সৌদি আরবের খুচরা বাজারে যাচ্ছে বাংলাদেশি পণ্য
Published: 21st, May 2025 GMT
বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে সৌদি আরবের খুচরা বাজারে সরাসরি পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিতে সরবরাহ চ্যানেল চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম শপআপ এ উপলক্ষে অংশীজনদের নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে ‘গেটওয়ে গালফ’ আয়োজন করেছে। এতে নতুন চ্যানেল চালুর এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি শপআপ ও সারি একীভূত হয়ে গঠন করা হয় সিল্ক নামের নতুন কোম্পানি। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সরবরাহ চ্যানেল। সিল্কের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সম্প্রসারণ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে সাহায্য করা। স্থানীয় পণ্য ও সেগুলোর প্রস্তুতকারকদের গালফ, দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের দ্রুত বেড়ে ওঠা বাজারগুলোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যুক্ত করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চায় প্ল্যাটফর্মটি।
নতুন চ্যানেলের যাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিচেল লি, যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান ও ব্যবসায়িক অংশীদারেরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সম্ভাবনাময় পণ্য নিয়ে বাংলাদেশকে নতুন বাজারে প্রবেশের দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে প্ল্যাটফর্মটি। এর ফলে আরও বাংলাদেশি ব্র্যান্ড বিশ্ববাজারে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখার সুযোগ পাবে।
সিল্কের প্রতিষ্ঠাতা ও গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আফিফ জামান বলেন, ঐতিহ্যবাহী শস্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন গৃহস্থালি সামগ্রী পর্যন্ত বাংলাদেশি অনেক পণ্যেরই বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হওয়ার সামর্থ্য রাখে। সঠিক ব্র্যান্ডিং ও প্রবেশাধিকার পেলে বাংলাদেশের অনেক পণ্য বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। আমাদের প্ল্যাটফর্ম সেই সেতুবন্ধনই তৈরি করছে, যার শুরু হচ্ছে গালফ অঞ্চল দিয়ে।
অনুষ্ঠানে নজর কেড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমানের গল্প। যিনি এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সৌদি আরবে মুড়ি রপ্তানি করে সফলতা পেয়েছেন। স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য নতুন বাজারের দ্বার উন্মুক্ত করতে সিল্কের সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে হাফিজুরের গল্প।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’