বহিরাগতের বিরুদ্ধে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় এ ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে কলেজ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা অনন্যা তার বড় বোন ফারজানা মমোকে কলেজে নিয়ে আসেন। তারা কলেজের কয়েকজন ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও চরম দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের আটক করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে গিয়েও তারা অসৌজন্যমূলক আচরণ অব্যাহত রাখেন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

ফারজানা মমো ও আনিকার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করে শিক্ষার্থীরা জানান, বহিরাগত কেউ এসে তাদের শিক্ষকদের অপমান করবে এবং হুমকি দেবে, এটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এমন দুঃসাহস দেখিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

রাজশাহী কলেজের স্নেহা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের শিক্ষকদের কেউ অপমান করলে আমরা সহ্য করব না। বহিরাগত কেউ এসে আমাদের ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, এটা হতে পারে না। আমরা চাই, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।”

বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ছাত্রশিবিরের রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা আমাদের শিক্ষকদের অসম্মান সহ্য করব না। তবে কাউকে অন্যায়ভাবে হেনস্তা করতে চাই না। আইন অনুযায়ী অপরাধীর বিচার হওয়া উচিত।”

ছাত্রদলের রাজশাহী কলেজ শাখার আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, “অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হবে। তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং কলেজ প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে হবে।"

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ মো.

জুহুর আলী বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফারজানা মমোকে মুচলেকা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আনিকাকে আপাতত কলেজ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে এবং তার অভিভাবকদের ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/ফারজানা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ব যবহ র শ ক ষকদ র কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর যৌথ প্রতিরক্ষায় সম্মত উপসাগরীয় দেশগুলো

যেকোনো ধরনের বিদেশি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক যৌথ ব্যবস্থা নিতে সম্মত হয়েছে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলো। আজ বৃহস্পতিবার ছয় সদস্যের জোটটির যৌথ প্রতিরক্ষা কাউন্সিল কাতারের রাজধানী দোহায় এক বিশেষ অধিবেশনে এ বিষয়ে সম্মত হয়। ৯ সেপ্টেম্বর দোহায় ইসরায়েলের হামলার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জিসিসির প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক শেষে এক যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, মন্ত্রীরা তাৎক্ষণিকভাবে গোয়েন্দা তথ্যবিনিময় সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। একীভূত সামরিক কমান্ডের মাধ্যমে এটা করা হবে। আঞ্চলিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা হবে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পূর্বসতর্কতা ব্যবস্থা দ্রুততর করা হবে। পাশাপাশি মন্ত্রীরা যৌথ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা হালনাগাদেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

যৌথ ঘোষণায় মোট ছয়টি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। বাকি দুটি হলো জিসিসিভুক্ত দেশগুলো তিন মাসের মধ্যে যৌথ আকাশ এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা মহড়ার অনুমোদন দিয়েছে। এরপর দেশগুলো একটি যৌথ বিমান মহড়ায় অংশ নেবে। অংশগ্রহণকারী মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা জোর দিয়ে বলেন, কাতারের ওপর হামলার অর্থ হলো পুরো জিসিসির ওপর হামলা।

জিসিসির প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী শেখ সৌদ বিন আবদুর রহমান আল থানি। বৈঠকে জিসিসির ছয় দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, দেশগুলোর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি এবং জোটটির মহাসচিব জাসিম আল-বুদাইউই অংশ নেন। আলোচনায় মন্ত্রীরা দোহায় ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের গুরুতর লঙ্ঘন উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানান।

এই বৈঠকের আগে সোমবার দোহায় আরব লিগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এক বিশেষ বৈঠকে প্রায় ৬০টি দেশ অংশ নেয়। সেখানে জিসিসির দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আলাদা করে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠক শেষে জোটটির সদস্যদেশের সমন্বিত সামরিক ব্যবস্থা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

১৯৮১ সালে জিসিসি গঠিত হয়। এর পর থেকে জোটটির কোনো সদস্যদেশে ৯ সেপ্টেম্বরের আগপর্যন্ত সরাসরি হামলা চালায়নি ইসরায়েল। জোটটির প্রায় সব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের সুসম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুনইসরায়েলের বিরুদ্ধে কি যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এদিকে গাজা উপত্যকার গাজা নগরীতে গত বুধবার শুরু হওয়া ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলায় আজ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে গাজার অন্যান্য স্থানে নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। প্রায় দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল অন্তত ৬৫ হাজার ১৪১। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৫ জন।

ইসরায়েলের দাবি, গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ফিলিস্তিনি গাজা নগরী ছেড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, উপত্যকার বৃহত্তম শহরটিতে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা শুরুর আগে কমবেশি ১০ লাখ ফিলিস্তিনি ছিলেন, যাঁদের অনেকে অন্যান্য জায়গা থেকে একাধিকবার স্থানচ্যুত হয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনগাজা নগরীতে দুই দিনে দেড় শতাধিক হামলা ইসরায়েলের১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ