এই বৎসরও ডেঙ্গু চক্ষু রাঙাইতে শুরু করিয়াছে। অধিকতর উদ্বেগের বিষয় হইল, এইবার মৌসুমের পূর্বেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়িতেছে। মার্চ অপেক্ষা এপ্রিলে আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয়ই দুই গুণ হইয়াছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া শনিবার প্রকাশিত সমকাল জানাইয়াছে, মার্চে ডেঙ্গু লইয়া হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছিলেন ৩৩৬ জন, এপ্রিল পর্যন্ত এই সংখ্যা বাড়িয়া হয় ৭০১। পাশাপাশি মার্চে ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেন তিনজন, এপ্রিলে যাহা ছিল সাতজন। উপরন্তু, গত বৎসরের এপ্রিল অপেক্ষাও এই এপ্রিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। গত বৎসরের এপ্রিলে ডেঙ্গু রোগী ছিলেন ৫০৪ জন, মৃত্যুবরণ করেন দুইজন। এই বৎসর ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হইল, মোট রোগীর প্রায় ৫৭ শতাংশ ঢাকার বাহিরের। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বৎসর এবং তৎপরবর্তী আরও কয়েক বৎসর প্রাণঘাতী রোগটি মূলত রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০২৩ সালে রোগটি রাজধানীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা অবধি ছড়াইয়া পড়িয়াছিল; এমনকি ঢাকার তুলনায় জেলা-উপজেলায়ই বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হইয়াছিল। উহারই ধারাবাহিকতা এই বৎসরও পরিলক্ষিত হইতেছে।
সমস্যা হইল, ঢাকার বাহিরে বহু এলাকা রহিয়াছে যথায় রোগটি সম্পর্কে জনপরিসরে ধারণা যথেষ্ট নহে; চিকিৎসা সরঞ্জামও অপ্রতুল। ফলে একদিকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা যদ্রূপ বাড়িবার আশঙ্কা থাকে তদ্রূপ রোগটিকে বিনাশ করিবার প্রক্রিয়াও জটিল হইয়া পড়ে।
জনস্বাস্থ্যবিদদের অভিমত, থামিয়া থামিয়া বৃষ্টি হইবার কারণে যত্রতত্র পানি জমা হয়, সেই পানিতেই ঘটিতেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশকের বংশবিস্তার। তবে ইহাও সত্য, রোগী বাড়িতে থাকিলেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যক্রম কোথাও দৃশ্যমান নহে। ঢাকার বাহিরে তো দূর স্থান, স্বাস্থ্য বিভাগের সহিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেও কোনো নড়াচড়া করিতে দেখা যাইতেছে না। স্বীকার্য, গত বৎসরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর অন্য বহু সরকারি সংস্থার ন্যায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেও স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্ব পরিবর্তিত হয়, নূতন নেতৃত্বের দায়িত্ব বুঝিয়া লইতে একটু সময় লাগে। কিন্তু ইহা বলিলেও ভুল হইবে না যে, ডেঙ্গুর বিষয়টি যেহেতু প্রতি বৎসরের ঘটনা, তাই দুই সিটি করপোরেশনের নূতন নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণের পরপর সক্রিয় হইলে এতদিনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দৃশ্যমান হইত। বিগত সরকারের আমলে বিশেষজ্ঞগণ বহুবার একটা সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশব্যাপী ডেঙ্গু মোকাবিলার কর্মসূচির জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়াছেন। এই বিষয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থারও একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রহিয়াছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওই সকল কিছুই অরণ্যে রোদনে পরিণত হইয়াছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু সকল ক্ষেত্রে বিগত সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও ভ্রান্ত পদক্ষেপজাত পরিস্থিতি হইতে দেশকে উদ্ধারের শপথ গ্রহণ করিয়াছে, তাই তাহাদের নিকট জনপ্রত্যাশা একটু বেশি। এই আশাবাদ হইতে আমরা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও ঢাকার দুই সিটি
করপোরেশনকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উল্লিখিত তাগিদ দিতে চাহি।
বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন যে, কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান
‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।
‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’
ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।
জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’
করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা।
তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অনন্ত ফেল করিনি।’
সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’