Prothomalo:
2025-07-01@06:05:58 GMT

বৈদ্যুতিক বাতির বিবর্তন

Published: 16th, May 2025 GMT

ইতিহাসের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার বৈদ্যুতিক বাতি। অন্ধকার ভেদ করে বিদ্যুতের মাধ্যমে সৃষ্ট কৃত্রিম আলো শুধু রাতের জীবনকেই আলোকিত করেনি বরং সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

উনিশ শতকের শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা বিদ্যুতের মাধ্যমে আলো তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হামফ্রে ডেভি ১৮০২ সালে প্রথম বৈদ্যুতিক আর্ক বাতি প্রদর্শন করেন, যেখানে দুটি কার্বন রডের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে আলো সৃষ্টি করা হয়েছিল। ব্যাটারির মাধ্যমে কাজ করত এই বাতি। যদিও এই বাতি অত্যন্ত উজ্জ্বল, ক্ষণস্থায়ী ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জোসেফ সোয়ান বিভিন্ন ফিলামেন্ট ব্যবহার করে দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতি তৈরির চেষ্টা করেন। সোয়ান ১৮৬০ সালে কার্বন ফিলামেন্টের একটি বাতি তৈরি করেন। ১৮৭৮ সালে সোয়ান তুলার সুতার ফিলামেন্ট দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বাল্ব তৈরি করেন।

১৮৭৪ সালের জুলাই মাসে কানাডায় হেনরি উডওয়ার্ড ও ম্যাথিউ ইভানস নাইট্রোজেনে পূর্ণ কার্বন দণ্ডের মাধ্যমে বিশেষ বাল্ব তৈরি করেন। তাঁদের উদ্যোগের বাণিজ্যিকীকরণ করা যায়নি। ১৮৭৯ সালে তাঁরা এই আবিষ্কার টমাস আলভা এডিসনের কাছে বিক্রি করে দেন।

বাণিজ্যিকভাবে সফল ও দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতির কৃতিত্ব টমাস আলভা এডিসনকে দেওয়া হয়। ১৮৭৮ সালে এডিসন তাঁর বাতি তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৮৭৮ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি পেটেন্ট অফিসে তাঁর বৈদ্যুতিক বাতির ধারণাপত্রের জন্য আবেদন করেন। মূল নকশা নিয়ে কাজ করতে করতে তিনি বাতি উন্নয়নের চেষ্টা করেন।

১৮৭৯ সালের ৪ নভেম্বর এডিসন একটি কার্যকর বাতি যা ইনক্যানডেসেন্ট লাইট বাল্বের নকশা জমা দেন। এই বাতিতে একটি কার্বন ফিলামেন্ট একটি কাচের আবরণের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে আলো বিকিরণ করে। এডিসনের প্রধান উদ্ভাবন ছিল উচ্চরোধসম্পন্ন একটি ফিলামেন্ট তৈরি করা, যা দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলতে পারে। একটি কার্যকর ভ্যাকুয়ামে রাখার কারণে ফিলামেন্ট র্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এই বাতির মাধ্যমে। একই বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মেনলো পার্কে তাঁর পরীক্ষাগারে প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে একটানা আলো জ্বালিয়ে এই আবিষ্কারের কার্যকারিতা প্রমাণ করেন।

এডিসনের এই আবিষ্কার শুধু একটি বাতি তৈরি করার মধ্যে আটকে ছিল না। তিনি একটি সম্পূর্ণ আলোকব্যবস্থা তৈরির সূচনা করেছিলেন। তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের জন্য একটি বাণিজ্যিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন, যার ফলে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক আলো পৌঁছানো সম্ভব হয়।

১৮৮০ সালে এডিসনের কোম্পানি এডিসন ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানি লাইট বাল্ব বাজারে বিক্রি করা শুরু করে। ১৮৮২ সালে নিউইয়র্ক সিটির পার্ল স্ট্রিট স্টেশনে প্রথম বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয় এবং গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এর মাধ্যমে গ্যাসবাতির যুগের অবসান ঘটে এবং বৈদ্যুতিক আলো আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়।

যদিও এডিসনের তৈরি বাতির কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। বিংশ শতাব্দীতে ফ্লুরোসেন্ট বাতি, হ্যালোজেন বাতি ও পরবর্তীকালে এলইডি বাতির আবিষ্কার বৈদ্যুতিক আলোর প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এলইডি বাতি বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিসাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী আলোর উৎস হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে।

১৯০৬ সালে জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি প্রথম বাল্বে ব্যবহারের জন্য টাংস্টেন ফিলামেন্ট তৈরির পদ্ধতি পেটেন্ট করে। এডিসন নিজেই জানতেন যে টাংস্টেন বাল্বে ফিলামেন্টের জন্য সেরা কাজ করে। যদিও সে সময় এত সূক্ষ্ম আকারে তার তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাওয়া যেত না।

১৯১০ সালে জেনারেল ইলেকট্রিকের উইলিয়াম ডেভিড কুলিজ দীর্ঘস্থায়ী টাংস্টেন ফিলামেন্ট তৈরির জন্য উৎপাদনপ্রক্রিয়া উন্নত করেন। ১৯২০ সালে প্রথম ফ্রস্টেড লাইট বাল্ব তৈরি করা হয়। সে সময় গাড়ির হেডল্যাম্প ও নিয়ন আলোর জন্য পাওয়ার বিম বাল্ব তৈরি করা হয়। ফ্রস্টেড লাইট বাল্বের ভেতর গ্লাসে অন্য কোনো পদার্থ যেমন অ্যামোনিয়াম বাইফ্লুরাইডের মতো পদার্থের প্রলেপ থাকে।

১৯৩০–এর দশকে ফটোগ্রাফির জন্য ছোট্ট এককালীন ফ্ল্যাশ বাল্ব ও ফ্লুরোসেন্ট ট্যানিং ল্যাম্প আবিষ্কৃত হয়। ১৯৪০ সালে প্রথম সফট লাইটের বাল্ব বাজারে আসে। ৫০–এর দশকে কোয়ার্টজ গ্লাস ও হ্যালোজেন বাল্ব তৈরি করা হয়। ৮০–এর দশকে কম ওয়াটের ধাতব হ্যালাইড তৈরি করা হয়। ৯০–এর দশকে দীর্ঘস্থায়ী বাল্ব ও কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব বাজারে আসে।

ভারতবর্ষে ১৮৭৯ সালের ২৪ জুলাই তখনকার ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় পি ডব্লিউ ফ্লিউরি অ্যান্ড কোং প্রথম লাইট বাল্ব প্রদর্শন করে। ১৮৮১ সালে গার্ডেন রিচ কটন মিলে বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন করা হয়। ঢাকায় তথা পূর্ববঙ্গে প্রথম বিদ্যুৎব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল বিশ শতকের শুরুতেই। ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহর অর্থায়নে ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম ঢাকার রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে।

সূত্র: বাল্বস ডটকম ও এনার্জি ডটগভ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইট ব ল ব র র জন য ব যবহ র প রথম ব এই ব ত ক র বন

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুর রহমান

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ আসাদুর রহমান। ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে আসাদুর রহমানকে ডিএসই বোর্ড থেকে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সোমবার (৩০ জুন) ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদকে ধন্যবাদ জানাই, আমাকে এ পদে দায়িত্ব পালনে মনোনীত করার জন্য। আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটা সঠিকভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে চেষ্টা করব।”

জানা গেছে, দেশের শীর্ষ এই শেয়ারবাজারে নেতৃত্ব সংকট কাটিয়ে সাময়িক স্থিতিশীলতা আনতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে ডিএসই।

এর আগে, ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাত্তিক আহমেদ শাহ অস্থায়ীভাবে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ ২৯ জুন শেষ হওয়ায় পদটি পুনরায় শূন্য হয়ে যায়। পরবর্তীতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে আসাদুর রহমানকে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

তথ্য মতে, ডিএসইর পূর্ণকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি ২০২৪ সালের মে মাস থেকে শূন্য রয়েছে। তখনকার এমডি এ টি এম তারিকুজ্জামান পদত্যাগ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। তবে সেপ্টেম্বরেই সরকার তাকে কমিশনার পদ থেকে অপসারণ করে। এরপর থেকেই ডিএসইর শীর্ষ নেতৃত্বে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

চলমান নেতৃত্ব সংকট নিরসনে গত বছরের নভেম্বরে ডিএসই তিনটি শীর্ষ নির্বাহী পদ- ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা- পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কেবল কেএএম মাজেদুর রহমানই ডিএসইর এমডি হিসেবে তার পূর্ণ তিন বছর মেয়াদ শেষ করেছেন। তার পরবর্তী এমডিরা কেউই পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি, যার ফলে ডিএসইর নেতৃত্বে স্থায়িত্ব বিঘ্নিত হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছি আমরা?
  • ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুর রহমান
  • ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠলে কী খাবেন
  • শিয়া-সুন্নি বিভেদ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জবি উপাচার্যের
  • জাবিতে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত নিয়ে যা জানা গেল
  • পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়লেন এক সন্তানের জননী
  • আবু সাঈদ হত্যা মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • দ্বিগুণ পারিশ্রমিক চাইছেন শ্রীলীলা
  • সাগরে লঘুচাপ, চার বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
  • দুই মেরুতে শান্ত-আমিনুল, ভবিষ্যৎ কী?