জাবিতে ভর্তি কার্যক্রমে সফটওয়্যারের ব্যবহার নিয়ে কর্মশালা
Published: 15th, January 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসিওরেন্স সেলের (আইকিউএসি) উদ্যোগে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কার্যক্রমে সফটওয়্যারের ব্যবহার’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় আইকিউএসি এর অফিসে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
আইকিউএসি এর পরিচালক অধ্যাপক ড.
অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন, জাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহম্মদ আলী রেজা, ডেপুটি রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান আরিফ।
এ সময় আইকিইউএসি এর অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নঈম আজিজ আনসারী, অধ্যাপক ড. শামীম আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনকালে জাবি উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অটোমেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমে সফটওয়্যারের ব্যবহার অটোমেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সূচনা। যেকোন কাজে দক্ষতা অর্জন খুব জরুরি এবং এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।”
প্রশিক্ষণ কর্মশালার সফলতা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “অটোমেশন করা সম্ভব হলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। অটোমোশনে সেবা দিতে সময় কম লাগবে এবং পরিশ্রমও কমে যাবে। এতে প্রশাসন ও শিক্ষার্থী উভয়ই উপকৃত হবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ওটিপি–নির্ভর প্রতারণা বাড়ছে
দেশে ও বিদেশে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণা ও সাইবার হামলার ঝুঁকি। বিশেষ করে ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড চুরি, ফিশিং ও অত্যাধুনিক এআই-নির্ভর কৌশল এখন সাইবার অপরাধের নতুন হাতিয়ার। সাধারণত প্রতারকেরা ব্যাংক কর্মকর্তা, কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট বা কোনো অনলাইন বিক্রেতা সেজে ফোন করে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে যেমন অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়া, পুরস্কার জেতা বা সার্ভিস আপডেটের মতো বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আপনার ওটিপি জানতে চায়। এ ছাড়া গ্রাহককে একটি ক্ষতিকারক লিংকে ক্লিক করতে প্রলুব্ধ করে প্রতারণা করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীর অজান্তে ডিভাইস থেকে ওটিপি বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হচ্ছে। এতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ই-ওয়ালেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি করে বা ডেটা চুরি হচ্ছে।
আজ শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাইবার নিরাপত্তা সিম্পোজিয়ামে দেশের শীর্ষ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এই ক্রমবর্ধমান হুমকি ও এর মোকাবিলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ এবং সমাধানের পথ নিয়ে আলাপ করেছেন। বাংলাদেশ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস ফোরাম (বিডিসাফ) আয়োজন করে এই সিম্পোজিয়ামের। দিনব্যাপী সিম্পোজিয়ামে বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ১২০ জন কর্মকর্তা ও পেশাজীবী অংশ নেন। রাজধানীর মহাখালীর সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্রেন স্টেশন-২৩ মিলনায়তনে সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা হয়।
সিম্পোজিয়ামে বিশেষজ্ঞরা জানান, সহজলভ্য ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে সাধারণ মানুষ এখন অনলাইন প্রতারকদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে। বিশেষত আর্থিক লেনদেন ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রবেশের জন্য অপরিহার্য ওটিপি চুরি একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতারকেরা বিভিন্ন ফিশিং লিংক, ভুয়া কল বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ওটিপি হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সিম্পোজিয়ামের একাধিক কারিগরি অধিবেশনে ব্যাংকিং ও টেলিযোগাযোগ খাতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানান, নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন ও সিস্টেমে শক্তিশালী টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ করা যেতে পারে। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এই ধরনের প্রতারণা সম্পূর্ণভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়।
বিডিসাফ সিম্পোজিয়ামের মূল আকর্ষণ ছিল ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রতারণার দ্বন্দ্ব: তথ্য সুরক্ষার যুগে বাংলাদেশের সাইবার প্রতিরক্ষা পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা। আলোচকেরা জানান, এআই যেমন মানবজীবন ও কাজের ধারাকে উন্নত করছে, তেমনি এটি ডিপফেক, ভুয়া পরিচয় তৈরি এবং তথ্য ফাঁসের (ডেটা লিক) মতো নতুন ধরনের সাইবার অপরাধের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। প্রযুক্তিবিদ শায়েরুল হক জোয়ার্দার এবং এপনিকের নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য সুমন আহমেদ সাবিরের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী এআইয়ের ব্যবহার বাড়ায় ডিপফেক ভিডিও ও ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা এখন একটি আধুনিক সাইবার হুমকির রূপ নিয়েছে। এই এআই-নির্ভর প্রতারণা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন এবং তথ্য সুরক্ষা নীতিমালা আরও শক্তিশালী করার সময় এসেছে। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন বিডিসাফের সাধারণ সম্পাদক মোহিব্বুল মোক্তাদীর।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে আর্থিক খাত এবং সরকারি সেবায় এআইয়ের ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি সাইবার সহনশীল প্রযুক্তিকাঠামো গড়ে তোলা এবং এর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। টেলিযোগাযোগ পেশাজীবীরা ক্লাউড অবকাঠামো এবং জিরো ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে আলাপ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, সরকার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ডিজিটাল রূপান্তর চালাচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে ডেটা নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নসহ ন্যাশনাল ডেটা গভর্ন্যান্স অথরিটি গঠন করা হচ্ছে। তিনি আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য শিগগরই সময়োপযোগী নীতিমালা আসছে।
প্রযুক্তিবিদ আবুল কালাম আজাদ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন ও সিস্টেম নিরাপদ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করছেন বিডিসাফের সভাপতি প্রেসিডেন্ট মো. জোবায়ের আল মাহমুদ।
দিনব্যাপী কারিগরি অধিবেশন পরিচালনা করেন টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সফটওয়্যার নির্মাতাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি–বিশেষজ্ঞরা। কারিগরি অধিবেশনে অংশ নেন ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির তথ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, ইন্টারনেট সেবা প্রতিস্থান লিংক-থ্রির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রকিবুল হাসান, গ্রামীণফোনের হেড অব সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার রাসকিন পাল, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিস্থান ব্রেন স্টেশন ২৩-এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের এসপি খালেদা বেগম, বাংলা লিংকের আইটি নেটওয়ার্ক ও সিকিউরিটি অপারেশন প্রধান এস এম আল মায়মুন, তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এস এম রুবায়েত ইসলাম, রবির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক সামিনুল ইসলাম তরফদার, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টেক নোভেল্টি লিমিটেডের এ কে এম নুরুল আলাম ও ব্রেন স্টেশন ২৩-এর সলিউশন আর্কিটেক্ট আনোয়ার হোসাইন।
আয়োজনে সহযোগী ছিল ব্রেন স্টেশন ২৩ ও লিডিং এজ টেকনোলজি। প্রসঙ্গত, বিডিসাফ একটি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের ফোরাম। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পেশাজীবী সংগঠনটি প্রতি বছর একাধিক আয়োজনে প্রযুক্তি অবকাঠামো, সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সিম্পোজিয়াম আয়োজন করছে।