মৌসুমী মৌ। নন্দিত উপস্থাপক ও অভিনয়শিল্পী। মাছরাঙা টেলিভিশনে আজ রাতে প্রচার হবে তাঁর উপস্থাপনার রান্নাবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সেরা রাঁধুনী’। এ আয়োজন, বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ
প্রতিযোগিতার বিষয় বাদ দিলে ‘সেরা রাঁধুনী’কে অন্যান্য রিয়েলিটি শো থেকে কীভাবে আলাদা বলা যায়?
এই প্রতিযোগিতায় শুধু নানা রান্নার পারদর্শিতা যাচাই করা হয় না। রান্না পরিবেশনা, নিজেকে উপস্থাপন, বাচনভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব, বিক্রয় দক্ষতা, নেতৃত্বগুণ, খাবারের ব্যবসা চালানোর ক্ষমতা, বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে তাৎক্ষণিক বুদ্ধি ও দক্ষতা বিচার করা হয়। এসবই ‘সেরা রাঁধুনী’কে অন্যান্য রিয়েলিটি শো থেকে আলাদা করে তুলেছে। আমার জন্য ভালো লাগার বিষয় ছিল, পুরো আয়োজন এককভাবে উপস্থাপনা করা। বেশির ভাগ রিয়েলিটি শোতে দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন রাউন্ডে আলাদা উপস্থাপক থাকেন। কিন্তু ‘সেরা রাঁধুনী’র ৩৭ পর্বই আমাকে দিয়ে উপস্থাপনা করানো হয়েছে।
উপস্থাপনার সুবাদে ছোটপর্দার প্রতিদিনের মুখ হয়ে উঠেছেন। তারকালাপ থেকে শুরু করে কখনও খেলা, কখনও রান্নাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। এত সব বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠলেন কীভাবে?
হা হা [হাসি]; না, আমি মোটেও সব বিষয়ে পারদর্শী নই। যখন যে অনুষ্ঠান করছি, তার বিষয়ে আগে থেকেই পড়াশোনা করে নিচ্ছি। ধরুন, অনুষ্ঠানের বিষয় ক্রিকেট, তা হলো আমাকে কী করতে হবে, সে বিষয়ের ইতিহাস থেকে ঘটনাবহুল যত অধ্যায় আছে, তা যতটা পারা যায়, জেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এরপরও অনেক কিছু থাকবে, যার সম্পর্কে খেলোয়াড় ও ক্রিকেটবোদ্ধারাই ভালো বলতে পারবেন। তাই সেসব মানুষের সঙ্গেও আমাকে কথা বলে বিষয়টি স্পষ্ট করে নিতে হবে এবং আমি সেটাই করার চেষ্টা করি। আমি ভাগ্যবান এ কারণে যে, বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা নিতে এখন পর্যন্ত যত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাদের সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে উপস্থাপক হিসেবে পথচলাটা মসৃণ হয়ে উঠেছে।
একের পর এক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে যাচ্ছেন। একঘেয়েমি পেয়ে বসে না?
যখন কোনো কিছু অপার আনন্দ দেয়, তখনও একঘেয়েমি পেয়ে বসার কোনো সুযোগই নেই। কাজ একই– উপস্থাপনা। তারপরও এ কাজের মধ্য থেকেই বিষয়-বৈচিত্র্য খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছি সব সময়। সেটি করতে গিয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এই যেমন ‘আজকের অনন্যা’ অনুষ্ঠানের কথাই বলি। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। তিনি দেশের বাইরে থাকায় প্রযোজক আমাকে উপস্থাপনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। মজার বিষয় হলো, ২০১৪ সালে আমি যখন স্টুডেন্ট, তখন এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। ১১ বছর পর সেই একই অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতে যাচ্ছি। বিষয়টা তানিয়া আপুকে [তানিয়া আহমেদ] বলতেই তিনি বলেছেন, ‘অন্য কারও বদলে অনুষ্ঠানটি যে তুই উপস্থাপনা করছিস, শুনে সত্যি খুশি হয়েছি।’
উপস্থাপক হওয়ার স্বপ্ন কি বহুদিন থেকে লালন করে আসছিলেন?
স্বপ্ন তো অনেক দূরের বিষয়। উপস্থাপক যে হব– এটাই তো কোনো দিন কল্পনা করিনি। অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা ছিল; ছোটপর্দায় একটা সময় বেশ কিছু কাজও করেছি, তারপরও সময়ের পাকচক্রে কীভাবে যেন উপস্থাপক হয়ে গেছি। উপস্থাপনা করতে গিয়ে এর প্রতি ভালোবাসাও তৈরি হয়ে গেছে। পেশা হিসেবে বেছে নিতেও দ্বিধা-সংকোচ কাজ করেনি।
অভিনয়ে কি তাহলে আপনাকে আর দেখা যাবে না?
অভিনয় করা হবে কি হবে না, তা সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। যদি প্রত্যাশামাফিক কাজের সুযোগ হয়, তাহলে টেলিছবি ‘অগ্নিফসল’, নাটক ‘মন বলেছে যাব যাব’, ‘শুভকামনা’, ‘স্যারের মেয়ে’, ওয়েব সিনেমা ‘ত্রিভুজ’ ও সিরিজ ‘বলি’-তে যেমন দেখা গেছে, সেভাবে হয়তো আগামীতে অভিনেত্রী হিসেবে দেখা মিলতে পারে।
সম্ভাবনার কথা যেহেতু বলছেন, তাহলে বড়পর্দায়ও অভিনয়ে দেখা যাবে আশা করা যায়?
ব্যাটে-বলে মিলে গেলে অনেক কিছুই হতে পারে। তবে অভিনয়ের বিষয়ে কোনো কিছুই নিশ্চিত না। এ কথা সত্যি যে, একটি সিনেমার জন্য কয়েক দিন শুটিং করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এ পর্যায়ে সেই কাজ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, সে সময় আমার মনে হয়েছে, ওই সিনোমাটি আমার জন্য নয়। অভিনয়ে আমি সেই নির্মাতাদের প্রাধান্য দেব, যারা সত্যিকার অর্থে শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে চান।
অনেক দিন ধরে মূকাভিনয় করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে?
ইনস্টিটিউট অব মাইম অ্যান্ড মুভমেন্টের পক্ষ থেকে অনেক কিছুই করার ইচ্ছা আছে। কারণ আমি মনে করি, মূকাভিনয় একটি বড় শক্তি, যার মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি মানবিক বোধকে নাড়া দেওয়া সম্ভব। মূকাভিনয়ের আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তারপরও কিছু মানুষ এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এটাই আশার কথা। আমিও ঈদের পর মূকাভিনয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছি। সেখানে মাশরুর হুসা স্যারের সঙ্গে পারফর্ম করার কথা আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ক ভ নয় অন ষ ঠ ন ম ক ভ নয় র জন য ভ নয় র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি