অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে হত্যার ৪২ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি, গ্রেপ্তার নেই
Published: 24th, May 2025 GMT
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে (৫০) হত্যার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা হয়নি।
তরিকুল হত্যার জেরে উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলোয় এখনো পুরুষ সদস্যরা ফেরেননি। নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। এরপরও বাড়িগুলোর নারী সদস্যদের আতঙ্ক কাটছে না।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের একটি বাড়িতে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘেরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। তরিকুল ইসলাম উপজেলার ধোপাদী গ্রামের ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। তিনি উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন।
গুলি করে ও কুপিয়ে তরিকুল ইসলামকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের অন্তত ২০টি হিন্দুবাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া উপজেলার সুন্দলী বাজারে দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং চারটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন।
শনিবার সকালে নিহত কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে যান বিএনপির নেতারা। তাঁরা তরিকুল ইসলামের শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এরপর বিএনপির নেতারা ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের যে বাড়িতে তরিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই বাড়িতে যান। পরে নেতারা গ্রামের পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলো ঘুরে দেখেন এবং বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুনঅভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা, প্রতিবাদে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ২২ মে ২০২৫স্থানীয় কয়েকজন বলেন, উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের বিল বোকড়ে তরিকুল ইসলামের একটি মাছের ঘের ছিল। ঘেরটির জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। পাশের বিল কাছুরাবাদে অন্য এক ব্যক্তির আরেকটি মাছের ঘের ছিল। বিল কাছুরাবাদের বেশির ভাগ জমি ডহর মশিয়াহাটী গ্রামবাসীর। ঘেরের জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালিক ঘের ছেড়ে দিয়েছেন। এই ঘেরের জমি ইজারা নিয়ে তরিকুল ইসলাম মাছ চাষ করতে চেয়েছিলেন। অন্য আরেক ব্যক্তি ওই ঘেরের জমি ইজারা নিয়ে মাছ করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে তরিকুল ইসলামের বিরোধ হয়। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলামকে ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে প্রথমে কুপিয়ে এবং পরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুনডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পোড়া বাড়িগুলো প্রায় পুরুষশূন্য, আতঙ্কিত নারীরা২১ ঘণ্টা আগেনিহত তরিকুলের ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই মাছের ঘেরের ব্যবসা করতেন। তাঁর তিনটি মাছের ঘের আছে। তিনি ডহর মশিয়াহাটী এলাকায় একজন ঘেরমালিকের ছেড়ে দেওয়া ঘের ইজারা নিতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে একজনের জন্য তাঁর দ্বন্দ্ব হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তরিকুল ইসলাম নওয়াপাড়ার বাড়িতে ছিলেন। তখন ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাস তাঁকে ফোন করেন। ঘেরের ডিড (চুক্তি) হবে বলে পিল্টু বিকেলে তরিকুলকে তাঁর বাড়িতে যেতে বলেন। তরিকুল একজনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মোটরসাইকেলে পিল্টুর বাড়িতে যান। সে সময় ছয়জন সন্ত্রাসী পিল্টুর ঘরে তরিকুলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।’
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। ডহর মশিয়াহাটীর গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র হত য র র ইজ র ঘটন য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে হত্যার ঘটনায় ২০ বাড়িতে আগুন
যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলাম (৪৮) সরদারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০টি বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন একদল লোক।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত তরিকুল ইসলাম পৌর কৃষক দলের সভাপতি ও পৌরসভার ধোপাদি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে তাকে হত্যা করা হয়।
আরো পড়ুন:
দৌলতপুরে পরীক্ষা দিতে এসে হামলার শিকার ২ শিক্ষার্থী
ডিআরইউয়ে সন্ত্রাসী জাকির গংয়ের হামলার শিকার সভাপতিসহ অনেক সাংবাদিক
শুক্রবার (২৩ মে) ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে গেলে দেখা যায়, বাড়িগুলো আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। কয়েকটি বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, আগুনে ঘরের আসবাবপত্র, জামা-কাপড় ও লেপ-তোশক-বিছানা কয়লা হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর একদল লোক ডহর মশিয়াহাটীতে এসে ঘরে থাকা টাকা, স্বর্ণ লুট করার পর একের পর এক বাড়িতে আগুন দেয়। অনেককে মারধর করা হয়। আগুনে ধানের গোলা, বসত ঘর ও গোয়ল ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর রাত ৯টার দিকে সুন্দলী ইউনিয়নের সুন্দলী বাজারে চারটি দোকান লুট করা হয় ও পাঁচটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। বাজার থেকে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সুব্রত মন্ডলের মোটরসাইকেল নিয়ে গেছেন নাম না জানা লোকজন।
ভুক্তভোগী এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, বাড়ির কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব আগুনে পুড়ে গেছে। পাসপোর্ট ও ওষুধ ছিল, তার সব পুড়ে গেছে।
কী কী হারিয়েছেন এর তালিকা করতে বললে তিনি জানান, তালিকা করে কোনো লাভ নেই। কোনো কিছুই আর ফিরে পাব না। বাড়ির ছয়টি মানুষ বেঁচে আছি এটাই অনেক।
এদিকে, ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে হামলার শিকার বাড়িগুলো পরদর্শন করেছেন বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।
অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলীম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘ঘের নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এর প্রতিবাদে কয়েকজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”
ঢাকা/রিটন/মাসুদ