বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বছরের বার্ষিক সভায় উত্থাপিত বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।

এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৮ মে) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সভা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ ও এডিবির দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্ব পুনর্ব্যক্ত করা হয়, যা বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে উন্নয়ন সহযোগিতা, নীতিগত সংস্কার এবং জলবায়ু সহনশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সহনশীলতার প্রশংসা করে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা বলেছেন, শুরু থেকেই এডিবি বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। 

এডিবির অটুট প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এডিবি বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় পাশে থাকবে।

অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ এডিবির অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যা অবকাঠামো, জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশে এডিবির মোট পোর্টফোলিও বর্তমানে ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি উভয় পক্ষের দৃঢ় সহযোগিতার প্রতিফলন।

বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকায় অর্থ উপদেষ্টা এডিবির সহায়তা যেন দেশের পরিবর্তনশীল উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, এই রূপান্তরের মুহূর্তটি একটি ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ও সংস্কারভিত্তিক সরকারের নেতৃত্বে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়েই চলছে।

এই প্রেক্ষাপটে তিনি শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও জনসেবার মানোন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের সাহসী সংস্কার কর্মসূচিতে এডিবির সমর্থনের আহ্বান জানান।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা কৌশলগত কিছু ক্ষেত্রে এডিবির সম্পৃক্ততা আরো গভীর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে—সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা, কর প্রশাসনের আধুনিকায়ন এবং ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগ।

তিনি টেকসই নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে এডিবির জরুরি সহায়তার বিষয়টিও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট ও জলবায়ু সহনশীল শহর, উন্নত পৌর সেবা এবং আঞ্চলিক নগর অবকাঠামো।

তিনি জানান, বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন এবং আঞ্চলিক জ্বালানি বাণিজ্য সম্প্রসারণেও এডিবির সহায়তা কামনা করে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে এডিবির বর্ধিত রেয়াতি সহায়তা শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, কার্যকর জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য কৌশলগত বিনিয়োগ বলে উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সহনশ ল জলব য় ন নয়ন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান সংস্কার ও বিচার দেখতে চায় খেলাফত মজলিস

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। তবে দলটি মনে করে, নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সম্প্রতি প্রকাশিত জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে দলটি।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলটির পক্ষ থেকে এসব দাবি তোলা হয় বলে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সভায় খেলাফত মজলিসের নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগেই দৃশ্যমান সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি। গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রয়োজন। পেশিশক্তি, কালোটাকার প্রভাবমুক্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে হবে। জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বৈঠকে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত জুলাই ঘোষণাপত্রে বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এগুলোর উল্লেখ করে বলা হয়, জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৩তম দফায় এক-এগারো সরকার ও ২০০৮ সালে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর পাতানো নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ১৭তম দফায় অভ্যুত্থানের শহীদের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার উল্লেখ করা হয়েছে, যা জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখিত সংখ্যা থেকে অনেক কম।

এ ছাড়া  ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে আলেম-উলামা ও ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা, ২০১৮ সালে ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক দমন-নিপীড়ন, ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে ২১ জন মানুষকে হত্যা—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান খেলাফত মজলিসের নেতারা। অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধনের দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন, এসব বিষয় সংশোধন করে জুলাই ঘোষণাপত্রে সংযুক্ত করা না হলে তা অপূর্ণাঙ্গ, অভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থি ও জাতির জন্য হতাশাজনক হবে।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, মাওলানা সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ