Samakal:
2025-11-14@07:11:27 GMT

বসন্তের রঙে

Published: 4th, February 2025 GMT

বসন্তের রঙে

‘এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত/বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে/চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।।/বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর/পরজ বসন্তের সুর/পাণ্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে/রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত।।’/–কাজী নজরুল ইসলাম 
শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে উষ্ণতার পরশ নিয়ে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটতে এই তো কয়েকটা দিন বাকি। গাছের শুকনো পাতা ঝরে গিয়ে ডালে ডালে নতুন কচি পাতা আর বাহারি ফুলের সমারোহ। চারপাশে ভ্রমরের গুঞ্জন আর কোকিলের মধুর সুরে প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। 
বসন্ত শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়; এটি মানুষের মনে এক নতুন উদ্দীপনা জাগায়। বাংলা সংস্কৃতিতে বসন্ত বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। একই সঙ্গে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস, যা বাঙালির আবেগ-অনুভূতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যান্ত্রিক এ জীবনে বহু সংস্কৃতি হারিয়ে গেলেও বসন্ত উৎসব বাঙালি হৃদয়ের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। 
বসন্তের আবির্ভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনেও নবজাগরণ আনে। এ লক্ষ্যে মনকে রাঙিয়ে দিতে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোয় লেগেছে বসন্তের আমেজ। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিষ্ঠানগুলো এনেছে নারীর জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লং কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, কাফতান, টপস, টিউনিক, টপস-স্কার্টের বিশাল সংগ্রহ। পাশাপাশি ছেলেদের জন্য রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, শার্ট, কটি। শিশুর জন্যও নানা ধরনের পোশাক নিয়ে এসেছে ব্র‍্যান্ডগুলো।
রঙের বাহার: বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, রঙ বাংলাদেশ, লা রিভ, নিপুণ, অঞ্জন’স, সাতকাহনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের মোটিফ ও ডিজাইনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বসন্ত ও ভালোবাসার রং। পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে হলুদ, বাসন্তী, কমলা,  মেরুন, রেড, অফ হোয়াইট, জাভা গ্রিন, মাস্টার্ড ইয়েলো, নিওন লাইম ও কলাপাতা রঙের বাহার।  
দেশের অন্যতম ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড ‘বিশ্বরঙ’-এর ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘শীতের পরেই যেহেতু বসন্তের আগমন ঘটে, এ কারণে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মনকে রাঙিয়ে তুলতে আমরা বরাবরের মতো এই বসন্তেও প্রকৃতি এবং ফুলের সৌন্দর্যের মোটিফে পোশাক ডিজাইন করেছি। বসন্তের রঙিন ফুলের মতো আমাদের পোশাকেও রয়েছে বিভিন্ন রঙের সমারোহ। এখানে হলুদ ও বাসন্তী রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বসন্ত উৎসব বাঙালির এমন একটা উৎসব, যা কোনো নির্দিষ্ট বয়সে আটকে থাকে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ– সবার হৃদয়েই এ উৎসবের আমেজ নাড়া দিয়ে যায়। এ কারণে ‘বিশ্বরঙ’-এ সব বয়সীর জন্যই রয়েছে বসন্তের পোশাক। তিনি জানান, সুতি কাপড়ে কাজের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে টাই-ডাই, ব্লক, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট, বাটিক, ভেজিটেবল ডাই, কারচুপি, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, মেশিন এমব্রয়ডারি ইত্যাদি।
ফ্যাশন হাউস ‘কে ক্রাফট’-এ সমসাময়িক মোটিফ ও প্রিন্টের পাশাপাশি এবার প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বিশেষভাবে বাছাই করা ডিজাইন, প্যাটার্ন ও রংকে, যা বসন্ত উৎসব এবং ভালোবাসা দিবস দুটি উৎসবকেই সমানতালে ফুটিয়ে তুলবে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী খালেদ মাহমুদ খান জানান, শীতের শেষে প্রকৃতিতে মিষ্টি ফাল্গুনী হাওয়া যেমন থাকে, তেমনি থাকে সঙ্গে হালকা গরমের ছোঁয়া। তাই সময়োপযোগী সুতি কাপড়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ‘কে ক্রাফট’-এর এবারের বসন্ত আয়োজনে। তাঁর মতে দিনে পোশাক নির্বাচনে সুতির পোশাক সবচেয়ে উপযোগী হবে। তা ছাড়া সন্ধ্যার পর সুতির পাশাপাশি জর্জেট, সিল্ক অথবা হাফ সিল্কের পোশাক বেছে নেওয়া যেতে পারে। হলুদ কিংবা কমলার পাশাপাশি পোশাকের ক্ষেত্রে উৎসবের এ দিনে বেছে নিতে পারেন কে ক্রাফটের লাল, ম্যাজেন্টা, অফ হোয়াইট, মেরি গোল্ড, পার্পল, ভায়োলেট, ল্যাভেন্ডার, স্যালমন রেড, পিচ, ব্রিক রেড, নীল, ফরেস্ট গ্রিন রঙের পোশাক। আবার এই দিনে যেহেতু ভালোবাসা দিবস, এ জন্য পরা যেতে পারে পছন্দের লাল রং অথবা নীল পোশাক। 
প্রতিবছরের মতো বসন্তের আয়োজনে ফ্যাশন হাউস ‘রঙ বাংলাদেশ’ও ফ্যাশনপ্রিয় মানুষকে রাঙিয়ে দিতে প্রস্তুত নতুন ডিজাইনের বৈচিত্র্যময় পোশাক নিয়ে। 
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার সৌমিক দাস জানান, দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মেলবন্ধনের প্রচেষ্টায় বসন্ত উৎসবের পোশাক ডিজাইনে এবার তারা থিম হিসেবে ব্যবহার করেছেন ‘আমেরিকান নেটিভ পটারি’ বা আমেরিকান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন নকশা। এর মাধ্যমে এবার বসন্ত উৎসবের পোশাকে এসেছে ভিন্নতা। 
তিনি আরও জানান, ব্যতিক্রমী নকশার পাশাপাশি ফেব্রিক্সেও আছে বৈচিত্র্য। হাফ সিল্ক, কটন, জ্যাকার্ট কটন, মারসালাইস কটন এবং স্লাব ভিস্কস কাপড়ে কমলা, গাঢ় হলুদ, হালকা হলুদ, অলিভ আর সাদা রঙের ব্যবহার। একই সঙ্গে আরাম, টেকসই ও ডিজাইনের সমন্বয়ে ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর বসন্তের পোশাকে আনা হয়েছে ভিন্নতা। 
রঙ বাংলাদেশের সাবব্র্যান্ড ওয়েস্ট রঙ এবং রঙ জুনিয়রের পোশাকেও রয়েছে বসন্তের আমেজ। পাশাপাশি পরিবারের সবার জন্য রয়েছে একই ধরনের ম্যাচিং পোশাক। 
ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘লা রিভ’ নিয়ে এসেছে নতুন সব কালেকশন। ক্যাজুয়াল ওয়্যারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সংগ্রহে থাকছে ইউনিক সব পার্টি স্টাইল। উৎসবের এই দিনে পরার জন্য কাফতান-কাট টিউনিক, ফ্লেয়ার্ড শ্রাগের মতো ইউনিক সব ডিজাইন যোগ করেছে লা রিভ। ছেলেদের জন্য রয়েছে ট্রেন্ডি পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ফরমাল শার্ট ও বেস্ট-ফিট বটমসের মতো পোশাকের সমাহার। 
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে নিজের ও প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পোশাকটি কিনতে পারেন দেশীয় সব ফ্যাশন হাউস থেকে। চাইলে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার, টোকিও স্কয়ার, শ্যামলী স্কয়ার, মৌচাক মার্কেট, রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজাসহ বিভিন্ন মার্কেট থেকেও কিনতে পারেন পছন্দের পোশাক। যারা একটু স্বল্প বাজেটের মধ্যে কেনাকাটা করতে চাইছেন তারা চলে যেতে পারেন নিউমার্কেট, গাউছিয়া, কৃষি মার্কেট, রামপুরা সুপারমার্কেটসহ আপনার আশপাশের কাছের মার্কেটে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বসন ত উৎসব বসন ত র উৎসব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আয়ারল‌্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রান উৎসব’

সাদমান ইসলাম মন খারাপ করতেই পারেন! একেবারে মনের মতো ২২ গজ পেয়েও একটা সেঞ্চুরি করতে পারলেন না। সেই পথেই তিনি ছিলেন। কিন্তু ৮০ রানে থমকে যায় তার ইনিংস। সাত মাস পর দলে ফেরা মাহমুদুল হাসান জয় সঙ্গীর মতো ভুল করলেন না। আয়নার মতো স্বচ্ছ উইকেটে একেবারে ঢিলেঢালা বোলিংয়ের বিপক্ষে তুলে নিলেন ক‌্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। সাত মাস পর দলে ফিরে সেঞ্চুরিতে প্রত‌্যাবর্তন রাঙিয়ে ১৬৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৭০ রানের ইনিংস খেলার পথে মুমিনুল হক করেছেন ৮০ রান। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল নিজেকে আরেকধাপ এগিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায়।

ব‌্যাটসম‌্যানদের রান উৎসবে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড দৌড়াল। আয়ারল‌্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানে আটকে বাংলাদেশ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করলো ১ উইকেটে ৩৩৮ রানে। স্কোরবোর্ডে লিড ৫২ রানের। এই রান উৎসব তৃতীয় দিন কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার। নিজেরা ভুল না করলে থামানো কষ্টকর। একে তো আয়ারল‌্যান্ডের বোলিংয়ে সেই তেজ নেই। বাড়তি এক্স-ফ‌্যাক্টর নেই। সঙ্গে উইকেটের আচরণ। একেবারেই ফ্ল‌্যাট উইকেট। স্পিনে হুটহাট বল ছোবল দিলেও বাকিটা সময় নিরাপদ আচরণ করছে। একটু একটু ভাঙতে শুরু করেছে। যা তৃতীয় দিন থেকে প্রভাব রাখতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

সেঞ্চুরিতে জয়ের ফেরা

জয়-সাদমান-মুমিনুলে দাপুটে দিন পার করল বাংলাদেশ

তবে খুব বেশি যে প্রভাব রাখতে পারবে তা নিশ্চিন্তে বলা যায়। কারণ আয়ারল‌্যান্ডের স্পিনারদের তেমন বাড়তি কিছু চোখে পড়েনি। দুই স্পিনার হ‌্যারি টেক্টর ও অ‌্যান্ডি ম‌্যাকব্রাইন সারাদিন হাত ঘুরিয়েও তেমন কিছু করতে পারেননি। এছাড়া তৃতীয় স্পিনার হিসেবে ম‌্যাথু হ‌্যাম্পরেইস এসেছিলেন। বোলিংয়ে তেমন কোনো জোর নেই। পেসাররা বাড়তি সুবিধা করতে না পারায় বাংলাদেশের রান বড় হয়েছে। বিশেষ করে নতুন বলে সাদমান ও জয় ছিলেন দারুণ। উইকেটের চারিপাশে দুজন বেশ সাচ্ছন্দ‌্যে ব‌্যাটিং করেছেন। বাউন্ডারি পেয়েছেন নিয়মিত। ঝুঁকি তেমন নেননি। তাতেই কাজ হয়েছে।

তবে সেঞ্চুরির আক্ষেপ সাদমানের নিশ্চিয়ই আছে। ১০৪ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৮০ রান করে উইকেটের পেছনে টেক্টরের হাতে ক‌্যাচ দেন। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় আইরিশরা। তাদের পুরো দিনের সাফল‌্য ওই সাদমানই। ১৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তার বিদায়ে। যা বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান। এরপর মুমিনুল ক্রিজে এসে নিজের সহজাত আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে সহজেই রান তুলে নেন।

জয় যত সময় কাটাচ্ছিলেন ততই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন। তৃতীয় সেশনে মাইলফলকে পৌঁছে যান তিনি। ২০২২ সালে ডারবানে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ৩ বছর পর পেলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ফেরার ম‌্যাচ সেঞ্চুরিতে রাঙিয়ে হাল ছাড়েননি ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান। ক‌্যাম্পারের পায়ের উপরের বল মিড উইকেট দিয়ে যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন বোঝা গেছে বড় কিছুর খোঁজে আছেন। হতে পারে দুইশ! তিনশই বা কেন নয়? এমন সুযোগ বারবার তো পাবেন না।

মুমিনুল ২০ রান পূর্ণ করে সেঞ্চুরি পান কিনা সেটাও দেখার। তাদের দুজনের ব‌্যাট তৃতীয় দিনে কতটা আলো ছড়ায় সেটাই দেখার।

এর আগে ২৭০ রান নিয়ে ব‌্যাটিংয়ে নেমেছিল আয়ারল‌্যান্ড। স্কোরবোর্ডে ১৬ রান যোগ করতে অবশিষ্ট ২ উইকেট হারায় অতিথিরা। এজন‌্য বাংলাদেশকে করতে হয়েছে ১৪ বল। হাসান মাহমুদ ও তাইজুল একটি করে উইকেট নিয়ে সাত সকালেই তাদের গুটিয়ে দেন।

৩.৯৮ রান রেটে অনায়েসে ব‌্যাটিং করে রান উৎসব করেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ও  দ্বিতীয় সেশনের মাঝের সময়টায় একটা সময়ে রান রেট ৪.৫ ও হয়ে গিয়েছিল। এমন ঢিলেঢালা বোলিংয় আর মুখস্থ উইকেটে রান উৎসব হবে এটাই তো স্বাভাবিক।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সত্যে সাহসে অপরাজেয় বন্ধুত্বের আনন্দময় উৎসব
  • নৃত্যকলা চর্চার সিকি শতাব্দী উদ্‌যাপনে অনন্য আয়োজন
  • আয়ারল‌্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রান উৎসব’
  • নদীতে ডিটারজেন্ট দূষণ কমাবে দুই খুদে বিজ্ঞানীর কৌশল
  • টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা লড়াকু চলচ্চিত্র ‘ফিলিস্তিন ৩৬’
  • চট্টগ্রামের ছেলেমেয়েরা অনুপ্রাণিত করল সেই রকম!