বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশংসায় এডিবির প্রেসিডেন্ট
Published: 8th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বছরের বার্ষিক সভায় উত্থাপিত বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৮ মে) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সভা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
সভায় বাংলাদেশ ও এডিবির দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্ব পুনর্ব্যক্ত করা হয়, যা বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে উন্নয়ন সহযোগিতা, নীতিগত সংস্কার এবং জলবায়ু সহনশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সহনশীলতার প্রশংসা করে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা বলেছেন, শুরু থেকেই এডিবি বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।
এডিবির অটুট প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এডিবি বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় পাশে থাকবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড.
তিনি জানান, বাংলাদেশে এডিবির মোট পোর্টফোলিও বর্তমানে ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি উভয় পক্ষের দৃঢ় সহযোগিতার প্রতিফলন।
বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকায় অর্থ উপদেষ্টা এডিবির সহায়তা যেন দেশের পরিবর্তনশীল উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, এই রূপান্তরের মুহূর্তটি একটি ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ও সংস্কারভিত্তিক সরকারের নেতৃত্বে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়েই চলছে।
এই প্রেক্ষাপটে তিনি শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও জনসেবার মানোন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের সাহসী সংস্কার কর্মসূচিতে এডিবির সমর্থনের আহ্বান জানান।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা কৌশলগত কিছু ক্ষেত্রে এডিবির সম্পৃক্ততা আরো গভীর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে—সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা, কর প্রশাসনের আধুনিকায়ন এবং ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগ।
তিনি টেকসই নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে এডিবির জরুরি সহায়তার বিষয়টিও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট ও জলবায়ু সহনশীল শহর, উন্নত পৌর সেবা এবং আঞ্চলিক নগর অবকাঠামো।
তিনি জানান, বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন এবং আঞ্চলিক জ্বালানি বাণিজ্য সম্প্রসারণেও এডিবির সহায়তা কামনা করে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে এডিবির বর্ধিত রেয়াতি সহায়তা শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, কার্যকর জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য কৌশলগত বিনিয়োগ বলে উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সহনশ ল জলব য় ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু অর্থায়ন নয়, কাঠামোগত সংস্কারে এডিবির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: অর্থ উপদেষ্টা
অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের পথে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সংকটপূর্ণ সময়ে শুধু অর্থায়ন নয়, কাঠামোগত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদী সহনশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এডিবির ভূমিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ইতালির মিলানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বার্ষিক সভায় ভাষণ প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল রূপান্তর, জলবায়ু সহনশীলতা এবং আঞ্চলিক সংযোগের ওপর জোর দেন। আজ মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
মিলানে অনুষ্ঠিত এ সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অর্থ উপদেষ্টা এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা ও অন্যান্য সম্মানিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের পথে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই সংকটপূর্ণ সময়ে শুধু অর্থায়ন নয়, কাঠামোগত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদী সহনশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এডিবির ভূমিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
উপদেষ্টা চারটি প্রধান খাতে এডিবির সঙ্গে উন্নততর সহযোগিতার আহ্বান জানান-
ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি-অবকাঠামো, ই-গভর্ন্যান্স ও ডিজিটাল শিক্ষা সম্প্রসারণে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়; জলবায়ু কার্যক্রম- নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি এবং উপকূলীয় সুরক্ষার জন্য বেশি পরিমাণে ছাড়যুক্ত অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে; আঞ্চলিক সংযোগ- দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য, শক্তি ও পরিষেবা ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়; টেকসই অর্থায়ন- ঋণ টেকসইতা বজায় রেখে উন্নয়ন চাহিদা পূরণের জন্য ছাড়যুক্ত তহবিল ও উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
তিনি আরও বলেন, আজকের সংকটকে আগামীর সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে হলে আমাদের সাহসী চিন্তাধারা, গভীর অংশীদারিত্ব ও সম্মিলিত সংকল্পের প্রয়োজন। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া, আগামীর প্রস্তুতি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। গত পাঁচ দশকে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে আনুমানিক ৩.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে, যা মূলত দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। সাম্প্রতিক আর্থিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের মূল উন্নয়ন অগ্রাধিকারের প্রতি- যেমন জলবায়ু সহনশীলতা, মানবিক সহায়তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি- সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কৌশল অনুসারে, এফসিডিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাণিজ্য, জলবায়ু অর্থায়ন, এসএমই উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রশাসন এবং শিক্ষা খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সবুজ বিনিয়োগ, কারিগরি প্রশিক্ষণ, নদী পুণরুদ্ধার, বেসরকারি খাত, কারিগরি সহায়তা, পয়:নিষ্কশন ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা এবং যৌথ গবেষণায় সহায়াতার আহ্বান জানায়।