হজের সময় চলাচলের পথে ঘুমাবেন না: হজযাত্রীদের প্রতি সৌদি সরকারের পরামর্শ
Published: 19th, May 2025 GMT
পবিত্র হজ পালনের জন্য সারা বিশ্ব থেকে লাখো হজযাত্রী সৌদি আরবে আসছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং হজযাত্রীদের চলাচল সহজ করতে দেশটির হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হজযাত্রীদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে হজের সময় সেগুলো মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পরামর্শ ও নির্দেশনা পবিত্র হজের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার সময় হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নির্ধারিত স্থানগুলোর প্রতি সম্মান দেখালে হজের ব্যস্ততম সময়ে ঝুঁকি কমবে এবং সহজে চলাচলের ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে সহায়তা করবে।’
এ জন্য মন্ত্রণালয় থেকে হজযাত্রীদের তাঁবু ও আবাসন হোটেলের মতো বিশ্রামের নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বিশ্রাম না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন প্রাঙ্গণে এবং লোকজনের চলাচলের পথের মতো ভিড়পূর্ণ জায়গায় শুয়ে পড়লে বিপজ্জনক জট তৈরি হয়। এতে হজযাত্রীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং সংকটময় পরিস্থিতিতে জরুরি পরিষেবা দলগুলোর তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা ব্যাহত হয় বলে উল্লেখ করেছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।কারণ, বিভিন্ন প্রাঙ্গণে ও লোকজনের চলাচলের পথের মতো ভিড় এলাকায় শুয়ে পড়লে বিপজ্জনক জট তৈরি হয়। এতে হজযাত্রীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং সংকটময় পরিস্থিতিতে জরুরি পরিষেবা দলগুলোর তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়া সক্ষমতা ব্যাহত হয় বলেও উল্লেখ করেছেন সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।
১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন)। সারা বিশ্ব থেকে লাখো মুসলিম পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে জড়ো হচ্ছেন।
এ বছর হজযাত্রীর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। এ বছর ২৫ লাখের বেশি মুসলিম পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হজযাত্রীদের স্বাগত জানাতে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। এ বছর হজের সময় প্রচণ্ড গরম থাকবে বলেও আভাস পাওয়া গেছে।
হজযাত্রীদের সহায়তায় সৌদি আরব ছয়টি ভাষায় একটি ইলেকট্রনিক হজ গাইড চালু করেছে। গাইডটি আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, উর্দু, মালয়ালম ও তুর্কি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে।
মসজিদগুলোতে স্থাপিত ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি থেকে হজ গাইডে প্রবেশ করা যাবে। সৌদি আরবের জাতীয় বিমান সংস্থা ‘সৌদিয়া’র ফ্লাইটে যাত্রাকালেও এটি ব্যবহার করা যাবে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ উদ্যোগের লক্ষ্য, হজযাত্রীদের হজের নিয়মকানুন ও আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে সচেতন করা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হজয ত র দ র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যালারি কায়ার আলোকপথ
আলো ও ছায়ার বুননে শিল্পের যে রূপরেখা আঁকা হয়, তার গভীরতায় ডুবে থাকা এক বিশেষ উপলক্ষ হলো ‘গ্যালারি কায়ার ২১তম বার্ষিকী’। ঢাকার অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি তাদের যাত্রার দুই দশকেরও বেশি সময় উদযাপন করছে এক অনন্য প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। যেখানে স্থান পেয়েছে ৩৫ জন আধুনিক ও সমসাময়িক শিল্পীর অসামান্য কাজ। ১৯৫২ থেকে ২০২৫– সাত দশকের শিল্পচর্চার বিস্তীর্ণ আয়তন ও গহিন ভাবনা জগৎকে ধারণ করেছে এই প্রদর্শনী, যা চলছে গ্যালারির নিজস্ব প্রাঙ্গণে, ২৭ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত।
এই বিশেষ প্রদর্শনী যেন কায়ার দীর্ঘ শিল্পযাত্রার এক সজীব অনুরণন। একদিকে যেমন এখানে আছে বিখ্যাত শিল্পীদের মাস্টারপিস, তেমনি রয়েছে তরুণ প্রজন্মের উদ্দীপনামূলক কাজও। একটি প্রদর্শনী শুধু চোখ নয়, মনকে ছুঁয়ে যায়, যদি সেখানে গল্প থাকে– রঙে, রেখায়, রূপে ও অভিব্যক্তিতে। গ্যালারি কায়ার এই আয়োজন সেই গল্পেরই নাম।
প্রদর্শনীর গ্যালারিতে হাঁটতে হাঁটতে দেয়ালে ঝোলানো কাজগুলো দেখে যেন মনে হয় প্রতিটি শিল্পকর্ম সময়ের প্রতিধ্বনি।
চোখে পড়ে মোহাম্মদ ইকবালের ‘আননোন ফেস’ (২০১৮)। ২২x৩০ ইঞ্চির এই মিশ্র মাধ্যমের চিত্রকর্মটি যেন এক অপার প্রশ্নচিহ্ন। এক অজানা মুখাবয়ব, যার গভীর চাহনিতে ধরা পড়ে দর্শকের নিজস্ব আত্মদর্শনের ছায়া। টেক্সচার ও রঙের স্তরবিন্যাসে মুখটি হয়ে ওঠে আত্মানুসন্ধানের এক প্রতীক। আহমেদ শামসুদ্দোহার ‘সুন্দরবন’ (২০২৪) ছবিটি ক্যাটালগের পেছনের প্রচ্ছদে। সবুজ, ছায়া ও আলোয় নির্মিত ৩০x৩০ ইঞ্চির এই অ্যাক্রেলিক চিত্র প্রকৃতির সত্তা তুলে ধরে। সুন্দরবনের প্রাণবন্ততা যেন ক্যানভাস ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ে দর্শকের মনে।
অন্যদিকে আবুল বারক আলভীর ‘ফ্রম দ্য নেচার-১’ (২০২৫) ছবিটি বিমূর্ততার এক অপূর্ব ব্যঞ্জনা। ৩০x৪২ ইঞ্চির এই অ্যাক্রেলিক ক্যানভাসে জৈবিক রূপ ও প্রকৃতির শক্তি এক অনন্ত প্রবাহের মতো গলে পড়ে। শিল্পীর তুলির টানে সেখানে ধরা পড়ে প্রকৃতির মৌল গঠন ও আত্মা। স্মৃতি ও ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রদর্শনীতে রয়েছে একাধিক অনন্য কাজ। দেবদাস চক্রবর্তীর ‘লাভ’ (১৯৯২) নামে ক্ষুদ্র কালিচিত্রটি (৫x৮ ইঞ্চি) এক নিভৃত প্রেমের মুহূর্তকে জীবন্ত করে তোলে। এই ছবিতে ভালোবাসা শব্দহীন কিন্তু গভীর। ফরিদা জামানের ‘সুফিয়াস বার্ড’ (২০২৫) আকারে যেমন বিশাল (৩৫.৫x৩৫.৫ ইঞ্চি), তেমনি ভাবগত দিক থেকে আধ্যাত্মিক। উড়ন্ত পাখির রূপকতায় শিল্পী যেন জীবনের মুক্তি ও আত্মার পরিশুদ্ধির কথা বলেন, রং ও রূপের পরাবাস্তব ব্যবহারে।
শিল্পী হাশেম খানের ‘ক্রেন’ (২০২৪) ছবিতে দেখা যায় রাজসিক পাখির দৃশ্য, ৪২x৩০ ইঞ্চির এই অ্যাক্রেলিক ক্যানভাস যেন প্রকৃতির নরম কোমলতা ও মহিমার প্রতিচ্ছবি। প্রাণবন্ত রেখায় ধরা পড়ে জীবনের ছন্দ।
প্রদর্শনীর পুরোনো চিত্রকর্মের মধ্যে মুর্তজা বশীরের ‘ব্লাডি ২১স্ট’ (১৯৫২)– এক জ্বলন্ত সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনার দলিল। ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাস এখানে ফিরে আসে কালো রেখার উত্তাল শক্তিতে।
কাইয়ুম চৌধুরীর ‘ফ্রিডম ফাইটার’ (১৯৯১) ছবিটি ২২x১৬ ইঞ্চির এক অসামান্য পেন ও ইঙ্কের কাজ। স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নেওয়া এক মুখ বা মুহূর্ত যেন এখানে জীবন্ত হয়ে ওঠে; দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ এখানে আঁকা হয় নিঃশব্দ শ্রদ্ধায়। সমসাময়িক ধারায় রঞ্জিত দাসের ‘ফিলিং’ (২০২৪) ছবিটি বিমূর্ত শিল্পের এক সাহসী অভিযাত্রা। ৩০x৩০ ইঞ্চির ক্যানভাসে ধরা পড়ে অন্তর্গত আবেগের রং ও টেক্সচারের বহমানতা– যা দর্শকের মনে এক অন্তর্নিহিত অনুরণন সৃষ্টি করে।
এই ২১ বছরের যাত্রায় গ্যালারি কায়া শুধু প্রদর্শনীর আয়োজনই করেনি, বরং শিল্পকে ঘিরে গড়ে তুলেছে এক ধরনের পরিশীলিত ও সহমর্মী পরিবেশ। শিল্পী রঞ্জিত দাস বলেন, ‘গ্যালারি কায়া নবীন শিল্পীদের যেমন জায়গা দিয়েছে, তেমনি প্রবীণ ও কিংবদন্তি শিল্পীদেরও প্রাপ্য মর্যাদায় স্থান দিয়েছে। এই ভারসাম্যই কায়াকে আলাদা করেছে অন্যদের থেকে।’
এ ছাড়াও প্রদর্শনীর সমন্বয়ক রাজেন জেন বলেন, শিল্পের ভাষা সময়ের চেয়ে বড়। সেই ভাষাকে ধারণ করে গ্যালারি কায়া ২১ বছর ধরে যে শিল্পভুবনের বিস্তার ঘটিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এই প্রদর্শনী শুধু একটি গ্যালারির বর্ষপূর্তিই নয়, এটি একান্তভাবেই দেশের শিল্পচর্চার এক অনন্য উদযাপন।
প্রদর্শনীতে যেসব বরেণ্য শিল্পীর চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুস শাকুর শাহ, আবুল বারক আলভী, হামিদুজ্জামান খান, হাশেম খান, কনকচাঁপা চাকমা, কাজী আব্দুল বাসেত, মুর্তজা বশীর, রঞ্জিত দাসসহ অনেকেই।
তাদের চিত্রকর্ম এসেছে বিভিন্ন মাধ্যমে– তেলরং, অ্যাক্রেলিক, জলরং, চারকোল, কালি ও কলম, মিশ্র মাধ্যম, কাঠছাপ এবং ক্যানভাস। প্রতিটি মাধ্যমেই উঠে এসেছে শিল্পীর নিজস্ব ভাষা ও চিন্তাজগতের প্রতিফলন।
এই আলোকময় পথচলায় গ্যালারি কায়া শুধু শিল্প প্রদর্শনের একটি স্থান হয়ে ওঠেনি; বরং হয়ে উঠেছে সময়ের সাক্ষী। উদ্যোক্তারা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন দর্শক, সংগ্রাহক, সমালোচক ও প্রয়াত শিল্পীদের, যাদের অবদান ছড়িয়ে আছে গ্যালারির প্রতিটি দেয়ালে। v