ঝোড়ো বাতাসে বিশাল কড়ই গাছের বাসা থেকে ঝুঁটি শালিক ও কাঠঠোকরা পাখির চারটি ছানা মাটিতে পড়ে আহত হয়। কলেজ যাওয়ার পথে ছানাগুলো ছটফট করতে দেখেন শিক্ষার্থী মোছা. জামিলা। তিনি দ্রুত বিষয়টি শরীফ খন্দকারকে জানান। এই স্বেচ্ছাসেবী ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারটি ছানা ‘পাখি ক্লিনিক’-এ ভরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানেই ছানাগুলোর চিকিৎসা চলছে।

এ রকম বিপদাপন্ন পাখির সেবায় নিয়োজিত মধ্যবয়সী শরীফ খন্দকার। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর সদরের প্রফেসরপাড়ায়। দীর্ঘ কয়েক বছর বিদেশে ছিলেন শরীফ। দেশে ফিরে মানবিক কাজে নিয়োজিত হন। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তাড়াশ ভিলেজ ভিশন বাংলাদেশ’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তিনি এর পরিচালক। 

শরীফ খন্দকারের সঙ্গে প্রায় সময় একটি ছোট খাঁচা থাকে, যাতে লেখা ‘পাখি ক্লিনিক’। কোথাও কোনো পাখি বিপদে পড়েছে খবর পেলেই খাঁচাটি নিয়ে দ্রুত সেখানে হাজির হন তিনি। পাখির সেবা ছাড়াও শরীফ তাড়াশ ভিলেজ ভিশনের মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সড়কের পাশে বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছায় রক্তদানের মতো কাজগুলো করেন। এই সংগঠনের সঙ্গে বেশ কয়েক তরুণ-তরুণী যুক্ত।

তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়নের ওয়াশিন গ্রামের জামিলা বলেন, ‘আমি তাড়াশ ডিগ্রি কলেজে পড়ি। গত সোমবার রাতে আমাদের এলাকায় ঝোড়ো বাতাস বইছিল। সে সময় হয়তো ওয়াশিন-সেরাজপুর গ্রামীণ সড়কের ওয়াশিন মাদ্রাসাসংলগ্ন কড়ই গাছ থেকে পাখির ছানাগুলো পড়ে গুরুতর আহত হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কলেজ যাওয়ার সময় দেখি, চারটি ছানা মাটিতে ছটফট করছে। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল করে শরীফ খন্দকারকে বিষয়টি জানাই। তারপর তিনি এসে চারটি ছানা উদ্ধার করে নিয়ে যান।’

শরীফ খন্দকার জানান, সকাল ১০টার দিকে উদ্ধার করা চারটি ছানা উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে নেন তিনি। সেখানে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম যত্নসহকারে ছানাগুলোর চিকিৎসা দেন। আশা করা হচ্ছে, এক সপ্তাহ ভালো সেবা পেলে ছানাগুলো সুস্থ হয়ে উঠবে। তখন তাদের অবমুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, ‘গত আট বছরে বিপদাপন্ন বক, হড়িয়াল, শামুক খৈল, প্যাঁচাসহ প্রায় ৪০টি পাখির সেবার ব্যবস্থা করেছি। সুস্থ হওয়ার পর পাখিগুলো অবমুক্ত করা হয়। পশুপাখির সেবা করতে আমার ভালো লাগে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানবিক কাজ করেন। কিন্তু পশুপাখির খোঁজ নেওয়ার লোক কমই আছে। শরীফ খন্দকার তাদের একজন। তাঁর এই কাজ প্রশংসনীয়। মঙ্গলবার আনা চারটি পাখির ছানা চিকিৎসার পর শঙ্কামুক্ত। তাদের ভালো সেবা দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, অল্প সময়েই ছানাগুলো সেরে উঠবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় এবার ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা, বেড়েছে ২২টি মন্ডপ

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার মন্ডপগুলোতে চলছে নানা প্রস্ততি। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় বেড়েছে ২২টি পূজা মন্ডপ। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। জেলায় ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আবার কোথাও শুরু হয়েছে রঙের কাজ। আপন মনে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। এখন শেষ সময়ের পূজার প্রস্ততি নিচ্ছেন আয়োজকেরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমা শিল্পীরা ৫টি থেকে ১০টি পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করেছেন।

প্রতিমা শিল্পী কুমারেশ দাস ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল জানান, শেষ সময়ে প্রতিমা শিল্পীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে চাহিদাও বেশি।

এদিকে সকলের সহযোগিতায় অনাড়ম্বরভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে চান আয়োজকরা।

হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দিরের উপদেষ্টা বিপ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আশা করছি প্রতিবছরের মতো এবছরও উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসনের সহযোগিতা ও আশ্বাসে আমরা আমাদের পূজার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।”

মিলপাড়া সাবর্জনীন পূজা মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী বাগচী বলেন, “প্রত্যেক ধর্মকে সন্মান জানানো প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার সকলেই আমাদের পাশে থাকেন। আশাকরি এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।”

কুষ্টিয়া মহাশ্মশান মন্দিরের পুরোহিত পলাশ চক্রবর্ত্তী বলেন, “আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী এবং ২ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দশভূজার আগমন হবে হাতিতে চড়ে আর কৈলাশে ফিরবেন দোলায়।”

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় ২৫০ মন্দিরে শারদীয়া দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮১টি, খোকসা উপজেলায় ৫৯টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫৯টি, মিরপুর উপজেলায় ২৮টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ১১টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ১২টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ বছর গত বছরের তুলনায় ২২টি মন্ডপে পূজা বেড়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ২২টি পূজা বেশি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসনের সাথে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।”

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিটা পূজা মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পূজা মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে।”

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, যার যার ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে ও উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা তাদের অধিকার। কোন প্রোপাগান্ডা ও গুজবে কান দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। মব সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ