Samakal:
2025-02-15@00:35:40 GMT

বসন্তের রঙে

Published: 4th, February 2025 GMT

বসন্তের রঙে

‘এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত/বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে/চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।।/বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর/পরজ বসন্তের সুর/পাণ্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে/রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত।।’/–কাজী নজরুল ইসলাম 
শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে উষ্ণতার পরশ নিয়ে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটতে এই তো কয়েকটা দিন বাকি। গাছের শুকনো পাতা ঝরে গিয়ে ডালে ডালে নতুন কচি পাতা আর বাহারি ফুলের সমারোহ। চারপাশে ভ্রমরের গুঞ্জন আর কোকিলের মধুর সুরে প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। 
বসন্ত শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়; এটি মানুষের মনে এক নতুন উদ্দীপনা জাগায়। বাংলা সংস্কৃতিতে বসন্ত বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। একই সঙ্গে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস, যা বাঙালির আবেগ-অনুভূতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যান্ত্রিক এ জীবনে বহু সংস্কৃতি হারিয়ে গেলেও বসন্ত উৎসব বাঙালি হৃদয়ের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। 
বসন্তের আবির্ভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনেও নবজাগরণ আনে। এ লক্ষ্যে মনকে রাঙিয়ে দিতে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোয় লেগেছে বসন্তের আমেজ। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিষ্ঠানগুলো এনেছে নারীর জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লং কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, কাফতান, টপস, টিউনিক, টপস-স্কার্টের বিশাল সংগ্রহ। পাশাপাশি ছেলেদের জন্য রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, শার্ট, কটি। শিশুর জন্যও নানা ধরনের পোশাক নিয়ে এসেছে ব্র‍্যান্ডগুলো।
রঙের বাহার: বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, রঙ বাংলাদেশ, লা রিভ, নিপুণ, অঞ্জন’স, সাতকাহনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের মোটিফ ও ডিজাইনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বসন্ত ও ভালোবাসার রং। পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে হলুদ, বাসন্তী, কমলা,  মেরুন, রেড, অফ হোয়াইট, জাভা গ্রিন, মাস্টার্ড ইয়েলো, নিওন লাইম ও কলাপাতা রঙের বাহার।  
দেশের অন্যতম ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড ‘বিশ্বরঙ’-এর ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘শীতের পরেই যেহেতু বসন্তের আগমন ঘটে, এ কারণে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মনকে রাঙিয়ে তুলতে আমরা বরাবরের মতো এই বসন্তেও প্রকৃতি এবং ফুলের সৌন্দর্যের মোটিফে পোশাক ডিজাইন করেছি। বসন্তের রঙিন ফুলের মতো আমাদের পোশাকেও রয়েছে বিভিন্ন রঙের সমারোহ। এখানে হলুদ ও বাসন্তী রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বসন্ত উৎসব বাঙালির এমন একটা উৎসব, যা কোনো নির্দিষ্ট বয়সে আটকে থাকে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ– সবার হৃদয়েই এ উৎসবের আমেজ নাড়া দিয়ে যায়। এ কারণে ‘বিশ্বরঙ’-এ সব বয়সীর জন্যই রয়েছে বসন্তের পোশাক। তিনি জানান, সুতি কাপড়ে কাজের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে টাই-ডাই, ব্লক, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট, বাটিক, ভেজিটেবল ডাই, কারচুপি, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, মেশিন এমব্রয়ডারি ইত্যাদি।
ফ্যাশন হাউস ‘কে ক্রাফট’-এ সমসাময়িক মোটিফ ও প্রিন্টের পাশাপাশি এবার প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বিশেষভাবে বাছাই করা ডিজাইন, প্যাটার্ন ও রংকে, যা বসন্ত উৎসব এবং ভালোবাসা দিবস দুটি উৎসবকেই সমানতালে ফুটিয়ে তুলবে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী খালেদ মাহমুদ খান জানান, শীতের শেষে প্রকৃতিতে মিষ্টি ফাল্গুনী হাওয়া যেমন থাকে, তেমনি থাকে সঙ্গে হালকা গরমের ছোঁয়া। তাই সময়োপযোগী সুতি কাপড়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ‘কে ক্রাফট’-এর এবারের বসন্ত আয়োজনে। তাঁর মতে দিনে পোশাক নির্বাচনে সুতির পোশাক সবচেয়ে উপযোগী হবে। তা ছাড়া সন্ধ্যার পর সুতির পাশাপাশি জর্জেট, সিল্ক অথবা হাফ সিল্কের পোশাক বেছে নেওয়া যেতে পারে। হলুদ কিংবা কমলার পাশাপাশি পোশাকের ক্ষেত্রে উৎসবের এ দিনে বেছে নিতে পারেন কে ক্রাফটের লাল, ম্যাজেন্টা, অফ হোয়াইট, মেরি গোল্ড, পার্পল, ভায়োলেট, ল্যাভেন্ডার, স্যালমন রেড, পিচ, ব্রিক রেড, নীল, ফরেস্ট গ্রিন রঙের পোশাক। আবার এই দিনে যেহেতু ভালোবাসা দিবস, এ জন্য পরা যেতে পারে পছন্দের লাল রং অথবা নীল পোশাক। 
প্রতিবছরের মতো বসন্তের আয়োজনে ফ্যাশন হাউস ‘রঙ বাংলাদেশ’ও ফ্যাশনপ্রিয় মানুষকে রাঙিয়ে দিতে প্রস্তুত নতুন ডিজাইনের বৈচিত্র্যময় পোশাক নিয়ে। 
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার সৌমিক দাস জানান, দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মেলবন্ধনের প্রচেষ্টায় বসন্ত উৎসবের পোশাক ডিজাইনে এবার তারা থিম হিসেবে ব্যবহার করেছেন ‘আমেরিকান নেটিভ পটারি’ বা আমেরিকান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন নকশা। এর মাধ্যমে এবার বসন্ত উৎসবের পোশাকে এসেছে ভিন্নতা। 
তিনি আরও জানান, ব্যতিক্রমী নকশার পাশাপাশি ফেব্রিক্সেও আছে বৈচিত্র্য। হাফ সিল্ক, কটন, জ্যাকার্ট কটন, মারসালাইস কটন এবং স্লাব ভিস্কস কাপড়ে কমলা, গাঢ় হলুদ, হালকা হলুদ, অলিভ আর সাদা রঙের ব্যবহার। একই সঙ্গে আরাম, টেকসই ও ডিজাইনের সমন্বয়ে ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর বসন্তের পোশাকে আনা হয়েছে ভিন্নতা। 
রঙ বাংলাদেশের সাবব্র্যান্ড ওয়েস্ট রঙ এবং রঙ জুনিয়রের পোশাকেও রয়েছে বসন্তের আমেজ। পাশাপাশি পরিবারের সবার জন্য রয়েছে একই ধরনের ম্যাচিং পোশাক। 
ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘লা রিভ’ নিয়ে এসেছে নতুন সব কালেকশন। ক্যাজুয়াল ওয়্যারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সংগ্রহে থাকছে ইউনিক সব পার্টি স্টাইল। উৎসবের এই দিনে পরার জন্য কাফতান-কাট টিউনিক, ফ্লেয়ার্ড শ্রাগের মতো ইউনিক সব ডিজাইন যোগ করেছে লা রিভ। ছেলেদের জন্য রয়েছে ট্রেন্ডি পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ফরমাল শার্ট ও বেস্ট-ফিট বটমসের মতো পোশাকের সমাহার। 
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে নিজের ও প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পোশাকটি কিনতে পারেন দেশীয় সব ফ্যাশন হাউস থেকে। চাইলে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার, টোকিও স্কয়ার, শ্যামলী স্কয়ার, মৌচাক মার্কেট, রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজাসহ বিভিন্ন মার্কেট থেকেও কিনতে পারেন পছন্দের পোশাক। যারা একটু স্বল্প বাজেটের মধ্যে কেনাকাটা করতে চাইছেন তারা চলে যেতে পারেন নিউমার্কেট, গাউছিয়া, কৃষি মার্কেট, রামপুরা সুপারমার্কেটসহ আপনার আশপাশের কাছের মার্কেটে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বসন ত উৎসব বসন ত র উৎসব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শুরু হচ্ছে আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব, দেখা যাবে যেসব সিনেমা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব’। আগামীকাল শুরু হচ্ছে উৎসবটির ২৩তম আসর। বাসন্তী ফুল পলাশের সঙ্গে বিপ্লবের রক্তিম আভার সমন্বয়ে করা হয়েছে এবারের উৎসবের পোস্টার।

আরও পড়ুনকাল থেকে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব’২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

উৎসবে নির্বাচিত ছবিগুলোর তালিকা গত বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। উৎসবে সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘বলী’, শঙ্খ দাশগুপ্তের ‘প্রিয় মালতী’, অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘রিকশা গার্ল’, আকরাম খানের ‘নকশীকাঁথার জমিন’, নূরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’, ধ্রুব হাসানের ‘ফাতিমা’, মিশুক মনির ‘দেয়ালের দেশ’ ও রায়হান রাফীর ‘তুফান’ দেখানো হবে।

উৎসবে আরও দেখানো হবে ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’, আমজাদ হোসেনের ‘ভাত দে’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’, কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’, আবু সাইয়ীদের ‘কিত্তনখোলা’, সালাউদ্দিন লাভলুর মোল্লাবাড়ির বউ’, আবদুল আহাদ তানভীরের ‘বাতাসের ফেনা’, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’।

উৎসব চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিটি প্রদর্শনীই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা, বেলা ১টা, বেলা ৩টা ৩০ মিনিট ও সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে সিনেমাগুলো দেখানো হবে। টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কমিউনিটির গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় আসর শুরু হচ্ছে
  • প্রবল ভালোবাসাই পারে সমাজকে বৈষম্য থেকে মুক্ত করতে: আনু মুহাম্মদ
  • বাধার মুখে বাতিল উত্তরার বসন্ত উৎসব
  • বাধার মুখে উত্তরায় বসন্ত উৎসব হয়নি: মানজার চৌধুরী
  • বার্লিন উৎসবে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা
  • ভালোবাসা দিবসকে সঙ্গে নিয়ে এল ঋতুরাজ
  • রাগ বসন্তে শুরু ‘বসন্ত উৎসব’
  • ভালোবাসা দিবস যেভাবে এলো
  • এখন ভালোবাসা দরকার
  • শুরু হচ্ছে আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব, দেখা যাবে যেসব সিনেমা