চীন সফরের সে দিনগুলোর কথা এখনও মনে পড়ে: খুরশীদ আলম
Published: 10th, May 2025 GMT
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আজ দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বরেণ্য সংগীতশিল্পী মো. খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘মুস্তাফা জামান আব্বাসীর চলে যাওয়া সংগীত জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ, তিনি শুধু অনবদ্য কণ্ঠশিল্পী ছিলেন না, একই সঙ্গে ছিলেন সংগীত গবেষক, উপস্থাপক, লেখক, পরিচালক– এক কথায় দেশীয় সংস্কৃতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি কিংবদন্তি মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের সুযোগ্য উত্তরসূরি।’
খুরশীদ আলম আরও বলেন, ‘বড় মাপের এ সাংস্কৃতিককে কখনও মনে অহম ভর করতে দেখিনি। মানুষটি ছিলেন খুবই সহজ-সরল। আমরা যারা অনুজ তাদের সঙ্গেও অনায়াসে মিলেমিশে গান গাইতেন।’
স্মৃতিচারণ করে করে খুরশীদ আলম বলেন, ‘এখনও মনে পড়ে, তাঁর সঙ্গে চীন সফরের সে দিনগুলোর কথা। সেটি ছিল ১৯৭৭ সাল। আমার প্রথম বিদেশ সফর। সেখানে গিয়ে কীভাবে কী করব, তা নিয়ে কিছুটা ভয় ছিল। কিন্তু আব্বাসী ভাইয়ের সঙ্গে মেশার পর সব ভয়-সংকোচ মুহূর্তেই কেটে গিয়েছিল। আমরা তাঁর সঙ্গে দল বেঁধে কোরাস গানও গেয়েছি। তিনি লোকসংগীতে যেমন অতুলনীয়, তেমনি ইসলামী গান বিশেষ করে হামদ-নাতেও ছিলেন দারুণ পারদর্শী। নানা বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা যেমন ছিল, তেমনি ছিল অগাধ জ্ঞান।’
খুরশীদ আলমের কথায়, ‘সবকিছু মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের মহিরুহ; যার শূন্যতা কখনও পূরণ হবে না। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, যেখানে থাকুন, তাঁর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গরমে খাবারে অরুচি, পানিশূন্যতা
সারাদেশে চলছে মৃদু তাপপ্রবাহ। চৈত্রের কাঠফাটা রোদে চট্টগ্রামে ক’দিন ধরে তাপমাত্রা উঠছে প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বাড়তি এই তাপমাত্রায় তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এতে হাঁসফাঁস জনজীবন। কাঠফাটা এই গরম কষ্ট বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় খাঁচায় বন্দি থাকা সাড়ে ছয় শতাধিক পশুপাখির। খরতাপে বাড়ছে অস্বস্তি। অনেক পশু-প্রাণীর শরীরে দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা। এতে আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে পশুপাখির মধ্যে। গরমের কারণে খাবার গ্রহণেও দেখা দিচ্ছে অরুচি। অনেক পশু-পাখি গরমে শুধু হাঁপাচ্ছে। দুঃসহ এ গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে এখন বেশির ভাগ সময় পানিতেই কাটছে বাঘ, সিংহ, ভালুকসহ বেশির ভাগ পশু প্রাণীর।
চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকায় পশু-প্রাণীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে বাড়ানো হয়েছে যত্ন ও নজরদারি। পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য গরম থেকে কিছুটা হলেও প্রশান্তি দিতে প্রতিদিন বাড়তি পানি দেওয়া হচ্ছে। খাবারের তালিকায় আনতে হচ্ছে ভিন্নতা। দেওয়া হচ্ছে বাড়তি স্যালাইন, ভিটামিন সি, গ্লুকোজ জাতীয় তরল খাবার। সরেজমিন গিয়ে গরমের তীব্রতায় মাংসাশী প্রাণীগুলোকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের মতো বাঘ-সিংহের সেই হুঙ্কার তেমন চোখে পড়েনি। স্বাভাবিক সময়ে চিড়িয়াখানার প্রবেশমুখে
থাকা সিংহের হুঙ্কার শুনতেন দর্শনার্থীরা; চোখে পড়তো বাঘ ও সিংহের খাঁচার চারপাশে রাজার মতো ঘুরে বেড়ানো ও ছুটোছুটির দৃশ্য। তবে গরম থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে এখন বেশিরভাগ সময় কাটছে খাঁচার ভেতরে থাকা পানির চৌবাচ্চায়। মাথাসহ পুরো শরীর ভিজিয়ে বসে থাকে প্রাণীগুলো। কখনও খুনসুটি করে; পানিতে ডুব দিয়ে সময় কাটছে বাঘ করোনা, জয়া, জো বাইডেন, শুভ্রার। স্বাভাবিক সময়ের মতো চিৎকার, চেঁচামেচি এখন তেমন নেই ম্যাকাউ, টিয়াসহ বেশিরভাগ পশু-পাখির। ভালুক কখনো পানিতে কখনও খাঁচায় বসে পার করছে সময়। খাঁচার এক কোণে বসে থাকে মায়া হরিণ।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ‘চট্টগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে ভয়াবহ গরম পড়ছে। তীব্র তাপদাহের কারণে পশু-পাখিদেরও কষ্ট হচ্ছে। গরম থেকে স্বস্তি পেতে পানিতেই বেশিরভাগ সময় থাকতে স্বাছন্দবোধ করছে তারা। এখন প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়তি পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। গরমের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পশু-প্রাণীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শারীরিক সুস্থতা ঠিক রাখতে বাড়তি স্যালাইন, ভিটামিন সি, গ্লুকোজ, ইলেক্ট্রলাইটসহ নানা তরল খাবার বেশি দেওয়া হচ্ছে।’
পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের পূর্বাভাস কর্মকর্তারা বলছেন, জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে চট্টগ্রামে তাপমাত্রা বাড়ছে। যা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় গরমের তীব্রতা বেশি অনুভব হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেও এতে তেমন কমবে না গরমের তীব্রতা। এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে গরমের তীব্রতা আরও বাড়বে।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকা থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসা মো. ইরফান বলেন, ‘বাঘ-সিংহসহ পছন্দের কিছু পশু-প্রাণী দেখতে দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছি। তবে এখানে এসে স্বাভাবিক সময়ের মতো বাঘ, সিংহসহ বেশিরভাগ পশু-প্রাণীর দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ছে না। মানুষের মতো গরমে হাঁসফাঁস প্রাণীরাও।’ বড় ছেলে মো. ইমরুল বলেন, ‘এসেছিলাম বাঘ-সিংহ মামার হুঙ্কার দেখতে, তাদের ছুটোছুটি দেখতে। ইচ্ছা ছিল খাঁচার সামনে বাঘ, কিংবা সিংহের সাথে একটি ছবি তোলার। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তাদের দেখা পায়নি। কারণ তাদের বেশিরভাগ সময় কাটছে পানির চৌবাচ্চায়। গরমে আমাদের মতো ভালো নেই তারাও।’