‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বৈশাখের অন্যতম আয়োজন। প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধানে এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়। এবার ভিন্নতা ঘটায় আয়োজন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের একাংশ তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে এবার অংশগ্রহণ কমবে বলে তারা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারুকলার ১৩তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এখানে কোনো বাণিজ্যিক বিষয় বা স্পন্সর থাকে না। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর ২৬তম ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল। 
কিন্তু এবারের আয়োজনে সেই রীতি মানা হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা নেই। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
সীমান্ত ঘোষ নামে চারুকলার এক ছাত্র ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘বৈশাখ ১৪৩২-এ আমাদের ব্যাচ, আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে– ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। তবে এ আয়োজনকে ‘স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী’ আখ্যায়িত করেছে ২৬ ব্যাচ। আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে বর্জন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার শোভাযাত্রা নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।’

ভাটা পড়বে আনন্দ আয়োজনে
প্রাক্তন ও বর্তমান একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমবে। চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তৈরি শিল্পকর্ম কেনার লোকও কমবে। সেই সঙ্গে এবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে প্রথম বিতর্ক তৈরি হয় শহীদ আবু সাঈদের মোটিফ তৈরির সিদ্ধান্তে। দ্বিতীয় হচ্ছে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আয়োজনের নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিতে। তৃতীয় বিতর্ক তৈরি হয়, নির্ধারিত ব্যাচকে দায়িত্ব না দেওয়ায়। এসব কারণে প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আয়োজন ও কমিটিকে বর্জন করেছে বলে শুনেছি। আর শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটা ঠিক আছে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন অনেক বেশি রাজনৈতিক হচ্ছে। এতে সবার অংশগ্রহণের যে স্বতঃস্ফূর্ততা, তা নষ্ট হয়ে গেছে।’ অনেকে জানান, তাদের ব্যাচ এবং পুরো চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জন করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল সমকালকে বলেন, ১৯৮৯ সালে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর আয়োজন করে। ২০০৬ সালে প্রতিবছর নির্ধারিত একটি ব্যাচকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে একটি ব্যাচ আয়োজন করলেও যে এ নিয়ে বিতর্ক ছিল না, তা নয়। সেখানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হতো না। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই আয়োজন একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ করা হবে। এ কারণে কোনো ব্যাচকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হয়ে গেছে। তারা এসে কখনও বলেওনি যে, তারা আয়োজন করতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৯ ও ১২ মার্চ অনুষদের সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করি। সেখানে কোনো নির্ধারিত ব্যাচকে দিয়ে আয়োজন না করানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৩ মার্চ ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে একটা বৈঠক হয়। সেখানে নানা ধরনের কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলোতে বর্তমান ছাত্রদের যুক্ত করা হয়। তবে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করতে চাইলে তাদেরও যুক্ত করা হচ্ছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র চ র কল র

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় রাবিতে দোয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদল। আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বাদ আছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

দোয়া অনুষ্ঠানে রাবি জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দেশের মানুষের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি ক্রান্তিলগ্নেও দেশ ছেড়ে যাননি। উনার এক ছেলে যখন মারা যান এবং আরেক ছেলে জেল হাজতে, তখন তাকে বিদেশে চলে যেতে বলা হয়েছে কিন্তু তিনি যাননি। ফ্যাসিস্ট আমলে তাকে সামান্য সম্মানটুকুও দেওয়া হয়নি। আল্লাহর কি কুদরত, তাকে এখন ভিভিআইপি পারসন ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দলমত নির্বিশেষে সকলে বুঝতে পেরেছে, তাকে এখন কতটা প্রয়োজন। আমরা তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দোয়া চাই।’’  

আরো পড়ুন:

চবি ক্যাম্পাসে ভুয়া শিক্ষার্থী আটক

বেরোবিতে শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল নেত্রীর মামলার হুমকি

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাইন উদ্দীন বলেন, ‘‘একটা দেশ, একটা জাতিকে যদি শেষ করতে হয়; তাহলে ওই জাতির লিডারশিপ শেষ করে দিলে জাতি পঙ্গু হয়ে যায়। বর্তমানে দেশে এমন একটা নেতৃত্ব দরকার, যেখানে জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে। বেগম খালেদা জিয়া সেরকম একজন মানুষ। এ জাতি ওনাকে একজন কমন নেতৃত্ব হিসেবে মানে, উনি যদি দাঁড়ান তাহলে জাতি ওনার পিছনে দাঁড়িয়ে যান। এমন একজন নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। পুরো দেশ তার জন্য দোয়া করছে। আমরাও দোয়া করব, আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন।’’   

সভাপতির বক্তব্যে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন,  ‘‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মহান আল্লাহ যেন সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। বেগম জিয়ার এই সংকটময় সময়ে শিশু থেকে শুরু করে সবাই তার জন্য দোয়া করছে এবং অনেকে তার সুস্থতার জন্য রোজা রেখেছেন ও দান-সদকা করে যাচ্ছেন।’’  

দোয়া অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফরিদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতা ও শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। 
 

ঢাকা/ফাহিম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোনো স্কুলে তালা ভেঙে, কোথাও পুলিশ পাহারায় পরীক্ষা
  • দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, সড়কে ছিটকে পড়তেই বাসচাপায় প্রাণ গেল দুজনের
  • বার্ষিক পরীক্ষায় স্কুলে ‘শাটডাউন’: আলোচনা করে পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বাড়বে
  • হাসলে কি অজু ভেঙে যায়
  • সৌদি আরবে শান্তি আলোচনায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তান
  • অবকাঠামো বৈষম্য ও প্রবেশাধিকার সমতা 
  • ইচ্ছা না থাকলেও ১৫ বছর পর যে টুর্নামেন্টে খেলবেন কোহলি
  • সব খাবারে কি কারও অ্যালার্জি হতে পারে?
  • আসিম মুনির: পাকিস্তানের নতুন ‘সুলতান’
  • খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় রাবিতে দোয়া