নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে: সিপিবি
Published: 19th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। অতীতে নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করা হয়েছে। কাজেই এখন জনগণ বুঝতে চায়, তারা ভোট দিতে পারবে কি না।
আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে এ কথা বলেন রুহিন হোসেন। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে আজ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে বর্ধিত আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বিকেল তিনটায় আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দুই মাস ধরে চলা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রথম ধাপ আজকে শেষ হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে। প্রথম পর্বের আলোচনা শিগগিরই জনসমক্ষে তুলে ধরবেন তাঁরা।
সংস্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরে অনেক রাজনৈতিক দল অনানুষ্ঠানিক মতামতও দিয়েছে। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সনদ তৈরির দিকে এগিয়ে যাবেন তাঁরা।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের অনেক প্রস্তাব বইয়ে থাকলেও প্রশ্নমালায় নেই উল্লেখ করে রুহিন হোসেন বলেন, জনগণ শুধু নির্বাচন চায় না। তারা বুঝতে চায়, কারসাজি করে আবারও জনদৃষ্টি ভোট থেকে অন্যদিকে সরানো হবে কি না। পুরোনো ভয়ের রাজত্ব কায়েম হবে কি না।
সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণ মতামত দিলে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যাবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জনমতের প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার ও অন্য জনগুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রস্তাবগুলো জনসমক্ষে আসছে না উল্লেখ করে রুহিন হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের অর্জিত বাংলাদেশে বৈষম্য দূর হবে—সেই লক্ষ্যে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, হাসান তারিক চৌধুরী, আবিদ হোসেন ও লুনা নূর।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় আছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাবেক ছাত্রদল নেতার নাম
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেম জালিয়াতি করে সঞ্চয়পত্রের ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ বাদী হয়ে গতকাল বুধবার মামলাটি করেন। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন মো. আরিফুর রহমান, মোহাম্মদ মারুফ এলাহী, আল আমিন ও মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁদের মধ্যে আরিফুর রহমানকে আজ সন্ধ্যায় মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলার আসামিদের মধ্যে মোহাম্মদ মারুফ এলাহী এই চক্রের হোতা। তিনি ছাত্রদলের বিগত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তার আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।
মোহাম্মদ মারুফ এলাহীর বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, মারুফ এলাহী আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে তাঁর কোনো পদপদবি নেই।
এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে টাকা তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার মহা হিসাব নিরীক্ষণ কার্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এস এম রেজভীর আয়কর রিটার্ন পূরণ করতে গিয়ে দেখেন তাঁর নামে কেনা ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ১৩ অক্টোবর তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রেভজী সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার কোনো আবেদন করেননি। পরে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন, টাকা লেনদেনের সীমা ২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা করাসহ নানাভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ২৩ অক্টোবর সঞ্চয়পত্রের ওই ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও দুই ব্যক্তির নামে থাকা ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল চক্রটি। কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা।
কীভাবে এই জালিয়াতি
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কেনার সময় যে ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেবেন, সেই হিসাবেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, কোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল নেওয়ার জন্য অবশ্যই সেই অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকের দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) যায়। উপস্থিত গ্রাহক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে তৎক্ষণাৎ সেই ওটিপি দেখানোর পর তা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পরিবর্তন করা হয়। সব ক্ষেত্রে সার্ভারে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা প্রমাণ থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, তাঁদের ওখানে যেসব কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাঁদের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে এই জালিয়াতি করা হয়েছে