বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। অতীতে নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করা হয়েছে। কাজেই এখন জনগণ বুঝতে চায়, তারা ভোট দিতে পারবে কি না।

আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে এ কথা বলেন রুহিন হোসেন। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে আজ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে বর্ধিত আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বিকেল তিনটায় আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দুই মাস ধরে চলা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রথম ধাপ আজকে শেষ হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে। প্রথম পর্বের আলোচনা শিগগিরই জনসমক্ষে তুলে ধরবেন তাঁরা।

সংস্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরে অনেক রাজনৈতিক দল অনানুষ্ঠানিক মতামতও দিয়েছে। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সনদ তৈরির দিকে এগিয়ে যাবেন তাঁরা।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের অনেক প্রস্তাব বইয়ে থাকলেও প্রশ্নমালায় নেই উল্লেখ করে রুহিন হোসেন বলেন, জনগণ শুধু নির্বাচন চায় না। তারা বুঝতে চায়, কারসাজি করে আবারও জনদৃষ্টি ভোট থেকে অন্যদিকে সরানো হবে কি না। পুরোনো ভয়ের রাজত্ব কায়েম হবে কি না।

সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণ মতামত দিলে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যাবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জনমতের প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার ও অন্য জনগুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রস্তাবগুলো জনসমক্ষে আসছে না উল্লেখ করে রুহিন হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের অর্জিত বাংলাদেশে বৈষম্য দূর হবে—সেই লক্ষ্যে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, হাসান তারিক চৌধুরী, আবিদ হোসেন ও লুনা নূর।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় আছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে শর্ত যোগ করার প্রস্তাব জামায়াতের

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষেত্রে শর্ত যোগ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা শেষে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আজ নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যোগ করেছি। যদি কোনো ব্যক্তিগত অপরাধ, যেমন হত্যাকাণ্ড ঘটে এবং দোষী ব্যক্তিকে দণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে ভুক্তভোগী পরিবারের সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্রপতি বা কমিটি এককভাবে সেই সাজা মাফ করতে পারবেন না। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সম্মতি দিলে, তবেই ক্ষমা বিবেচনায় আসবে। এতে ইনসাফ (ন্যায়বিচার) নিশ্চিত হবে।’

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীর পরিবার বা ভুক্তভোগীর সম্মতি ছাড়া কাউকে ক্ষমা না করার নীতিতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে বলেও জানান জামায়াতের এই নায়েবে আমির।

অতীতে রাষ্ট্রপতির একক সিদ্ধান্তে চিহ্নিত অপরাধীদের ক্ষমা করার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, এটা ছিল ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। তিনি বলেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের আগে একটি সুপারিশ কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমার বিষয়ে পরামর্শ দেবে।

হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয় বলে জানান আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ২০ কোটি মানুষের দেশে সবাই ঢাকায় এসে বিচার পাওয়ার সুযোগ রাখে না। তাই বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন সময়ের দাবি। এর মাধ্যমে বিচারসেবা মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছাবে।

জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, বিচারপতি ও দক্ষ আইনজীবীর ঘাটতির কথা এলেও প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মেধাবী ব্যক্তিদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ সম্ভব।

আর সংবিধানে একটি একক সুপ্রিম কোর্ট রাখার বিষয়টি অপরিবর্তিত রেখে বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন স্পষ্ট ঐকমত্য তৈরি হয়েছে বলেও জানান আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচনায় বিএনপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার ও মো. আইয়ুব মিয়া এতে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিবিপ্লবী রাজনীতি ও গণমাধ্যম
  • রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে শর্ত যোগ করার প্রস্তাব জামায়াতের
  • ফৌজদারি অপরাধীকে ক্ষমা করার একক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকা উচিত নয়: এবি পার্টি
  • বিভাগীয় শহরেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
  • মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ২ বছর পিছিয়েছে: পেন্টা
  • এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন পেছাল
  • অমীমাংসিত সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি করতে আলী রীয়াজকে চিঠি আইনজীবীর
  • ভালো সাংবাদিকতা করলে ছাপা পত্রিকারও সম্ভাবনা আছে
  • মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামির আপিল শুনবেন হাইকোর্ট, অর্থদণ্ড স্থগ
  • মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আসামির আপিল শুনবেন হাইকোর্ট, অর্থদণ্ড স্থগিত