্তম পথ। তাই আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জনগণের আস্থা অর্জন করে কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে।”

কেরাণীগঞ্জ উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক ও দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. জাবেদ হোসেন বলেন, “ঢাকা-২ আসনের মানুষ আজ পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে। জনগণ গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দিতে প্রস্তুত। জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে গণসংযোগ করছি, মানুষের সাড়া অভূতপূর্ব। এই জনসমর্থনই প্রমাণ করে, ঢাকা-২ আসনে এনসিপি একটি শক্তিশালী জনভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচন মাঠে থাকব।” 

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা-২ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ইমরান হোসেন বলেন, “প্রার্থীরা ন্যায্য ও দায়িত্বশীলভাবে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আরো শক্তিশালী হবে। আমরা জনগণের অধিকার রক্ষা এবং সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে কাজ করছি। সব প্রার্থীর উচিত শান্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীলভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি আরো শক্তিশালী হবে।”

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু বলেন, আমরা জনগণের অধিকার, ন্যায় এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে কাজ করছি। আমাদের প্রার্থী জনগণের কল্যাণ এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমরা সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদানে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করছি। দলের নেতৃত্ব ও কর্মীরা সকলকে শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়পরায়ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণ ন্যায় এবং কল্যাণমুখী প্রার্থীকে সমর্থন করবে এমনটি আশা করছি।”

কেরানীগঞ্জ মডেল থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. আব্দুর রহিম মজুমদার বলেন, “দেশের মানুষ শান্তি, উন্নয়ন ও ন্যায়বিচার চায়। আমরা নীতিগত রাজনীতির মাধ্যমে একটি সুশাসিত দেশ গড়তে চাই। জনগণের সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে জনগণ ন্যায়ের পক্ষে রায় দেবে।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির দোয়া
  • তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ: ফখরুল
  • নির্বাচন যত সহজ ভাবা হচ্ছে, তত সহজ হবে না: তারেক রহমান
  • শরিক ২৯ দলের বৈঠক, বিএনপির সঙ্গে দ্রুত ফয়সালার সিদ্ধান্ত
  • নির্বাচন ঘিরে সরগরম কেরাণীগঞ্জের রাজনীতি
  • যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলে নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তত ইউক্রেন, বললেন জেলেনস্কি
  • একটি দলের কর্মীরা হেলমেট মাথায় দিয়ে মহড়া দিচ্ছে: এ্যানি
  • ‘তানিয়া রবের প্রচারণায় হামলা গণতন্ত্রের ওপর হুমকি’
  • মানবাধিকার রক্ষা প্রতিদিনের জন্য অপরিহার্য: তারেক
  • খালেদা জিয়া: কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন নাম