সিলেটের সড়কে এক বছরে ৩৫৯ দুর্ঘটনা, নিহত ৩৭৫
Published: 15th, January 2025 GMT
সিলেট বিভাগে ২০২৪ সালে ৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৭৫ জন। একই সময়ে আহত হয়েছেন ৭০৯ জন। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী। বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলায় সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছেন।
বুধবার নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সিলেট বিভাগীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৪ সালে সিলেট জেলায় ১৫৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৭ জন নিহত ও ৩১৪ জন আহত হয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলায় ৬৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬ জন নিহত ও ১০৮ জন আহত হয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলায় ৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত ও ৭২ জন আহত হয়েছেন ও হবিগঞ্জ জেলায় ৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৫ জন নিহত ও ২১৫ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে ২৮৭ জন পুরুষ, ৫৮ জন মহিলা ও ৩০ জন শিশু রয়েছে।
প্রতিবেদনে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে সিলেট বিভাগে ২৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬১ জন নিহত ও ৪৬৪ জন আহত হয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য সড়কে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ে অভাব, ট্রাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং করা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, সিটবেল্ট ব্যবহার না করা, বিরতি ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানো, চালকেরা মাদকের আসক্তি, মহাসড়কে নির্মাণ ত্রুটি, গাড়িতে শিশুদের উপযোগী আসন না থাকা, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধি পাওয়া, মোটরসাইকেল চালকদের মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রোড মার্কিং পর্যাপ্ত না থাকা, আন্ডারপাস ব্যবহার না করে যত্রতত্র পারাপার ও রাস্তা চলাচল, রাস্তা পারাপার ও গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট বসানোকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন সড়ক দ র ঘটন য় ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
গরিব পাচ্ছে বিদ্যুৎ ভর্তুকির ছিটেফোঁটা, লাভবান ধনীরা
বিদ্যুতের ভর্তুকি বছরে ৬২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে এর বড় অংশ ধনীরা ভোগ করছেন। বিপরীতে গরিবরা ছিটেফোঁটা পাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে দেওয়া ভর্তুকির মাত্র ১২ শতাংশের সুবিধাভোগী সবচেয়ে গরিবরা। বিপরীতে ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ (এক-তৃতীয়াংশ) পাচ্ছেন সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ গ্রাহক, যার পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। বৈষম্যমূলক কাঠামোর কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি করছে।
আইএমএফের কারিগরি সহায়তা-সংক্রান্ত খসড়া প্রতিবেদনে এমন চিত্র তুলে ধরে সংস্থাটি ভর্তুকি কমাতে কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি দাম বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে। প্রয়োজনে সরাসরি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ। গত ৩০ জুন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ভর্তুকি সংস্কার শীর্ষক এ প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভর্তুকির সুফল মূলত ধনীরা পান। কারণ, তারাই বিদ্যুৎ-জ্বালানি বেশি ভোগ করেন। এ জন্য দাতাগোষ্ঠী ভর্তুকি থেকে বের হতে চাপ দেয়। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা– সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাঁর পরামর্শ, একদিকে ভর্তুকি কমাতে হবে, অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়াতে হবে। তাহলে ভর্তুকিশূন্য হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্তরা ভিন্ন নামে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি
২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। গত ১৬ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৭৮০। অথচ দেশের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা না থাকলেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্র বানিয়েছিল। ফলে উৎপাদন না করেও কেন্দ্র মালিকরা প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা সরকার থেকে পেয়েছে, যার প্রভাবে বেড়েছে বিদ্যুতের খরচ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট কিনতে লেগেছে ১১ টাকা ৭৪ পয়সা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৬ টাকা ১৮ পয়সা। মাত্র পাঁচ বছরে খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এ চাপ সামলাতে তৎকালীন সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
২০০৯ সালে বিদ্যুতের খুচরা দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। এখন হয়েছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। এর পরও উৎপাদন খরচের সঙ্গে খুচরা দামের সমতা হয়নি। লোকসান কমাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির ভর্তুকি ছিল ৭ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এর পর থেকে বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ হাজার ৮০০, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৫১১, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৪০০ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভর্তুকি ৬২ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ-গ্যাস মিলে ভর্তুকি ছিল জিডিপির ১.৩২ শতাংশ। তবে ২০২৩-২৪-এ তা কিছুটা কমে ১.১০ শতাংশ হলেও বাজেটের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।
আইএমএফ তিন ধাপে ভর্তুকি সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছে। স্বল্প মেয়াদে প্রাথমিক (লাইফলাইন) গ্রাহকদের দাম অপরিবর্তিত রেখে ধনীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এতে ২.১ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি শহরে ১০ এবং গ্রামের জন্য ৫ শতাংশ দাম বাড়াতে হবে। এতে ৬.১ শতাংশ ভর্তুকি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
মধ্য মেয়াদে সরাসরি ভর্তুকি তুলে দিয়ে সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ পরিবারকে মাসে ৪৮৮ টাকা করে সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এতে ৬৪ শতাংশ ভর্তুকি কমানো সম্ভব। আর দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ মূল্যকে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাভোগীদের তালিকার সঙ্গে যুক্ত করে প্রকৃত দরিদ্রদের ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। এতে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি সাশ্রয় সম্ভব।
পাশাপাশি আইএমএফ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ক্ষমতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ তথ্য ব্যবস্থাপনা একীভূত, অকার্যকর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সরকারকে সংস্কারের রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে বলেছে।
দাম বাড়ার চাপে সরকারের নারাজি
আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তির শর্ত হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি প্রতিবছর চারবার করে দাম বাড়িয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ভর্তুকি ধাপে ধাপে শূন্যে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়েনি।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, অনেক চাপ সত্ত্বেও তারা দাম বাড়াননি। এ মুহূর্তে এমন উদ্যোগ নেই, নিকট ভবিষ্যতেও দাম বাড়বে না। তবে সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও খাতভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে ভর্তুকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।