Prothomalo:
2025-05-16@17:23:00 GMT

বৈদ্যুতিক বাতির বিবর্তন

Published: 16th, May 2025 GMT

ইতিহাসের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার বৈদ্যুতিক বাতি। অন্ধকার ভেদ করে বিদ্যুতের মাধ্যমে সৃষ্ট কৃত্রিম আলো শুধু রাতের জীবনকেই আলোকিত করেনি বরং সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

উনিশ শতকের শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা বিদ্যুতের মাধ্যমে আলো তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হামফ্রে ডেভি ১৮০২ সালে প্রথম বৈদ্যুতিক আর্ক বাতি প্রদর্শন করেন, যেখানে দুটি কার্বন রডের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে আলো সৃষ্টি করা হয়েছিল। ব্যাটারির মাধ্যমে কাজ করত এই বাতি। যদিও এই বাতি অত্যন্ত উজ্জ্বল, ক্ষণস্থায়ী ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জোসেফ সোয়ান বিভিন্ন ফিলামেন্ট ব্যবহার করে দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতি তৈরির চেষ্টা করেন। সোয়ান ১৮৬০ সালে কার্বন ফিলামেন্টের একটি বাতি তৈরি করেন। ১৮৭৮ সালে সোয়ান তুলার সুতার ফিলামেন্ট দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বাল্ব তৈরি করেন।

১৮৭৪ সালের জুলাই মাসে কানাডায় হেনরি উডওয়ার্ড ও ম্যাথিউ ইভানস নাইট্রোজেনে পূর্ণ কার্বন দণ্ডের মাধ্যমে বিশেষ বাল্ব তৈরি করেন। তাঁদের উদ্যোগের বাণিজ্যিকীকরণ করা যায়নি। ১৮৭৯ সালে তাঁরা এই আবিষ্কার টমাস আলভা এডিসনের কাছে বিক্রি করে দেন।

বাণিজ্যিকভাবে সফল ও দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতির কৃতিত্ব টমাস আলভা এডিসনকে দেওয়া হয়। ১৮৭৮ সালে এডিসন তাঁর বাতি তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৮৭৮ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি পেটেন্ট অফিসে তাঁর বৈদ্যুতিক বাতির ধারণাপত্রের জন্য আবেদন করেন। মূল নকশা নিয়ে কাজ করতে করতে তিনি বাতি উন্নয়নের চেষ্টা করেন।

১৮৭৯ সালের ৪ নভেম্বর এডিসন একটি কার্যকর বাতি যা ইনক্যানডেসেন্ট লাইট বাল্বের নকশা জমা দেন। এই বাতিতে একটি কার্বন ফিলামেন্ট একটি কাচের আবরণের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে আলো বিকিরণ করে। এডিসনের প্রধান উদ্ভাবন ছিল উচ্চরোধসম্পন্ন একটি ফিলামেন্ট তৈরি করা, যা দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলতে পারে। একটি কার্যকর ভ্যাকুয়ামে রাখার কারণে ফিলামেন্ট র্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এই বাতির মাধ্যমে। একই বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মেনলো পার্কে তাঁর পরীক্ষাগারে প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে একটানা আলো জ্বালিয়ে এই আবিষ্কারের কার্যকারিতা প্রমাণ করেন।

এডিসনের এই আবিষ্কার শুধু একটি বাতি তৈরি করার মধ্যে আটকে ছিল না। তিনি একটি সম্পূর্ণ আলোকব্যবস্থা তৈরির সূচনা করেছিলেন। তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের জন্য একটি বাণিজ্যিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন, যার ফলে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক আলো পৌঁছানো সম্ভব হয়।

১৮৮০ সালে এডিসনের কোম্পানি এডিসন ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানি লাইট বাল্ব বাজারে বিক্রি করা শুরু করে। ১৮৮২ সালে নিউইয়র্ক সিটির পার্ল স্ট্রিট স্টেশনে প্রথম বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয় এবং গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এর মাধ্যমে গ্যাসবাতির যুগের অবসান ঘটে এবং বৈদ্যুতিক আলো আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়।

যদিও এডিসনের তৈরি বাতির কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। বিংশ শতাব্দীতে ফ্লুরোসেন্ট বাতি, হ্যালোজেন বাতি ও পরবর্তীকালে এলইডি বাতির আবিষ্কার বৈদ্যুতিক আলোর প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এলইডি বাতি বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিসাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী আলোর উৎস হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে।

১৯০৬ সালে জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি প্রথম বাল্বে ব্যবহারের জন্য টাংস্টেন ফিলামেন্ট তৈরির পদ্ধতি পেটেন্ট করে। এডিসন নিজেই জানতেন যে টাংস্টেন বাল্বে ফিলামেন্টের জন্য সেরা কাজ করে। যদিও সে সময় এত সূক্ষ্ম আকারে তার তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাওয়া যেত না।

১৯১০ সালে জেনারেল ইলেকট্রিকের উইলিয়াম ডেভিড কুলিজ দীর্ঘস্থায়ী টাংস্টেন ফিলামেন্ট তৈরির জন্য উৎপাদনপ্রক্রিয়া উন্নত করেন। ১৯২০ সালে প্রথম ফ্রস্টেড লাইট বাল্ব তৈরি করা হয়। সে সময় গাড়ির হেডল্যাম্প ও নিয়ন আলোর জন্য পাওয়ার বিম বাল্ব তৈরি করা হয়। ফ্রস্টেড লাইট বাল্বের ভেতর গ্লাসে অন্য কোনো পদার্থ যেমন অ্যামোনিয়াম বাইফ্লুরাইডের মতো পদার্থের প্রলেপ থাকে।

১৯৩০–এর দশকে ফটোগ্রাফির জন্য ছোট্ট এককালীন ফ্ল্যাশ বাল্ব ও ফ্লুরোসেন্ট ট্যানিং ল্যাম্প আবিষ্কৃত হয়। ১৯৪০ সালে প্রথম সফট লাইটের বাল্ব বাজারে আসে। ৫০–এর দশকে কোয়ার্টজ গ্লাস ও হ্যালোজেন বাল্ব তৈরি করা হয়। ৮০–এর দশকে কম ওয়াটের ধাতব হ্যালাইড তৈরি করা হয়। ৯০–এর দশকে দীর্ঘস্থায়ী বাল্ব ও কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব বাজারে আসে।

ভারতবর্ষে ১৮৭৯ সালের ২৪ জুলাই তখনকার ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় পি ডব্লিউ ফ্লিউরি অ্যান্ড কোং প্রথম লাইট বাল্ব প্রদর্শন করে। ১৮৮১ সালে গার্ডেন রিচ কটন মিলে বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন করা হয়। ঢাকায় তথা পূর্ববঙ্গে প্রথম বিদ্যুৎব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল বিশ শতকের শুরুতেই। ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহর অর্থায়নে ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম ঢাকার রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে।

সূত্র: বাল্বস ডটকম ও এনার্জি ডটগভ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইট ব ল ব র র জন য ব যবহ র প রথম ব এই ব ত ক র বন

এছাড়াও পড়ুন:

গল্প-আড্ডা-স্লোগানে ৪ দফায় অনঢ় জবি শিক্ষার্থীরা

চারদফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি অব্যহত রেখেছেন। বুধবারের (১৪ মে) চেয়ে তাদের আন্দোলনের ধরন ভিন্ন।

দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ক্লান্তিকর প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচিতে তাদের গল্প, আড্ডা, চা-নাস্তা আর স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাতে কাকরাইল মোড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আরো পড়ুন:

সাম্য হত্যার প্রতিবাদে জাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ঢাবির মুরুব্বিয়ানা বন্ধ করতে হবে: শরিফ ওসমান

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবির ব্যাপারে তারা আপসহীন। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫–২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট ছাড়াই অনুমোদন করতে হবে; জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করতে হবে; শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

জবি শিক্ষার্থী মো. সাইফ হাসান বলেন, “আমরা উপাচার্য মহোদয় ও উপদেষ্টাদের সংবাদ সম্মেলনের অপেক্ষায় বসে আছি। সময় কাটাতে গল্প করছি। কিন্তু এই অবস্থান কোনো দুর্বলতা নয়। দাবি আদায় না হলে যেকোনো মুহূর্তে আমরা আরো বড় আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সুজন মিয়া বলেন, “আমরা আন্দোলনকে বেগবান করতে বিভিন্ন স্লোগানে চত্বর মুখর রেখেছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক কদমও সরব না।”

শিক্ষার্থী রিমা আক্তার বলেন, “আমাদের এই আন্দোলন শুধু দাবি আদায়ের জন্য নয়, এটি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি, কিন্তু আমাদের উপেক্ষা করা হলে পরবর্তী কর্মসূচি হবে আরো জোরদার।”

শান্তিপূর্ণ এই অবস্থান কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একটি অংশও। তবে এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে সংকট সমাধানের পথ খুলে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের সফর মধ্যপ্রাচ্যকে কতটা বদলে দেবে
  • ক্ষমা চাইলেন শামীম হাসান-প্রিয়াঙ্কা
  • বজ্রপাতে মৃত্যু, দাফনের প্রস্তুতির সময় মরদেহ নড়ে ওঠায় এলাকায় চাঞ্চল্য
  • আত্মজীবনীমূলক রচনা: সরল ভাবনা
  • গল্প-আড্ডা-স্লোগানে ৪ দফায় অনঢ় জবি শিক্ষার্থীরা
  • এমিলি ডিকিনসন : নিঃসঙ্গতা মানেই বিচ্ছিন্নতা নয়
  • পুতিনের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ: ইউক্রেন
  • রাজশাহী কলেজে হোস্টেল ভাড়া কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ
  • ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের বিক্ষোভ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা–উপাচার্য–প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি