আওয়ামী লীগের আমলে ‘উন্নয়নের জোয়ার’ কিংবা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রভৃতি শব্দগুচ্ছের কবলে পড়েছিল দেশের অর্থনীতি। মন্ত্রীরা ও সংবাদমাধ্যমের মানুষেরা এগুলো বুঝে না বুঝেই প্রচার করতেন। সম্প্রতি আরেক ধরনের শব্দজোয়ার লক্ষ করা যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ‘ইউনূস ম্যাজিক’, ‘নতুন বন্দোবস্ত’ কিংবা ‘সংস্কার’ শব্দগুলো অর্থনীতির বলয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি।
ছোটবেলায় ম্যাজিক ভালোবাসতাম। দু-একটি ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে ধরা খেয়ে সহপাঠীদের হাতে কিঞ্চিৎ প্রহৃত হয়েছি। কিন্তু এর প্রতি আকর্ষণ রয়েই গেছে। আজকাল অর্থনীতিতেও যে ম্যাজিক দেখানো যায়, তা জানতে পেরে বেশ শিহরিত হচ্ছি।
বিশ্বব্যাংক ১৯৯৩ সালে ‘দ্য ইস্ট এশিয়ান মিরাকল’ নামের এক প্রকাশনা করে সাড়া জাগায়। সেখানে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়া—এই চতুর্ব্যাঘ্রের দ্রুত উন্নতিকে ‘মিরাকল’ বা ‘বিস্ময়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এরা ১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ সাল অবধি দ্রুত প্রবৃদ্ধিবলে বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেছিল। কিন্তু কোনো জাদুবিদ্যার কথা সেখানে বলা হয়নি।
আরও পড়ুনঅর্থনীতির জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বছর০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের নীতিনির্ধারক ড.
সম্প্রতি বেশ কিছু টিভি প্রতিবেদন দেখেছি। একটিতে দেখলাম বলা হচ্ছে, এই সরকারপ্রধান নাকি অর্থনীতির ম্যাজিক শুরু করেছেন। তাতে অর্থনীতির সব কটি সূচক নাকি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বের ‘আশার বাতিঘর’ হবে বাংলাদেশ। কেউ বলেছেন, ম্যাজিক নাকি টর্নেডোর আকার ধারণ করেছে। ফলে কমে গেছে বিদেশমুখিতা, মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব।
এক প্রতিবেদনে সাবেক একজন ডাকসু নেতা মন্তব্য করেছেন, এই সরকারপ্রধান নাকি ম্যাজিকের মতো কাজ করছেন। একজন শুভানুধ্যায়ী একটি টিভি প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন, যেখানে গভর্নর বলেছেন যে বাংলাদেশের নাকি আইএমএফের ঋণের আর প্রয়োজন নেই। এটি কি ‘আঙুর ফল টক’, নাকি সত্যিই রিজার্ভ উপচে পড়ছে, তা বুঝলাম না। এতগুলো বিস্ময়কর সংবাদ শুনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, ‘বাংলাদেশের কোথাও কি স্বর্ণখনি পাওয়া গেল, যার খবর আমি রাখিনি?’
অবশেষে কোথাও স্বর্ণখনির সন্ধান না পেয়ে বুঝে নিলাম, এ হচ্ছে সরকারের তুষ্টিসাধক কিছু সংবাদমাধ্যমের পুরোনো অভ্যাস—নতুন বোতলে পুরোনো শুরার জোগান দেওয়ার কসরত। আওয়ামী আমলে এদের জোগান অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন ভিন্নরূপে এদের উত্থান কেন হচ্ছে। অর্থনীতিতে বায়বীয় কথাবার্তা বিপজ্জনক।
গণিত, পরিসংখ্যান ও সঠিক পর্যবেক্ষণ অর্থনীতিকে পাহারা দেয়। সেগুলো থেকে কোনো ম্যাজিক বা বিস্ময়কর কিছু পাওয়া তো দূরের কথা, স্বাভাবিক সাফল্যেরও সংবাদ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সরকারের তথ্য বিভাগ সবকিছুকে ‘ব্রিলিয়ান্ট’ বললেও আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক এতে বিগলিত হতে পারছে না। বরং অনেক বিষয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।
জাতীয় জীবনের এসব সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ না করে শুধু রিজার্ভ বাড়লেই কী করে ‘ম্যাজিক’ শুরু হয়ে যায়, তা বোঝা গেল না। রিজার্ভ একটি অনুষঙ্গ বা নির্দেশক। জাতির চূড়ান্ত প্রাপ্তির কোনো বিষয় নয়। জাতি সবশেষে ভাগ করে নেয় জিডিপি, মানবিক মূলধন, নিরাপত্তা ও ক্ষীয়মাণ দারিদ্র্যের মাধ্যমে জীবনযাত্রার উন্নতি। অন্তত সেখানে ম্যাজিকের কিছু দেখা যাচ্ছে না।আর্থিক খাতকে যদি একটি গাড়ির সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে চারটি চাকা হচ্ছে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে ব্যাংক, পুঁজিবাজার, বিনিয়োগ ও রাজস্ব–সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর।
পরিকল্পনা কমিশন হচ্ছে একান্নবর্তী পরিবারে থাকা বড় দাদুর মতো, যিনি সংসারের দর্শনগত দিকগুলো দেখেন এবং স্বপ্ন দেখতে শেখান। ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা ছিল খেলাপি ঋণ, যার বিন্দুমাত্র উন্নতি সাধিত হয়নি। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণের ১৩ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এটি হয়েছে ২০ শতাংশের ওপর। গভর্নরকে ধন্যবাদ যে তিনি প্রকৃত খেলাপির চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। আওয়ামী আমলের লুটেরাবান্ধব হিসাববিদ অর্থমন্ত্রীর মতো ১০০ টাকার খেলাপিকে ৫ টাকা দেখানোর চেষ্টা করছেন না।
গত মার্চে আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি মুডিস বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দৃষ্টিভঙ্গি বা আউটলুক ‘সুস্থির’ থেকে কমিয়ে ‘ঋণাত্মক’ করে দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে মুডিস সম্পদের ঝুঁকি বৃদ্ধি ও অর্থনীতির অধোগতিশীল অবস্থাকে দায়ী করেছে। প্রায় ১০টি ব্যাংক মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। এদের অনেককেই টাকা ছাপিয়ে সাময়িক তারল্য সহায়তা দেওয়া হলেও শেষতক এরা বাঁচবে কি না সন্দেহ।
পুঁজিবাজারের অবস্থাও তথৈবচ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শুধু পতনের দিকেই যাচ্ছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে এই সূচকের মান ছিল ৫৭৬৪। বছরে প্রায় ১২ শতাংশ পতন নিশ্চিত করে এটি এখন ৫০৯৭-এ ঠেকেছে। আগেও অবস্থা ভালো ছিল না। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা সম্প্রতি এর কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করেছেন। যে দেশের পুঁজিবাজারই ক্রমাবনতির শিকার, সে দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা টাকা ঢালতে আসবে না।
২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ, যা আগের বছরের একই কালপর্বের প্রায় অর্ধেক। অর্থাৎ সরকারের তথ্যবিভাগ যতই ‘ব্রিলিয়ান্ট পারফরম্যান্স’ দাবি করুক না কেন, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা ক্রমে স্তিমিত হয়ে পড়ছেন। নির্বাচনের আগে টাকা ঢালার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুনবিনিয়োগ সম্মেলন থেকে কী পেলাম, কী পাব২১ এপ্রিল ২০২৫এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৮২৪ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছর একই কালপর্বে ছিল এক বিলিয়ন ডলারের ওপর। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের যে সামান্য বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সেটিও সঠিক বিনিয়োগ বা উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা তদন্তের দাবি রাখছে। কারণ, বেকারত্ব বাড়ছে এবং মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে দৌড়ে কুলাতে পারছে না। তাই মানুষ সঞ্চয় ভাঙিয়ে খাচ্ছে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নেট বিক্রয় হয়েছে ঋণাত্মক ৭ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য সঞ্চয়পত্রের নেট বিক্রয় ঋণাত্মক হওয়ার বিষয়টি উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আগের সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়েছে। এ সরকার তা থামাতে পারছে না। ২০২৪–২৫ সময়ের জুলাই-ফেব্রুয়ারি কালপর্বে পুঁজিপণ্যের আমদানি কমে গেছে ২৫ শতাংশ। এতে অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা কমে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে গত ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। এখানে কোনো ‘ম্যাজিক’ কাজ করছে না।
পত্রিকাগুলোতে খুব একটা ভুয়া রিপোর্ট ছাপা হয় না। কিন্তু ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে আজকাল ফালতু রিপোর্ট ছাড়া হচ্ছে, যেখানে ন্যূনতম সম্পাদকীয় তদারকি ও পেশাদারত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। ফলে মানুষ অর্থনীতি বিষয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। অথচ অর্থনীতির সূচকগুলো হচ্ছে রোগীর গায়ের তাপমাত্রা বা রক্তচাপের সংখ্যাগুলোর মতো। এখানে মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছ্বসিত বা বিষাদগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ খুব কম।
গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য কমায়, যা শান্তি আনয়নে সহায়ক—এ যুক্তিতেই নোবেল কমিটি ড. ইউনূসকে শান্তির ক্যাটাগরিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে। এখন সে রকম একজন গ্লোবাল সেলিব্রিটিকে রাষ্ট্রের প্রধান প্রশাসক হিসেবে পেলে দেশে দারিদ্র্য কমবে, অর্থনীতি আরও মজবুত হবে এবং সামাজিক শান্তি বাড়বে, এটিই প্রত্যাশিত।
কিন্তু বিশ্বব্যাংকের মতে, নতুন করে এ বছর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র হবে। জাতীয় দারিদ্র্যের হার বেড়ে হবে প্রায় ২৩ শতাংশ, যা এত দিনের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতার এক বিপরীত স্রোত। সামাজিক শান্তির বিষয়টি আমাদের করিতকর্মা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাই ভালো বলতে পারবেন।
জাতীয় জীবনের এসব সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ না করে শুধু রিজার্ভ বাড়লেই কী করে ‘ম্যাজিক’ শুরু হয়ে যায়, তা বোঝা গেল না। রিজার্ভ একটি অনুষঙ্গ বা নির্দেশক। জাতির চূড়ান্ত প্রাপ্তির কোনো বিষয় নয়। জাতি সবশেষে ভাগ করে নেয় জিডিপি, মানবিক মূলধন, নিরাপত্তা ও ক্ষীয়মাণ দারিদ্র্যের মাধ্যমে জীবনযাত্রার উন্নতি। অন্তত সেখানে ম্যাজিকের কিছু দেখা যাচ্ছে না।
● ড. বিরূপাক্ষ পাল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডে অর্থনীতির অধ্যাপক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র সরক র র ম র কল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব শরণার্থী দিবসে উদ্বাস্তু জীবনের ভাবনা
২০ জুন ছিল বিশ্ব শরণার্থী দিবস। সেই দিবস উপলক্ষে ১৯ জুন কক্সবাজার শহরে কোস্ট ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আমার যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়। সভায় ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দান: ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভাটি ছিল মূলত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অনিশ্চয়তা ও ক্যাম্পে শরণার্থীদের পরিপোষণের বার্ষিক বাজেট সংগ্রহ হ্রাসের উদ্বিগ্নতাকে ঘিরে। তার সঙ্গে আলোচনায় চলে ছিল ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নানান বিষয়ে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি তহবিল ঘাটতির কথা বলে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম হ্রাস করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে নিযুক্ত শত শত শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পায়।
সভায় বক্তাদের সমস্যার বিবরণ ও তালিকা পেশ ব্যতীত সমাধানের কোনো পথনির্দেশের হদিস পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া আলোচনা সভায় স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা চোরাচালান রোধের রূপরেখার কিছুই জানা যায়নি। আলোচনা সভায় উখিয়া-টেকনাফের জনপ্রতিনিধিদের মুখে সবচেয়ে করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে রোহিঙ্গাদের অবাধে শ্রমমজুরিতে প্রবেশ ও হাটবাজারে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারায় টেকনাফ-উখিয়া উপজেলার সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবন নির্বাহের অচলাবস্থা সৃষ্টির বিষয়টি নিয়ে।
সভায় জনপ্রতিনিধিরা আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য দূষণের কারণে কৃষকদের কৃষি কাজে মারাত্মক পরিবেশদূষণের বাধা-বিঘ্নতা। এখনো ফয়সালা হয়নি একটানা কয়েক বছর ধরে নাফ নদীতে জেলেদের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় জেলেদের নিয়মিত মাছধরার কাজে বাধাগ্রস্ত হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দারিদ্র্য ও হতাশায় জীবনধারণের বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পায়। আলোচনা সভায় সরকারি কর্মকর্তাদের মুখেই শোনা গেছে সীমান্তে মাদক চোরাচালানে সীমান্ত পাহারাদারদের ব্যর্থতার কথা।
আলোচনায় আরও প্রকাশ পেয়েছে, রোহিঙ্গাদের পরস্পরের মধ্যে হানাহানি এবং রোহিঙ্গা কর্তৃক স্থানীয় বাসিন্দাদের জিম্মি করার মতো অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা। বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী স্থানীয় জনসংখ্যার তুলনায় অধিকসংখ্যক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পবাসী কীভাবে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে জেলার সর্বত্র বেপরোয়াভাবে বিচরণ করছে এবং নানান পেশায়—ব্যবসায় যুক্ত হতে পারছে, তার কোনো ব্যাখ্যা স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানা যায়নি। এতে স্থানীয় জনগণ উদ্বিগ্ন।
সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের বিবরণে প্রকাশ পেয়েছে, রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় ব্যভিচারী ব্যবসার চিত্র। এ আলোচনা সভায় যে চিত্র ফুটে উঠেছে—রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে শঙ্কা বাড়া বৈ কমেনি। সরকারের উদ্যোগে রোহিঙ্গা ও ক্যাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি সব দপ্তরের প্রধান, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির নেতা ও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ণিত সব সমস্যা সমাধানের জরুরি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি উঠেছে সভায়।
২০২৪ সালের বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানের পর এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। রাষ্ট্রভাবনার বিশেষজ্ঞরা, সব রাজনৈতিক দল, অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সব ব্যক্তি ও সংস্থার আর কোনো সংশয় নেই যে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি ক্রমে একটি একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে উঠেছিল। যার পরিণতি ঘটেছে একটি অভ্যুত্থানে।
এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার এক বছরের মাথায় বিশ্ব শরণার্থী দিবসের কথা ভাবতে গিয়ে আমার মনপ্রাণ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে তাঁদের কথা ভেবে, যাঁরা আমাদের দেশের, আমাদের পরিচিতজনেরা, বন্ধুরা; যাঁরা কিনা এক বছর আগে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, তাঁরা নিজ দেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে দেশের অভ্যন্তরে কিংবা পরদেশে শরণার্থী হয়ে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করবেন।
রোহিঙ্গারা তাদের রাষ্ট্র ও সেই রাষ্ট্রের জনগণ কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে, নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের অধিকার বঞ্চিত হয়ে, পরিশেষে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার দলনেতা শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ প্রভৃতি বলে যে কৃতিত্বের দাবিদার হয়েছিলেন, ভাগ্যের কী করুণ পরিণতি, তাঁদের দলনেতাসহ অনেকেই আজ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী!
এখন আমাদের সবার ভেবে দেখার বিষয় হয়ে উঠেছে, একটি রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের হঠাৎ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার কারণ কোথায় নিহিত রয়েছে। আমাদের মধ্যে যাঁরা আকস্মিকভাবে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন, তার জন্য অনেকে ক্ষুব্ধ, অনেকে খুশিতে ডগমগ, অনেকে চোখের জলে ভাসছেন। কিন্তু আমার মন তাঁদের জন্য দুঃখে ভারাক্রান্ত। এই উদ্বাস্তু হওয়ার কারণ খুঁজে পেলে দেখতে পাব, রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার কারণের সঙ্গে আমাদের বারবার উদ্বাস্তু হওয়ার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
আমার এই লেখায় উদ্বাস্তু বা শরণার্থী জীবনের অভিজ্ঞতা, সেই দুঃসহ জীবনের ভার বা তার মর্মবস্তুর কোনো ছিটেফোঁটাও ব্যক্ত করতে পারব না। এখানে তা ব্যক্ত করার দুঃসাহস দেখানো আমার উদ্দেশ্যও নয়। কারণ সেই উদ্বাস্তু জীবনযাপনের সেই দুর্ভাগ্য আমার জীবনে কখনো নেমে আসেনি। একাত্তরে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার দুঃসহ-দুর্গম যাত্রার বিবরণ ও জীবনযাপনের কাহিনি বহু আমি পড়েছি; কিন্তু উদ্বাস্তু জীবনভোগী মানুষের অভিজ্ঞতার কিয়দংশও কারও জীবনচরিত পাঠে জানা যাবে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আমিও তা–ই মানি। আমি ভাবতে চাইছি, মানবজীবনে সেই উদ্বাস্তু জীবনযাপনের দুঃসহ-দুর্ভাগ্য যেন কারও জীবনে নেমে না আসে, তার কারণ ও করণীয় কি খুঁজে দেখতে।
তা বোঝার জন্য একটু পেছনে ফিরে তাকাতে চাই। ব্রিটিশ–শাসিত এই অখণ্ড বাংলার নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী, যার প্রধান অংশ কৃষিজীবী ও বাঙালি মুসলমান, তারা মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র চাইলেন। অবশেষে ১৯৪৭ সালে শুধু পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠী পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পারলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নে বিভিন্ন জাতির মুসলমানদের মধ্যে ভাই ভাই সম্প্রীতি ও মর্যাদার সুর প্রধান হয়ে বাজলেও পাকিস্তান কায়েম হওয়ার পর সেই সুর ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। দেখা গেল পাকিস্তান রাষ্ট্রে পশ্চিম পাকিস্তানের নানান জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী ভূস্বামী ও সামরিক-বেসামরিক আমলারা রাষ্ট্র পরিচালনার অংশীদার হিসেবে এবং রাষ্ট্রের অধিকার ভোগে একই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পূর্ব বাংলার তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীকে কিংবা বাঙালি মুসলমানদের সমমর্যাদায় ও সম–অধিকারে একই পঙ্ক্তিতে বসাতে রাজি নন।
১৯৭০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাঙালিদের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিপুল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির সমমর্যাদা ও সম–অধিকারে রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পাওয়া যখন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, তখন সেই ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার হীন চেষ্টা ও আঘাত থেকেই চরম বিরোধের সৃষ্টি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণির পক্ষ থেকে সেই বিরোধ ও বাধা থেকেই অনিবার্য উঠেছিল সংঘর্ষ ও বিদ্রোহ। তখন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল একাত্তরের জনযুদ্ধ এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উদ্বাস্তু জীবনের সূত্রপাত। সব কথাই আমাদের সবার জানা কথা। আমাদের রাজনীতিবিদদের আত্মবিস্মৃত স্বভাবের চরিত্রের জন্যই এই জানা কথার পুনরাবৃত্তি। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের জনগণের কারও কারও উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার কারণ একই ঘটনার সূত্রে গ্রথিত।
১৯৭১ সালের জনযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পর থেকে ১৯৯০ অভ্যুত্থান এবং ১৯৯১ থেকে ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলাদেশের সব জাতি-গোষ্ঠী, সব ধর্ম-বর্ণ ও ধনী-নির্ধন জনগোষ্ঠীর মানুষকে নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমমর্যাদা ও সম–অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার ব্যবস্থাপনা থেকেই একনায়কতন্ত্রের উদ্ভব ও ফ্যাসিবাদের জন্ম। রাষ্ট্রের সব জনগোষ্ঠীর ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে যার যার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে একত্রে মিলেমিশে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রে বসবাস করার ব্যবস্থাপনা তৈরি করার শাসক শ্রেণির যে দায়িত্ব ছিল তার ব্যর্থতা থেকেই ফ্যাসিবাদের জন্ম। সেই গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রের বহু বাসনার দানা বেঁধেছিল একাত্তরে।
যে রাজনৈতিক চর্চা ও রাষ্ট্রশাসনের ব্যবস্থা অন্য সবাইকে বঞ্চিত করার প্ররোচনা দেয়, নিজের ভাবাদর্শে ও মতবাদে মিলে যেতে জবরদস্তি ও বল প্রয়োগ করে, পরিশেষে রাষ্ট্রের অন্য সবাইকে মর্যাদা ও অধিকার দিতে অস্বীকার করে, সেই ধরনের রাষ্ট্র গড়ে তোলার চর্চার মধ্যেই নিহিত রয়েছে রাষ্ট্রের কারও না কারও উদ্বাস্তু হওয়ার বীজ। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানেই যার যার চিন্তা, যার যার ভিন্নতা ও বৈশিষ্ট্য নিয়েই একটি জনগোষ্ঠীর একজন হয়ে রাষ্ট্রের কাছ থেকে নাগরিক অধিকার ভোগবাসনার বন্দোবস্ত।
বহু ব্যর্থতা ও ত্যাগের পর ২০২৪ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্র গড়ে তোলার আবার সুযোগ এসেছে। আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জনগণ বহু জাতির, বহু ধর্মের এবং বহু বৈচিত্র্যের। যার যার সৌন্দর্য ও মর্যাদা তার তার। কারও শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করে অন্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, অন্যের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা এবং সর্বোপরি সেই অপচেষ্টা রাষ্ট্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টার মধ্যেই নিজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে। রাষ্ট্রের মাধ্যমে কোনো জনগোষ্ঠীর সব নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে নাগরিকের বিভিন্নতার বিসর্জনের প্রয়োজন পড়ে না। বিভিন্নতা নিয়ে নাগরিকের সমবিকাশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
নাগরিকের সমবিকাশের অধিকারহীনতা থেকেই জন্ম নেয় বৈষম্যের। অন্য অধিকাংশ মানুষকে অধিকারহীন করে তোলার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার ফলে সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্র কর্তৃক এই বৈষম্য সৃষ্টির ফলে প্রতিনিয়ত দেশের মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে, আমরা তাদেরকেই শরণার্থী দিবসের আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা করছি। কিন্তু যে মানুষটি বাপ-দাতার ভিটায় জন্ম নিয়ে, সেই পরিবেশের আলো–হাওয়ায় বেড়ে উঠে জীবন শুরু করেছিল, রাষ্ট্রের বৈষম্য-নীতির ফলে দারিদ্র্যের কশাঘাতে অনেকেই বাস্তুচ্যুত হয়ে কোনো বড় শহরের ফুটপাতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে কিংবা কোনো বস্তির গলির আস্তানায় ঠাঁই নিতে হয়েছে। তারাও উদ্বাস্তু হওয়ার কম কিসে?
রাষ্ট্রের উন্নয়ন নীতির বৈষম্যের কারণে বেড়িবাঁধের অভাবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে যার পৈতৃক বাস্তুভিটা ভাসিয়ে নিয়ে যাকে কোনো শহরের ফুটপাতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, সত্যিকার অর্থে সে–ও বাস্তুচ্যুত।
দেশের অভ্যন্তরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বা প্রাকৃতিক দুযোগের কারণে বা দারিদ্র্যের কারণে যারা উপকূল থেকে হোক কিংবা প্রত্যন্ত কোনো গ্রাম থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তারা সবাই উদ্বাস্তু। উদ্বাস্তু হওয়া এসব নাগরিক যারা শহরের ফুটপাত বা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে, তারা রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রের সুশাসন দূরে থাক, সকল ধরনের শাসন ও সেবা থেকে বঞ্চিত।
রাজনৈতিক কারণে যারা উদ্বাস্তু হয়েছে, তারা কোনো না কোনো আইনের আওতায়, কোনো না কোনো কর্তৃপক্ষের বা সংস্থার সেবা পায়। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও অতি দারিদ্র্যে পতিত হয়ে যারা উদ্বাস্তু হয়ে নিজেদের সমাজ ও গ্রাম হারিয়ে শহরের ফুটপাতে বিচ্ছিন্নভাবে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের উদ্বাস্তু জীবনের যাতনা কম নয়।
একাত্তরে উদ্বাস্তু হওয়ার মর্মে ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের সব নাগরিককে সমান মর্যাদা ও অধিকার না দিতে চাওয়া শাসকশ্রেণির উদ্যত ও বাড়াবাড়ির মধ্যে আমরা খুঁজে পাব। আমরা কি ২০২৪ সালে আমাদের প্রতিবেশী, পরিচিতজন ও বন্ধুদের উদ্বাস্তু হওয়ার পেছনের কারণ তাদের নিজেদের, নিজেদের দলের ও দলের নেতাদের শ্রেষ্ঠত্বের বড়াইয়ের এবং অন্যদের বঞ্চিত করার রাজনৈতিক চর্চার ভুলের মধ্যে খুঁজে পেতে চেষ্টা করব না?
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আমাদের নিজেদের উদ্বাস্তু হওয়ার কারণ খুঁজে দেখতে চেষ্টা করব। বর্তমানে, নতুন পর্যায়ের রাষ্ট্র গড়ার সন্ধিক্ষণে রাজনৈতিক কর্মী ও দলনেতারা যদি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হই, আমরা যদি আমাদের সমাজের বিভিন্নতাকে, বৈচিত্র্যকে সানন্দে মেনে নিয়ে সবাইকে সমান মর্যাদার চোখে সম–অধিকার নিশ্চিত করে রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ব্যর্থ হই, এবং সেই অঙ্গীকার নিয়ে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক জীবনধারার চর্চা না করি, তাহলে একই সঙ্গে আমাদের উদ্বাস্তু হওয়ার বীজ আমরাই বপন করব।
মকবুল আহমেদ সাবেক অধ্যক্ষ ও লেখক