খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থা কাটেনি। শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি চলমান থাকায় এ অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। 

এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম চালু, নতুন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন ও আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দফা দাবি তুলে ধরেন।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ছিল শিক্ষকদের কর্মবিরতির অষ্টম দিন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ক্লাস বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ৫ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভা শেষে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানানো হয়। শিক্ষকদের দেওয়া সেই সময়সীমা বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্বেগের কথা জানান। তারা জানান, সাবেক উপাচার্যের পতন শেষে নতুন উপাচার্য আসার পরেও সেই পুরোনো প্রহসনের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাদের শোকজের চিঠি পাঠানো হয়েছে। দফায় দফায় তারা স্থানীয়দের হামলার হুমকিও পাচ্ছেন। ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তারা আতঙ্কিত। দ্রুত এ অবস্থার অবসান চান তারা।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের কারণ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা জানান, তদন্ত কমিটি শুধু ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হামলার বিচারের জন্য গঠন করা হয়েছিল; কিন্তু পরে সেই কমিটি ১৯ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রশ্নবিদ্ধ শাস্তি আরোপ করেছে। গত ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির সদস্যদের পক্ষপাতিত্ব, অনিয়ম এবং সাবেক উপাচার্যের প্রভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। ২৩ এপ্রিল সেই পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে বাতিল হওয়ার পরও ১২ মে বর্তমান প্রশাসন সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে শোকজ করে, যা আইনানুগভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত ৩৭ জনের তালিকা শিক্ষকদের কাছে প্রকাশিত না হলেও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে পৌঁছায়, যা তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সাবেক উপাচার্যের বিদায়ের পর ৩৭ জনের শাস্তিপ্রাপ্ত তালিকা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বহিরাগতদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে আত্মরক্ষার আন্দোলনকে শোকজ লেটারে অপরাধ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সাবেক উপাচার্যের পক্ষের শিক্ষকদের সঙ্গে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। একই ব্যক্তি তদন্ত কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটিতে দায়িত্বে আছেন, যা বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক প্রহসনমূলক শাস্তি আরোপের জন্য যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তা বাতিল করে নতুন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে ১৮ ফেব্রুয়ারি হামলার এবং শিক্ষকদের ওপর ঘটা সব শারীরিক নিগ্রহের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। নতুন তদন্ত কমিটি তাদের ক্লাস-পরীক্ষার সঙ্গে সমান্তরালে কাজ করবে। তারা আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের মধ্যে ক্লাসে ফিরতে চান এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তোলেন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কুয়েট প্রশাসনকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়েছে। এরপর শুক্র ও শনিবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রোববার শিক্ষক সমিতির সভায় সাধারণ শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হজরত আলী বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছি। সবাই সহযোগিতা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত ক্লাস খোলার ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আমার কাছে নেই।”

তিনি আরও বলেন, “যেহেতু বিশাল একটা ঘটনা এবং নানা জটিলতা তৈরি হয়ে আছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-সবার সঙ্গেই মিটিং করেছি। আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সবাই নিজ নিজ জায়গায় তাদের দাবিতে অনড়, এ জন্য সময় একটু বেশি লাগছে।”

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেয় সরকার। এরপর ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ক উপ চ র য র শ ক ষকদ র ক ন উপ চ র য প রক শ ৩৭ জন র ওপর অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়

আগের দিন রোহিত শর্মার রেকর্ড ভেঙেছিলেন বাবর আজম। লাহোরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১১ রানের ইনিংস খেলেই ভারতের সাবেক অধিনায়ককে টপকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন বাবর। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজ তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে কেড়েছেন আরেক ভারতীয় কিংবদন্তি বিরাট কোহলির রেকর্ড। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাবরের এটি ৪০তম ৫০ ছোঁয়া ইনিংস। ৩৯টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে এত দিন বাবরের সঙ্গে  রেকর্ডটির যৌথ মালিক ছিলেন কোহলি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংস পর ফিফটি পাওয়া বাবরের ইনিংসে ভর করেই লাহোরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিটা ৪ উইকেট জিতেছে পাকিস্তান। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজটা পাকিস্তান জিতল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচ হারার পর ঘুরে দাঁড়িয়েই সিরিজ জিতল পাকিস্তান।

টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো ২০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে করে ১৩৯ রান। রানটা ৬ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে পাকিস্তান।

রান তাড়ায় ইনিংসের ১১তম বলে ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাবর ব্যাটিংয়ে নামেন এরপরই। দ্বিতীয় উইকেটে সাহিবজাদা ফারহানকে নিয়ে ৩৬ রান জুটি গড়া বাবর তৃতীয় উইকেটে সালমান আগাকে নিয়ে ৫২ বলে  যোগ করেন আরও ৭৬ রান। ২৬ বলে ৩৩ রান করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান যখন ফেরেন ২৭ বলে ২০ রান দরকার পাকিস্তানের।

৫ রান যোগ হওয়ার পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন বাবর ৪৭ বলে ৯ চারে ৬৮ রান করা বাবর ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এরপর ১৫ রানের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আরও ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের অপেক্ষা একটু লম্বা করেছে পাকিস্তান।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে ৩৬ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন ওপেনার রিজা হেনড্রিকস। এ ছাড়া অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরা ১৪ বলে ২৯ ও অলরাউন্ডার করবিন বশ ২৩ বলে করেন ৩০ রান। পাকিস্তানি পেসার শাহিন আফ্রিদি ২৬ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

দুই দল এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ মঙ্গলবার ফয়সালাবাদে।

সংক্ষিপ্ত স্কোরদক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৩৯/৯ (হেনড্রিকস ৩৪, বশ ৩০*, ফেরেইরা ২৯, ব্রেভিস ২১; আফ্রিদি ৩/২৬, তারিক ২/২৬, ফাহিম ২/২৮)।
পাকিস্তান: ১৯ ওভারে ১৪০/৬ (বাবর ৬৮, সালমান ৩৩, ফারহান ১৯; বশ ২/২৪, উইলিয়ামস ২/২৬)।
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩-ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
  • চট্টগ্রামে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা
  • ‘দূরে থেকেও আমরা কাছে, এটাই বাস্তব’
  • বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়