যশোরের অভয়নগর উপজেলায় কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে (৫০) হত্যার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা হয়নি।

তরিকুল হত্যার জেরে উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলোয় এখনো পুরুষ সদস্যরা ফেরেননি। নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। এরপরও বাড়িগুলোর নারী সদস্যদের আতঙ্ক কাটছে না।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের একটি বাড়িতে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘেরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। তরিকুল ইসলাম উপজেলার ধোপাদী গ্রামের ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। তিনি উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন।

গুলি করে ও কুপিয়ে তরিকুল ইসলামকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের অন্তত ২০টি হিন্দুবাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া উপজেলার সুন্দলী বাজারে দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং চারটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন।

শনিবার সকালে নিহত কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে যান বিএনপির নেতারা। তাঁরা তরিকুল ইসলামের শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এরপর বিএনপির নেতারা ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের যে বাড়িতে তরিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই বাড়িতে যান। পরে নেতারা গ্রামের পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলো ঘুরে দেখেন এবং বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুনঅভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা, প্রতিবাদে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ২২ মে ২০২৫

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের বিল বোকড়ে তরিকুল ইসলামের একটি মাছের ঘের ছিল। ঘেরটির জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। পাশের বিল কাছুরাবাদে অন্য এক ব্যক্তির আরেকটি মাছের ঘের ছিল। বিল কাছুরাবাদের বেশির ভাগ জমি ডহর মশিয়াহাটী গ্রামবাসীর। ঘেরের জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালিক ঘের ছেড়ে দিয়েছেন। এই ঘেরের জমি ইজারা নিয়ে তরিকুল ইসলাম মাছ চাষ করতে চেয়েছিলেন। অন্য আরেক ব্যক্তি ওই ঘেরের জমি ইজারা নিয়ে মাছ করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে তরিকুল ইসলামের বিরোধ হয়। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলামকে ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে প্রথমে কুপিয়ে এবং পরে গুলি করে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুনডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পোড়া বাড়িগুলো প্রায় পুরুষশূন্য, আতঙ্কিত নারীরা২১ ঘণ্টা আগে

নিহত তরিকুলের ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই মাছের ঘেরের ব্যবসা করতেন। তাঁর তিনটি মাছের ঘের আছে। তিনি ডহর মশিয়াহাটী এলাকায় একজন ঘেরমালিকের ছেড়ে দেওয়া ঘের ইজারা নিতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে একজনের জন্য তাঁর দ্বন্দ্ব হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তরিকুল ইসলাম নওয়াপাড়ার বাড়িতে ছিলেন। তখন ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাস তাঁকে ফোন করেন। ঘেরের ডিড (চুক্তি) হবে বলে পিল্টু বিকেলে তরিকুলকে তাঁর বাড়িতে যেতে বলেন। তরিকুল একজনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মোটরসাইকেলে পিল্টুর বাড়িতে যান। সে সময় ছয়জন সন্ত্রাসী পিল্টুর ঘরে তরিকুলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।’

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। ডহর মশিয়াহাটীর গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র হত য র র ইজ র ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ছোটদের সাফেও জয়ের আশা

এই কয়েক দিন আগে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেছিলেন আফঈদা খন্দকার। তাঁর নেতৃত্বে মিয়ানমারে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ নারী দল। প্রথমবার উঠে যায় এএফসি এশিয়ান কাপে; যে আসরটি অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায়। আবারও নেতৃত্বের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। এবার ছোটদের সাফে বাংলাদেশের অধিনায়ক আফঈদা। সিনিয়রদের দলের অধিনায়ক হলেও শুধু বয়সসীমার কারণে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফে অনায়াসে খেলতে পারছেন এ ডিফেন্ডার। 

জাতীয় দলের মতো আগামীকাল বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শুরু হতে যাওয়া ছোটদের সাফেও জয়ের আশা আফঈদার। স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী দল হবে চ্যাম্পিয়ন। ভারত না থাকায় টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট স্বাগতিক বাংলাদেশ। উদ্বোধনী দিনে বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার মেয়েদের বিপক্ষে।

মিয়ানমারে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে খেলা দলের ১১ ফুটবলার বয়সের কারণে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে খেলার সুযোগ পাবেন। তবে কোচ পিটার বাটলার জাতীয় দল থেকে নিয়েছেন আট ফুটবলার– আফঈদা খন্দকার, মোসাম্মৎ সাগরিকা, মুনকি আক্তার, স্বপ্না রানী, স্বর্ণা রানী মণ্ডল, জয়নব বিবি রিতা, মিলি আক্তার ও উমহেলা মারমা। নবিরন খাতুন, সুরমা জান্নাত, কানান রানী বাহাদুর, অয়ন্ত বালা মাহাতো, পূজা দাসের মতো নতুন কিছু প্রতিভাবান আছেন, যারা কিনা নজর কাড়তে পারেন। 

একসঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ খুব একটা না পেলেও এই দল নিয়ে আশাবাদী অধিনায়ক আফঈদা। গতকাল বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে ছিল আত্মবিশ্বাসের সুর, ‘এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাই করার পর আমরা যদিও এই দলের সঙ্গে অনুশীলন করার বেশি সময় পাইনি। যে কদিন অনুশীলন করেছি, কোচ আমাদের যেভাবে বলেছেন, সেভাবে অনুশীলনের চেষ্টা করেছি। ২০২৩ সালে এই টুর্নামেন্টে আমরা চ্যাম্পিয়ন। এখানে ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা কাউকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। ওরাও ভালো খেলে। তবে আমরাও ম্যাচ বাই ম্যাচ জিতে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেতে চাই। যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি আমরা।’

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলে পরিবর্তন এনেছেন কোচ পিটার বাটলার। গত বছর নেপালে সাফ,  মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে গ্রুপ সেরা হওয়ার পর বাটলার আশাবাদী অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে, ‘এই মেয়েরা সবাই দায়িত্ববান। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে দুর্দান্ত খেলেছে। তাদেরই বেশির ভাগ এখানে খেলবে। সাত ফুটবলার এই দলে খেলার যোগ্য। মেয়েরা প্রস্তুত। গত কিছুদিন ওরা দারুণ অনুশীলন করেছেন। আশা করি, এখানে আমরা ভালো কিছুই উপহার দেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ